যে গ্রামে পুরুষ নিষিদ্ধ, তবুও অন্তঃসত্ত্বা হন নারীরা


Janobani

জনবাণী ডেস্ক

প্রকাশ: ১২:৩৫ অপরাহ্ন, ৮ই জুলাই ২০২৪


যে গ্রামে পুরুষ নিষিদ্ধ, তবুও অন্তঃসত্ত্বা হন নারীরা
ফাইল ছবি

প্রকৃতির নিয়ম মেনে নারী-পুরুষ একসঙ্গে বসবাস করেন। তবে এর উল্টোচিত্র দেখা গেছে অদ্ভুত এক গ্রামে। যেখানে শুধু নারীদের বসবাস। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রথা ভেঙে এ গ্রাম স্থাপন করেছে নারীশক্তির অনন্য দৃষ্টান্ত। যেখানে ঠাঁই মিলেছে হাজারও নির্যাতিতার। শোষণের নির্মম ইতিহাসকে পেছনে ফেলে, তারা তৈরি করেছে নিজস্ব পরিচয়। 


এক-দুই নয়, গুনে গুনে ত্রিশটি বছর! হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন! এতগুলো বছর ধরেই কোনো প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের মুখ দেখেনি এই গ্রামের নরীরা। এ গ্রামে কোনো পুরুষের প্রবেশ করার অধিকার পর্যন্ত নেই। গ্রামজুড়ে থাকেন কেবল নারীরা। অথচ সেই গ্রামের নারীরা স্বেচ্ছায় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। কি ভাবছেন? পুরুষের সংস্পর্শ ছাড়া আন্তঃসত্ত্বা হয় কীভাবে? না অলৌকিক কিছু নয়, প্রকৃতির নিয়মেই গর্ভধারণ করেন এই গ্রামের নারীরা।


আরও পড়ুন: বিবাহবিচ্ছেদের শহরে যে জুটির ৫০ বছর পার


আধুনিক বিজ্ঞান যদিও সিঙ্গেল মাদার কিংবা সিঙ্গেল ফাদার হওয়ার পথ খুলে দিয়েছে, কিন্তু পৃথিবীর প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে সেই প্রযুক্তি এখনও পৌঁছায়নি। প্রাকৃতিকভাবেই সন্তানের জন্ম হয় সেখানে। এ গ্রামটিও তেমনই এক প্রত্যন্ত গ্রাম। গ্রামটির ভৌগোলিক অবস্থান দক্ষিণ আফ্রিকায়। যার অনেকখানি অঞ্চল জুড়ে এখনও বসবাস করেন আধুনিকতার ছোঁয়া না পাওয়া বিভিন্ন উপজাতির মানুষেরা। তার ওপর কোনো শহরের কাছাকাছি এলাকায় নয়, এ গ্রামটি গড়ে উঠেছে ঘন জঙ্গলের মধ্যে। এমন এক দুর্গম এলাকায় কেবল নারীদের গ্রাম গড়ে ওঠার কারণ কী? আর কেনই বা সেখানে পুরুষের প্রবেশ নিষেধ?


আসলে এমন নিষেধের পেছনে রয়েছে এক কুৎসিত ইতিহাস। কালো মানুষের দেশ আফ্রিকা বারবার শ্বেতাঙ্গ, সভ্য মানুষদের নির্মম অত্যাচারের শিকার হয়েছে। যার সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত দাসপ্রথা। এ গ্রামটিও প্রকৃতপক্ষে তেমনই এক অত্যাচারের ফসল। 


১৯৯০ সালে গ্রামটি গড়ে তোলেন ১৫ জন নারী। ব্রিটিশ সেনাদের হাতে ধর্ষিতা, নির্যাতিত হয়েছেন বলে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন এ ১৫ নারী। তীব্র ঘৃণায় কোনো পুরুষের সঙ্গেই আর থাকতে চাননি তারা। সেই কারণেই তারা এই গ্রাম গড়ে তোলেন এবং সেখানে পুরুষদের প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দেন। এ গ্রামে নির্যাতিত নারীদের আশ্রয় দিতেও শুরু করেন তারা। বর্তমানে প্রায় আড়াইশ’ নারী রয়েছেন উমোজা নামের ওই গ্রামে।


শুরুতে নারীদের আধিপত্য মানতে পারছিল না পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। কয়েক দফা চালানো হয় উচ্ছেদ প্রচেষ্টা। তবে কখনই ভেঙে পড়েননি নারীরা। ক্রমেই তাদের এই সাহসিকতার কথা ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। সাহায্যে এগিয়ে আসে আন্তর্জাতিক অনেক মানবাধিকার সংস্থা।


আরও পড়ুন: টাকার বান্ডিলে তৈরি ‘কার্পেটে’ প্রেমিকাকে হাটালেন যুবক


প্রকৃত ঘটনা হলো, পুরুষ প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়ার পরও গর্ভধারণ করছেন গ্রামের নারীরা। না, কোনো অলৌকিক উপায়ে নয়। গ্রামের আশপাশের অঞ্চলের পুরুষদের মধ্যে থেকেই নিজেদের পছন্দমতো সঙ্গী নির্বাচন করেন তারা। কিন্তু গর্ভধারণের পর আর সেই পুরুষের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেন না নারীরা। এ গ্রামে সন্তানের অধিকার একান্তভাবেই মায়ের। একাই সন্তানকে বড় করার ভার নেন তারা। আর এভাবেই, নিঃশব্দেই এক আন্দোলন জারি রেখেছেন পৃথিবীর প্রত্যন্ত গ্রামের এ মানুষেরা।


ছেলেসন্তান ১৮ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে মায়ের সঙ্গে। তার পরই ছাড়তে হয় গ্রাম। বর্তমানে পুরুষদের গ্রাম ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে। তবে নিষিদ্ধ রাতযাপন। উমোজার এ জীবনযাত্রা দেখতে ভিড় করেন বিশ্বের নানা প্রান্তের পর্যটকরা। কৃষিকাজের পাশাপাশি হাতে তৈরি গহনা ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক বিক্রি করে উমোজা এখন স্বনির্ভর।


উমোজা গ্রামের নারীরা বলেন, আমরা বিভিন্ন সম্প্রদায় থেকে এসেছি। কিন্তু এ গ্রামে আমরা একটি পরিবার। একই পরিচয়ে পরিচিত আমরা।


পরবর্তী প্রজন্মকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছেন গ্রাম প্রধানরা। শিশুদের জন্য স্থাপন করা হয়েছে একটি স্কুল। লক্ষ্য একটিই- সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে এক হয়ে এভাবেই নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয় ধরে রাখা। কারণ উমোজা মানেই যে একতা।

 

জেবি/এজে