ভিন্ন নামে ‘আনসার আল ইসলাম’র তৎপরতা, আটক ৩
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩:৪৬ অপরাহ্ন, ২৮শে জুন ২০২৪
নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ ভিন্ন নামে সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছে। ‘আস-শাহাদাত’ গ্রুপের নামে সংগঠনের সদস্য সংগ্রহ নানা তৎপরতার জড়িত ৩ সদস্যকে কক্সবাজারের চৌফলদন্ডী এলাকা থেকে আটকের পর র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে উগ্রবাদী পুস্তিকা, লিফলেট ও বিস্ফোরক তৈরীর ম্যানুয়াল।
শুক্রবার (২৮ জুন) দুপুরে কক্সবাজার র্যাব ১৫ এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং'র পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।
আটকরা হলেন, জামালপুর জেলার ইসলামপুর এলাকার আবদুল ওহাবের ছেলে মো. জাকারিয়া মন্ডল (১৯), ভোলা জেলার বোরহান উদ্দিন উপজেলার নুরুল আমিনের ছেলে মো. নিয়ামত উল্লাহ (২১) ও ফেনী জেলার সোনাগাজির ইদ্রিস আলীর ছেলে মো. ওজায়ের (১৯)।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার আরাফাত ইসলাম জানান, র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১৫ এবং র্যাব-৭ এর যৌথভাবে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) মধ্যরাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত চৌফলদন্ডী এলাকা এ অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে ৩ জনকে আটক করা হয়। এই ৩ জনই ‘আনসার আল ইসলাম’ এর সক্রিয় সদস্য। তারা আফগানিস্থানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ যোগদান করে। র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত অভিযানের ফলে আনসার আল ইসলাম এর কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়ে। আনসার আল ইসলামের নামে নতুন সদস্য সংগ্রহসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যহত হচ্ছে বিধায় তাদের কার্যক্রমকে চলমান রাখতে আনসার আল ইসলাম মতাদর্শী ‘আস-শাহাদাত’ নামে নতুন একটি জঙ্গি গ্রুপ তৈরি করে নতুন সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। এই গ্রুপটি পার্শ্ববর্তী একটি দেশ হতে পরিচালিত হচ্ছে এবং এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ৮৫-১০০ জন।
এই গ্রুপটির উদ্ভাবক হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশের নাগরিক হাবিবুল্লাহ এবং কথিত আমির সালাহউদ্দিন। এছাড়াও তারা বাংলাদেশকে এই সংগঠনের একটি শাখা বলে দাবী করে। এই গ্রুপটির বাংলাদেশের আঞ্চলিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত আমির ছিলেন র্যাব কর্তৃক পূর্বে গ্রেফতার ইসমাইল হোসেন। এই গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে বিভিন্ন উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্য দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে উক্ত সংগঠনে যোগদান করে। পরবর্তীতে তারা আনসার আল ইসলামের নাম ব্যবহার না করে ‘আস-শাহাদাত’ গ্রুপের নামে সদস্য সংগ্রহ ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের উপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ভুল বুঝিয়ে সংগঠনের সদস্যদের ও নতুন সদস্য সংগ্রহ করে তাদেরকে বিভিন্ন অপব্যাখা ও মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে দেশের বিচার ও শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিতৃষ্ণা তৈরি করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য সদস্যদেরকে উগ্রবাদী করে তুলতো। এ উদ্দেশ্যে সংগঠনের সদস্যদেরকে তারা বিভিন্ন উগ্রবাদি পুস্তিকা, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, টেলিগ্রাম ও বিপ গ্রুপের মাধ্যমে সরবরাহ করতো। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তারা ধর্মীয় স্থাপনা, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতো।
আরও পড়ুন: রিয়াজউদ্দিন বাজারে অগ্নিকাণ্ডে ৩ জনের মৃত্যু
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আটক ৩ জন জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ও নেতৃস্থানীয় অনেক সদস্য গ্রেফতার হয়। যেহেতু কিছু সংখ্যক সদস্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছে, তাই এই সংগঠনটিকে তারা পুনরুজ্জীবিত করতে নতুন রিক্রুটিং করছে। উঠতি বয়সী কিশোরদের অপব্যাখা দিয়ে সহজে ব্রেন ওয়াশের মাধ্যমে ভূলপথে নেয়া যায় বিধায় কোমলমতি কিশোরদের তারা প্রথমে টার্গেট করতো। তাই এই সংগঠনের বেশিরভাগ সদস্যই ১৯-২০ বছর বয়সী তরুণ এবং মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষক। সাধারণ লেখাপড়ায় শিক্ষিত উগ্র মনোভাবাপন্ন লোকজনকে আকৃষ্ট করার জন্য দেশ বিরোধিতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো। এ সংগঠনে মাদ্রাসা শিক্ষক সদস্যগণ অত্যন্ত সু-কৌশলে মাদ্রাসা পড়ুয়া কোমলমতি ছাত্রদের এ বিষয়ে অনুপ্রাণিত করতো। এ জন্য তারা সংগঠনের সদস্যদের গোপনে শারীরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করতো বলে জানা যায়। জঙ্গি সংগঠনটির বাংলাদেশের পরবর্তী সম্ভাব্য আমিরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এরা কক্সবাজারে একত্রিত হয়েছিল।
তিনি জানান, আটক জাকারিয়া ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়াস্থ একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত। সে গত ১ বছর পূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংগঠনের আমির সালাহউদ্দিন ও ইসমাঈল এর সাথে তার পরিচয় হয়। পরবর্তীতে পরিচয় সূত্রে আমির সালাউদ্দিন ও বাংলাদেশের আমির ইসমাইল এর মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে এই সংগঠনের যোগদান করে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। পরবর্তীতে সে আনসার আল ইসলাম মতাদর্শী ‘আস-শাহাদাত’ গ্রুপের ময়মনসিংহ ও জামালপুর অঞ্চলের দাওয়াতি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। নিয়ামত এবং ওজায়ের চট্টগ্রামের পটিয়ার একটি মাদ্রাসার কিতাব শাখায় অধ্যয়নরত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি গ্রুপে একজন জঙ্গি নেতার সাথে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তারা উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগদান করে এবং তারা মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন এলাকায় দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে।
এব্যাপারে মামলা করে আটকদের কক্সবাজার সদর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এমএল/