সরিষাবাড়ী হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট, রোগীদের দুর্ভোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:২৮ অপরাহ্ন, ৭ই জুলাই ২০২৪
রিষাবাড়ী হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট, রোগীদের দুর্ভোগ
জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকসহ জনবল সংকটে থাকায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। চিকিৎসক সংকট, কর্মচারী সংকটে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সরিষাবাড়ী উপজেলা ও পার্শবর্তী বিভিন্ন উপজেলাসহ শহরের আশপাশের অনেক রোগীরা। রোগীর বাড়তি চাপ নিয়েই নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ৪ জন্য চিকিৎসক।
জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠা হয় ৩১ শয্যা বিশিষ্ট সরিষাবাড়ী হাসপাতাল। ২০০৮ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। ফলে ৩১ শয্যার ভিতরেই ৫০ শয্যা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মাঝে মধ্যে শয্যা সংকট থাকায় রোগীদের জায়গা হয় মেঝে ও হাসপাতালের বারান্দায়।
সরিষাবাড়ী উপজেলা ও পার্শবর্তী বিভিন্ন উপজেলাসহ শহরের আশপাশের অনেক রোগীই চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। জরুরি ও বহির্বিভাগ মিলিয়ে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসছেন বহি.বিভাগে দৈনিক ৮০০ থেকে ১০০০ জন, জরুরী বিভাগে ১০০ হতে ১৫০ জন, ভর্তি থাকে ৫০ হতে ৬০ জন । আবার হাসপাতালটিতে রয়েছে জনবল সংকটও।
আরও পড়ুন: সরিষাবাড়ীতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণ
সরিষাবাড়ী হাসপাতাল সূত্রে জানা যায় , সরিষাবাড়ী হাসপাতালে বর্তমানে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম, এমও ডা.মেহেদী হাসান, জুনি.কনসালটেন্ট (শিশু) ডা. রোকেয়া বেগম, মেডিকেল অফিসার ডা.সালেহা খানম চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।
এদের মধ্যে ১ জন রাতে, ১ জন দিনে জরুরী বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে, বাকী ২ জন বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন । প্রতিদিন জরুরী বিভাগের বিপুল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে হতদরিদ্র, বিত্তহীন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের সাধারণরোগী আর্থিক সংকটসহ সরকারি চিকিৎসা সেবা থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে।
এদিকে সরিষাবাড়ী হাসপাতালে বদলী হলেও ডা. আদর্শ রহমান জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে, ডা. মাজরিহা নাঈম মিশি ঢাকা কোভিড হাসপাতালে প্রেশনে কর্মরত রয়েছে । আবার দীর্ঘ ৭/৮ মাস যাবৎ সহকারী সার্জন ডা.ফাহমিদা জামান তিথি অনুপস্থিত রয়েছে ।
একাধিকবার সরিষাবাড়ী হাসপাতাল থেকেও শোকজ, চিঠি দেওয়া হলেও তাকে কোথাও পাওয়া যায়নি। তবে সরিষাবাড়ী হাসপাতালে ২৯ জন চিকিৎসক এর পদ থাকলেও টিএসও সহ ৫ জন ব্যাক্তি এখানে কর্মরত রয়েছে । প্রায় ২৪ টি পদ এই হাসপাতালে শুন্য রয়েছে ।
অন্য হাসপাতাল থেকে জুনি.কনসালটেন্ট(এ্যানেসথেসিয়া) ডা. মো. শাহরিয়ার ইসলাম সোম ও মঙ্গলবার , জুনি. কনসালটেন্ট(অবস ও গাইনী) ডা. রাশেদা পারভীন সোম ও মঙ্গলবার চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। তবে সরিষাবাড়ী হাসপাতালে জুনি.কনসালটেন্ট(অবস ও গাইনী) পদটি শুন্য হওয়ায় গত ৯ মার্চ স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রিন্সিপাল আব্দুর রশিদের সুপারিশ নিয়ে ডা. রাশেদা পারভীন সরিষাবাড়ী উপজেলায় পদায়নের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বরাবর লিখিত আবেদন করেন ।
আরও পড়ুন: সরিষাবাড়ীতে গভীর রাতে কবরের ওপর দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন
রবিবার (৭ জুলাই) হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা মাসুদ, রুমান, হাসনা,সামিরা বলেন, হাসপাতালে প্রথমে এসে টিকিট কাটতে হয়। টিকিট কাটতে হলে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাইনে দাঁড়াতে হয়। এরপর চিকিৎসকের কক্ষের সামনে অপেক্ষায় থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘন্টা। অন্য চিকিৎসকের কাছে রেফার্ড করলে সেখানেও গিয়ে লাইন ধরে অপেক্ষায় থাকতে হয়।
আবার রোগ নির্ণয়ে টেষ্ট করাতে হলে সেখানেও টাকা জমা দেয়ার লাইনে থাকতে হয় কয়েক ঘণ্টা। টেস্ট স্যাম্পলও দিতে হয় দীর্ঘ সময় লাইনে অপেক্ষায় থেকে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেকেই জানায়, উপজেলার ৩ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হলেও জনবলসহ অন্য সুযোগ- সুবিধা বৃদ্ধি না করায় অন্তহীন সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
এদিকে সিজার করতে আসা কল্পনা আক্তার জানান , আমি হাসপাতালে সিজার করতে এসেছি । কিন্তু এখানে গাইনী ডাক্তার আজ না থাকায় আমাকে জামালপুর রেফার্ড করা হয়েছে । শুনেছি জুনি. কনসালটেন্ট(অবস ও গাইনী) ডা. রাশেদা পারভীন ম্যাডাম সোম ও মঙ্গলবার এসে হাসপাতাল থেকে বিনামুল্যে সিজার করে দেয় । তিনি আজ হাসপাতালে থাকলে আমাদের কষ্ট করে জামালপুর যাওয়া লাগত না।
কথা হলে সরিষাবাড়ী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, ডাক্তার সংকট তাই রোগীদেরও কষ্ট এবং আমাদেরও কষ্ট । শুনেছি জুনি.কনসালটেন্ট(অবস ও গাইনী) ডা. রাশেদা পারভীন পদায়নের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন। এখানে তিনি পদায়ন হলে হাসপাতালে সিজারের পাশাপাশি বহি.বিভাগে চিকিৎসা দিলে সবারই কষ্ট কম হতো।
সরিষাবাড়ী হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শফিকুল ইসলাম জানান, সিভিল সার্জন স্যারকে অবগত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সরিষাবাড়ীতে ৩৮ দিনেও গ্রেফতার হয়নি ধর্ষণ চেষ্টা মামলার আসামি
তবে কথা হলে জামালপুর সিভিল সার্জন ডা. ফজলুল হক জানান, ৪২ বিসিএসের ডাক্তার ২ বছর হয়ে যাওয়াতে এরা বিভিন্ন কোর্সে চলে যাওয়ায় ডাক্তার সংকট দেখা দিয়েছে। জামালপুরের মধ্যে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংকট বেশি দেখা দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করতেছি এবং সরিষাবাড়ী এমপি মহোদয় নিজেও চেষ্টা করতেছেন সমাধানের ব্যাপারে।
ডজি অফিস ও মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে অবগত।
আর রাশেদা পারভীন মাদারগন্জে কর্মরত আছে, তবে সুযোগ হলে তাকে সরিষাবাড়ীতে একবারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। আমরা আবাতত ২ দিন করে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। তবে এ সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে বলে ডিজি অফিস আমাদের জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য প্রিন্সিপাল আবদূর রশিদ জানান, আমি সংসদ অধিবেশনে বক্তব্যে হাসপাতালে ডাক্তার সংকট নিয়ে বলেছি। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যা সমাধান হবে। যোগাযোগ চলছে।
কথা হলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসডি/