অন্যায়ভাবে হত্যা করা নিয়ে কী বলছে ইসলাম?


Janobani

ইসলাম ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫:১৮ অপরাহ্ন, ৩০শে জুলাই ২০২৪


অন্যায়ভাবে হত্যা করা নিয়ে কী বলছে ইসলাম?
ছবি: প্রতীকী

পৃথিবীর মধ্যে অপরাধের সর্বোচ্চটা হচ্ছে মানুষ হত্যা বা খুন জঘন্যতম ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। ইসলামে সব রকম হত্যা, রক্তপাত, অরাজকতা, সন্ত্রাস ও সহিংসতাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।


রাসুলুল্লাহ (সা.) ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে শান্তি, স্থিতিশীলতা, সম্প্রীতি ও নিরাপত্তার মর্মবাণী ঘোষণা দিয়ে বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন, ‘তোমাদের রক্ত তথা জীবন ও সম্পদ পরস্পরের জন্য হারাম। যেমন আজকের এই দিনে, এই মাসে ও এই শহরে অন্যের জানমালের ক্ষতিসাধন করা তোমাদের ওপর হারাম।’


মানুষ হত্যাকে মহান আল্লাহ তা’আলা কতটা ভয়ানকভাবে উপস্থাপন করেছেন তা একটি আয়াতে ফুটে উঠেছে। আল্লাহ বলেন, ‘কেউ যদি কাউকে হত্যা করে এবং তা অন্য কাউকে হত্যা করার কারণে কিংবা পৃথিবীতে অশান্তি বিস্তারের কারণে না হয়, তবে সে যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করল। আর যে ব্যক্তি কারও প্রাণ রক্ষা করে, সে যেন সমস্ত মানুষের প্রাণরক্ষা করল (সুরা মাইদা, ৩২)।’


আরও পড়ুন: ইসলামে জালেম ও জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি


এর অর্থ হচ্ছে, দুনিয়ার প্রত্যেকটি মানুষের অন্তরে অন্য মানুষের প্রতি মর্যাদাবোধ যদি জাগ্রত থাকে এবং তাদের প্রত্যেকে অন্যের জীবনের স্থায়িত্বে ও সংরক্ষণে সাহায্যকারী হওয়ার মনোভাব পোষণ করে তাহলেই কেবল মানবজাতির অস্তিত্ব নিশ্চিত ও নিরাপদ হতে পারে। যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে সে শুধু ওই ব্যক্তির ওপর জুলুম করে না বরং সে এ কথাও প্রমাণ করে যে, তার অন্তরে মানুষের জীবনের প্রতি মর্যাদাবোধ ও সহানুভূতির কোনো স্থান নেই।


মানব হত্যার শাস্তিসমূহ


কিয়ামতের দিন নরহত্যার বিচার করা হবে সর্বাগ্রে, তারপর বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মানবাধিকার সম্পর্কিত সর্বপ্রথম হিসেব হবে রক্তের।’ (বুখারি ৬৫৩৩; মুসলিম ১৬৭৮)


একজন মানুষকে হত্যা করলে শুধু ওই ব্যক্তিই নিহত হয় না, তার গোটা পরিবারের ওপর এর প্রভাব বিস্তার করে। সন্তানরা হয় এতিম। স্ত্রী হয় বিধবা। মা-বাবা হয় সন্তানহারা। দীর্ঘমেয়াদি এক ট্রমার মধ্য দিয়ে যায় ফ্যামিলিটি। স্বাভাবিক মৃত্যু আর খুন এক জিনিস নয়। স্বাভাবিক মৃত্যুতে মানুষের ব্রেনে একরকম সান্ত্বনা খুঁজে পাওয়া যায়; যা খুনের ঘটনায় অনুপস্থিত।


কাউকে অবৈধভাবে হত্যা করাও কবিরা গুনাহ। ব্যক্তি বিশেষে অপরাধের দায় আরও বেড়ে যায়। কুরআনে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর আয়াত ও নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করে, অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করে এবং মানুষদের মধ্য থেকে যারা ন্যায় ও ইনসাফের আদেশ করে তাদেরকে (হে নবি) তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। কাদেরই আমলসমূহ ইহকাল ও পরকালে নষ্ট হয়ে যাবে এবং তাদেরই জন্য তখন আর কেউ সাহায্যকারী হবে না (আলে ইমরান : ২১-২২)।


খুনি হবে জাহান্নামি। কুরআনে এসেছে, ‘আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন মুমিনকে হত্যা করে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম। তার মধ্যে সে সদা সর্বদা থাকবে এবং আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি ক্ষুব্ধ হবেন ও তাকে অভিশাপ দিবেন। তেমনিভাবে তিনি তার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন ভীষণ শাস্তি।’ (নিসা : ৯৩)


আরও পড়ুন: ঈমান রক্ষা করতে যে দোয়া পড়বেন


কিয়ামতের দিনের একটি চিত্র হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘হত্যাকৃত ব্যক্তি হত্যাকারীকে সঙ্গে নিয়ে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে। হত্যাকৃত ব্যক্তির মাথা তার হাতেই থাকবে। শিরাগুলো থেকে তখন রক্ত পড়বে। সে আল্লাহ তা‘আলাকে উদ্দেশ্য করে বলবে, হে আমার প্রভু! এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। এমনকি সে হত্যাকারীকে আরশের অতি নিকটেই নিয়ে যাবে। 


মানুষ হত্যা এমন এক অপরাধ, যার গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করেন না। হাদিসে এসেছে, ‘প্রতিটি গুনাহ আশা করা যায় আল্লাহ তা ক্ষমা করে দেবেন। তবে দুটি গুনাহ যা আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। আর তা হচ্ছে, কোনো মানুষ কাফির অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে অথবা ইচ্ছাকৃত কেউ কোনো মুমিনকে হত্যা করলে।’ (নাসায়ী ৩৯৮৪; আহমাদ ১৬৯০৭; হা’কিম ৪/৩৫১)


জেবি/আজুবা