শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে জাবি শিক্ষার্থীদের সেশনজটের আশঙ্কা


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:১৮ অপরাহ্ন, ৪ঠা জুলাই ২০২৪


শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে জাবি শিক্ষার্থীদের সেশনজটের আশঙ্কা
ছবি: ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহারের দাবিতে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষকরা। তবে শিক্ষকদের টানা কর্মবিরতিতে দীর্ঘ সেশনজটের আশঙ্কা করেছে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতিতে থাকায় দাফতরিক কর্মকাণ্ডে এক প্রকার অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।


বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের সব ক্লাস বন্ধ রয়েছে, অনলাইন-সন্ধ্যাকালীন ক্লাস ও শুক্র-শনিবারের প্রফেশনাল কোর্সের ক্লাসও বন্ধ, সব ধরনের পরীক্ষা বর্জন করা হয়েছে, বিভাগীয় চেয়ারম্যান বিভাগীয় অফিস-সেমিনার-কম্পিউটার ল্যাব ও গবেষণাগার বন্ধ রাখা বেশ কিছু দিন ধরেই, একাডেমিক কমিটি-সমন্বয় ও উন্নয়ন কমিটি ও প্রশ্নপত্র সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না, অনুষদের ডিনরা তাদের সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন, বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালকেরা ইনস্টিটিউটের কার্যালয়, ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রেখেছেন, বিভিন্ন গবেষণাকেন্দ্রের পরিচালকেরা সব ধরনের সেমিনার, কনফারেন্স ও ওয়ার্কশপের কর্মসূচি গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছেন, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষরা হল অফিস বন্ধ রাখবেন বলেও জানা গেছে এবং জাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার গত ১লা জুলাই বন্ধ রাখা হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চাপে খুলে দিতে বাধ্য হয়।


আরও পড়ুন: প্রায় তিন ঘন্টা পর মহাসড়ক ছাড়লো কুবি শিক্ষার্থীরা


পেনশন স্কিম-সংক্রান্ত দাবি আদায়ে গত ২৪ জুন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ঘোষণার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে জাবি শিক্ষকরাও সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছে। গত ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস এবং ৩০ জুন পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করেন জাবি শিক্ষকরা। এ সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হওয়ায় (১ জুলাই) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যায় তারা। ৩০ জুন পর্যন্ত প্রথম দফার আন্দোলনে পরীক্ষা আওতামুক্ত রাখা হয়েছিলো। ১ জুলাই থেকে সব ধরনের পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কার্যক্রমও বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে আবারও ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাজীবন। 


বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, করোনায় সৃষ্ট সেশনজট কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও শুরু হলো শিক্ষকদের আন্দোলন। আমাদের একাডেমিক বছর এখনো দুই বছরের সেশন জটে  পিছিয়ে আছে। চার বছরে কোর্স আমাদের ৭ বছর শেষ করতে হচ্ছে। কিন্তু ১ জুলাই থেকে সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণায় আমরা শিক্ষার্থীরা পুনরায় সেশনজটের আশঙ্কা করছি। এতে শুধু একাডেমিকভাবে পিছিয়ে পড়ব না, মানসিকভাবেও ভেঙে পড়ব। বর্তমানে এভাবে বারবার ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের হতাশায় দিন কাটাচ্ছি।


বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষক রাজনীতির কারণে শিক্ষাব্যবস্থা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। নতুন করে যোগ হয়েছে শিক্ষক ফেডারেশনের আন্দোলন। পরিবারের স্বপ্ন পূরণের আশায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে শিক্ষাজীবন শেষ করতেই সাত থেকে আট বছর সময় লেগে যাচ্ছে। সবাই নিজেদের স্বার্থ আদায়ে আন্দোলন করলেও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ দেখার কেউ নেই। 


এ বিষয়ে জাবি শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে বিতর্কিত ও জনপ্রিয় করবার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। তারা সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের সাথে সরকারের দূরত্ব তৈরি করতে চায়। প্রজ্ঞাপন ঘোষিত হবার পরপরই আমরা শিক্ষকরা তথাকথিত ঐ সর্বজনীন প্রত্যয় স্কিমকে প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা তিন মাস সময় দিয়েছি, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে। 


আরও পড়ুন: কোটা সংস্কারের দাবিতে ইবি শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ


অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, গত তিন মাসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনভাবেই শিক্ষকগণের নির্বাচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করবার কোন প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করেন নাই, যা আমাদেরকে গভীরভাবে আহত করেছে। প্রথমত, এই স্কিম প্রণয়নের পূর্বে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের সাথে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা করা হয়নি। দ্বিতীয়ত, স্কিমের নাম সর্বজনীন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণকে আর্থসামাজিকভাবে সবচেয়ে বেশি হেয় করা হয়েছে। 


এই স্কিমের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুৎসাহিত করা হয়েছে। আমাদের খুব বেশি দূরে যাবার দরকার নেই। সার্কভুক্ত প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকে তাকালেই আমরা দেখতে পাই, ভারত, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকগণকে আর্থ-সামাজিকভাবে কতখানি সম্মানিত করা হয়েছে, আর সেখানে আমাদেরকে দিন দিন নিচেই নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে।  


প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আমরা ক্লাস, পরীক্ষা, ও গবেষণায় ফিরে যেতে চাই। আপনি অনতিবিলম্বে এর একটি সুষ্ঠু সমাধান করে দিন, নইলে ভবিষ্যতে মেধাবি শিক্ষার্থীরা এই পেশায় আর আসবেনা, সর্বোচ্চ পর্যায়ে দেশের শিক্ষা ও গবেষণা ব্যাহত হবে, নিম্নগামী হবে, যা সামগ্রিকভাবে দেশ ও জাতির জন্য বিপর্যয় নিয়ে আসবে।


এমএল/