হত্যা কার্যক্রম টের পেয়ে চলে যেতে চান আনার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৫ অপরাহ্ন, ২৭শে জুন ২০২৪
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘাতক দলের প্রধান শিমুল ভূঁইয়ার নির্দেশে অন্য সদস্যরা ফয়সাল, মোস্তাফিজ, জিহাদ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার কার্যক্রম শুরু করে। বিষয়টি ভিকটিম বুঝতে পেরে চলে যেতে চান। তবে ফয়সাল আলী সাহাজী ভিকটিমকে পেছন থেকে গলায় ধরে মুখে চেতনানাশক ক্লোরোফর্ম মিশ্রিত রুমাল দিয়ে চেপে ধরে। মোস্তাফিজ, শিমুল ভূইয়াদের সহযোগীতায় অজ্ঞান করে ভিকটিমকে হত্যা করে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান আসামি ফয়সাল আলী সাহাজী ও মোস্তাফিজুর রহমান ফকিরকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের চেয়ে আবেদন করেন। রিমান্ড আবেদনে এতথ্য জানান তদন্ত কর্মকর্তা।
আবেদনে বলা হয় মামলার তদন্তেপ্রাপ্ত তথ্যের সাথে সরাসরি জড়িত শিমুল ভুইয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। জবানবন্দি পর্যালোচনা ও তদন্তকালে জানা যায়, ভিকটিম সাংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে অপহরণ পূর্বক হত্যায় ঘাতক দলের প্রধান ভাড়াটে খুনি শিমুল ভূইয়ার কিলিং মিশনের সহযোগী হিসেবে ফয়সাল ও মোস্তাফিজুর রহমানের (ভাড়াটে খুনি) সংশ্লিষ্টতার প্রসঙ্গ উঠে আসে। ফয়সাল, মোস্তাফিজ ও জিহাদকে নিয়েই শিমুল ভূইয়া কিলিং মিশন বাস্তবায়ন করে।
আরও পড়ুন: মোস্তাফিজ-ফয়সাল ৬ দিনের রিমান্ডে
তদন্তকালে আরো জানা যায় যে, ঘাতক দলের প্রধান ভাড়াটে খুনি শিমুল ভূইয়া ও আক্তারুজ্জামান শাহীন পরিকল্পনা মোতাবেক ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে বড় অংকের অর্থ দিবে বলে গত ২ মে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় নিয়ে হোটেলে রাখে। তারপর হোটেল থেকে মোস্তাফিজ ১০ জুন এবং ফয়সাল ১২ জুন কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিবা গার্ডেনের বাসায় ওঠে। এদিকে ভিকটিম এমপি আনার ১২ মে কলকাতায় যায় এবং ১৩ মে আসামিদের প্রলোভনে ফয়সাল ও শিমুল ভূইয়ার সাথে সঞ্জিবা গার্ডেনের বাসায় যান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শিমুল ভূইয়ার নির্দেশে অন্য সদস্যরা ফয়সাল, মোস্তাফিজ, জিহাদ, এমপি আনারকে হত্যার কার্যক্রম শুরু করে। বিষয়টি ভিকটিম বুঝতে পেরে চলে যেতে চাইলে ফয়সাল ভিকটিমকে পেছন থেকে গলায় ধরে মুখে চেতনানাশক ক্লোরোফর্ম মিশ্রিত রুমাল দিয়ে চেপে ধরে এবং মোস্তাফিজ, শিমুল ভূইয়াদের সহযোগিতায় অজ্ঞান করে ভিকটিমকে হত্যা করে। হত্যা করার পর ভিকটিমের লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ঘাতক শিমুল ভূইয়ার নেতৃত্বে ও নির্দেশে ভিকটিমের মৃত দেহকে কেটে হাড় থেকে মাংস আলাদা করে। ভিকটিমের লাশ নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়। ভিকটিমকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে প্রলুব্ধ করে বাংলাদেশ থেকে কলকাতার নিউটাউনের বাসায় নেওয়া ও হত্যা করে লাশ গুম করা পর্যন্ত ঘাতক ভাড়াটে খুনি শিমুল ভূইয়া, ফয়সাল, মোস্তাফিজ, সিয়াম ও জিহাদ সকলে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে।
আরও পড়ুন: আনার হত্যা মামলা নিয়ে রাজনৈতিক চাপ নেই: ডিবি প্রধান
ভিকটিম এমপি আনারকে অপহরণ ও হত্যা কান্ডের ঘটনা প্রকাশিত হলে ফয়সাল ও মোস্তাফিজ নিজেদের নাম পরিচয় ও চেহারার আকৃতি পরিবর্তন করে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। তদন্তকালে ঘটনার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় ফয়সালও মোস্তাফিজকে খুজে বের করা ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়া হয়। ডিবি ওয়ারী বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম সোর্স ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় জানতে পারে, ফয়সাল এবং মোস্তাফিজ চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন পাহাড়ে অবস্থান করছে। ওই সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা বিভাগ ২৪ জুন দুর্গম পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে ২৬ জুন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে চট্টগ্রাম জেলাস্থ ভোজপুর থানাধীন শ্রী শ্রী মা পাতাল কালী মন্দির থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহর আদালত শুনানি শেষে তাদের ৬ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে তাপস কুমার পাল রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তবে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
জেবি/এসবি