অলৌকিক তাবিজে ডিপিডিসি হুজ্জাতের সম্পদের পাহাড়!


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ০১:২৪ অপরাহ্ন, ৯ই জুলাই ২০২৪


অলৌকিক তাবিজে ডিপিডিসি হুজ্জাতের সম্পদের পাহাড়!
ছবি: জনবাণী

ডিপিডিসির অধীনে দুই বছরের যত জমি কেনাকাটা হয়েছে। এতে যেসব জমির মালিক ছিলেন তাদের কাছ থেকে ৩৫ ভাগ কমিশন নিচ্ছেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপক হুজ্জাত উল্লাহ। এ ছাড়া তিনি ব্যক্তিগত ভাবে ট্রেড লাইন্সে করে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের নামে বোরকার হাউজ খুলে শুরু হয় তার দালালি ব্যবসা।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, হুজ্জাত উল্লাহ জমির দালালির টাকা স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনদের নামে-বেনামে সম্পদ গড়েছেন বলে প্রমান মিলেছে। তা ছাড়াও এই কর্মকর্তা ডিপিডিসি’র যে সকল জমি রয়েছে তার খাজনা-নামজারির দেখভালের দায়েত্ব রয়েছেন তিনি। এই সুযোগে সাব-রেজিস্টারের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে  আয় করেন কোটি কোটি টাকা। যেন অলৌকিক কোন তাবিজের প্রভাবে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।  


দুদক সূত্র বলছে, গতকাল সোমবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয় সংস্থাটির উপ-পরিচালক সেলিনা আখতার বাদী হয়ে ডিপিডিসি ব্যবস্থাপক হুজ্জাত উল্লাহর বিরুদ্ধে একটি মামলাটি দায়ের করেন। দুদক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। 


মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, হুজ্জত উল্লাহর দাখিল করা সম্পদ বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, মো. হুজ্জাত উল্লাহর নিজ এবং স্ত্রীর নামে ২ কোটি ২ লাখ ২৫ হাজার ৯৮১ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। যার মধ্যে ১১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৯০ টাকার অস্থাবর সম্পদ বাদ দিলে তার নামে ১ কোটি ৯০ লাখ ৬৮ হাজার ৯১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেন। অন্যদিকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণী পর্যালোচনা করে হুজ্জাত উল্লাহ নিজ নামে স্থাবর অস্থাবর খাতে মোট ১ কোটি ৯৩ লাখ ৯২ হাজার ৭০৫ টাকার জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। যে কারণে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২), ২৭(১) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রায় ৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।


গত ৩০ জুন দুদকের প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। যার স্মারক নং ০০.০১.০০০০.৫০৫.০৩.০০১.২১.২৩৬৪৮। হুজ্জাত উল্যাহ  ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার নামে ফ্ল্যাট নং-২০১ (ফার্স্ট ফ্লোর), হাউজ নং-১৬, রোড নং-৫, ব্লক-সি, বনশ্রী প্রজেক্ট, রামপুরা, ঢাকা ও টাঙ্গাইলের বেতবাড়ি গ্রামে তার নামে-বেনামে বিপুল পরিমান সম্পদের পাহাড় রয়েছে।



ডিপিডিসির কর্মকর্তা হুজ্জাত উল্লাহর টাকায় তার স্ত্রী মিসেস মাহমুদা খাতুনের নামে ২০১১/২০১২সালে ফ্ল্যাট এবং প্লট মূল্য ক্রয় করেন। যার মূল্য দেখিয়েছেন ২৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। কিন্তু বাজার অনুযায়ী ওই সব সম্পদের মূল্য ৪ কোটি টাকার বেশি। দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে দেখানো হয়েছে  স্ত্রী মিসেস মাহমুদা খাতুনের নামে লেকসিটি কনকর্ড এ ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ফ্ল্যাট মূল্য দেখানো হয়েছে। যার মূল্য কোটি টাকার বেশি। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্রকল্পে প্লটের মূল্য ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। যার বর্তমান মূল্য তিন কোটি টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ওই কর্মকর্তার আয়কর নথীতে এই সম্পদের কোনো তথ্য উল্লেখ ছিলো না। এ ছাড়া টাঙ্গাইলে অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছে  ১১ লাখ ৫৭ হাজার ৮’শ ৯০ টাকা। কিন্তু বাজার অনুযায়ী সম্পদের মূল্য ৫ কোটি টাকার বেশি। হুজ্জাত উল্লাহর ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের আয়কর নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, পারিবারিক খরচ বাদে অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৫১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৪ টাকা। হুজ্জাত উল্লাহর তার বেতন ভাতা থেকে পারিবারিক ব্যয় বাদে বেতন কৃষি ও অন্যান্য আয় বাবদ ৮৩ লাখ ১২ হাজার ৯৩ টাকা আয় দেখালে দুদকের তদন্তে তা গরমিল পাওয়া গেছে।  


জেবি/এসবি