নাফনদী-বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মিয়ানমারের অস্ত্রধারি :
আবারও সেন্টামার্টিনগামি বোটে গুলি বর্ষণ
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২:৩৫ অপরাহ্ন, ১১ই জুন ২০২৪
কক্সবাজারের টেকনাফের নাফনদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনাটি নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্ট নামে পরিচিত। আর সেই নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে মিয়ানমারের অজ্ঞাত একটি অস্ত্রধারি গোষ্ঠি।
যে গোষ্ঠিটি কোনভাবেই টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে ট্রলার বা স্পীড বোট চলাচল করতে দিচ্ছে না। ওই রুটে ট্রলার বা বোট দেখার সাথে সাথেই গুলি বর্ষণ করছে।
টানা ৬ দিন বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনগামি ৫ জন যাত্রী নিয়ে যাওয়া একটি স্পীড বোটকে লক্ষ করে আরও গুলি বর্ষণ করেছে গোষ্ঠিটি। এতে হতাহত না হলে দ্বীপ জুড়ে এখন চরম আতংক তৈরি হয়েছে। দ্বীপবাসির খাদ্য সংকট তৈরি হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১১ জুন) গুলিবর্ষণ করা স্পীড বোটটির মালিক সেন্টমার্টিন স্পীড বোট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি ও দ্বীপ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম।
তিনি জানিয়েছেন, চিকিৎসার জন্য জরুরি টেকনাফে আসা ৫ জন যাত্রীর সেন্টমার্টিন যাওয়ার প্রয়োজন হলে চালক মোহাম্মদ বেলাল সকাল সাড়ে ১০ টায় টেকনাফের কায়ুকখালী ঘাট থেকে যাত্রা দেয়।
বোটটি শাহপরীরদ্বীপ অতিক্রম করে নাফদীর বদরমোকামের গোলগরা পয়েন্টে পৌঁছে। এটি নাইক্ষ্যংদিয়ার বিপরীতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের অংশ এলাকাটি। কিন্তু এরপরও মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে ট্রলারে অবস্থানরত অস্ত্রধারীরা বাংলাদেশের জলসীমায় এগিয়ে এসে গুলি বর্ষণ করে। টানা ১০-১২ রাউন্ডগুলি বর্ষণ করা হয়।
চালক বেলাল অবস্থা বুঝে স্পীড দ্রুত চালিয়ে পশ্চিমের বঙ্গোপসাগরের দিকে চলে যায়। এতে কেউ হতাহত হয়নি। বোটটি দুপুর ১২ টার দিকে দ্বীপে গিয়ে পৌঁছে।
দ্বীপের এই জনপ্রতিনিধি জানান, কাঠের ট্রলার বা সার্ভিস বোটে যাত্রী বা পণ্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে একটি জটিলতা রয়েছে। ট্রলার গুলিকে নাফনদী এবং বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে এসে মিয়ানমারের কাছা-কাছি এলাকা অতিক্রম করতে হয়।
এটা করতে গিয়ে ৫ জুন সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার সময় নির্বাচনী সরঞ্জাম ও কর্মকর্তাদের বহনকারী নৌযানে গুলিবর্ষণ করে মিয়ানমার থেকে।
এতে ট্রলারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ হতাহত হননি। এরপর ৮ জুন শনিবারও পণ্যবাহী ট্রলারে আবারও গুলি করে। এতে কেউ হতাহত না হলেও ট্রলারটিতে গুলি লাগে সাতটি। কিন্তু স্পীড বোট অনেক দূর থেকে চলাচল করলেও কেন বাংলাদেশের জলসীমায় এসে গুলি করছেন বুঝা যাচ্ছে না।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ইউএনও মো. আদনান চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি সকল পর্যায়ের উধ্বর্তন মহলকে অবহিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি খুবিই খারাপ। এর প্রেক্ষিতে দ্বীপে অবস্থানরত মানুষ খাদ্য সংকটে পড়বে। ওই এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী নাকি বিদ্রোহীরা গুলি চালাচ্ছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, টেকনাফের নাফনদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনাটি নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে মিয়ানমারে অবস্থানরত অস্ত্রধারিরা কারা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তারা ট্রলারে অস্ত্র হাতে নাফনদীতে টহল দিচ্ছে।
আর কোনভাবেই সেন্টমার্টিনগামি ট্রলার বা স্পীড বোট দেখলেই গুলি করতে। মঙ্গলবারের ঘটনার পর দ্বীপ জুড়ে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। সেন্টমাটিন-টেকনাফ যাত্রী ও পণ্যবাহী সব নৌ-যান চলাচল বন্ধ।
যার কারণে দৈনন্দিনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সংকট হতে শুরু করেছে। সমাধান না হলে দ্বীপবাসীর অবস্থা খুব সংকটাপন্ন হবে। এ ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে নৌবাহিনী বা কোস্টগার্ডের জাহাজ যোগে খাদ্যপণ্য নেয়ার দাবি জানান তিনি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে ট্রলার ও স্পীড বোটকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছে। তাই ওই নৌরুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে জরুরি ভিত্তিতে শাহপরীর দ্বীপ অংশ থেকে বিকল্প পদ্ধতিতে বঙ্গোপসাগর হয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়া বিষয় চিন্তা করা হয়েছিল। এব্যাপারে গত রবিবার আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে।
বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ মহলকে অবিহিত করা হয়েছে। এখন সেন্টমার্টিনে পন্য পাঠানোর জন্য বঙ্গোপসাগরই ভরসা কি না তাই দেখা হচ্ছে।
এসডি/