বিসিআইসিতে সংস্কার এখন সময়ের দাবি
মো. রুবেল হোসেন
প্রকাশ: ০৫:৪০ অপরাহ্ন, ১১ই আগস্ট ২০২৪
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার এক গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেছেন। এরইমধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরেরও বেশি সময়ের শাসনের অবসান ঘটে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর চলছে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ। দীর্ঘদিনের জুলুম, নির্যাতন, অনিয়ম আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাকরুদ্ধ মানুষ ও কর্মজীবীরা তাদের সংস্কার দাবি তুলতে শুরু করেছে। সংক্ষুব্ধ কর্মচারীরা ফুঁসে উঠেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে ঘটে যাওয়া ঘটনা সকলকে আরও উজ্জীবিত করেছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা। সার উৎপাদন ও বিতরণ এই সংস্থার মূল কাজ। সার খুবই স্পর্শকাতর পণ্য। সার উৎপাদন ও বিপণন সঠিকভাবে না হলে দেশের খাদ্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়তে পারে।
সংস্থাটির কাঁধে বিগত সরকারের শাসনামলে ঘটে যাওয়া হাজার কোটি টাকা সার লোপাটের মত কলংক রয়েছে। যে সকল কর্মকর্তা এই লোপাটের সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। তা না হলে এ ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা পূণরায় ঘটতে পারে বলে অনেকে মন্তব্য করেন। বিগত ১৫ বছরে বিভিন্ন সময় সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ রেখে হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে আমদানি নির্ভর সার ব্যবস্থাপনায় রূপ নিয়েছে বিসিআইসি। বিসিআইসিকে উৎপাদমুখী করতে গ্যাস সরবরাহের কারণে বন্ধ থাকা সারকারখানাগুলো দ্রুত সার উৎপাদনে নিতে হবে। এতে আমদানি নির্ভরতা যেমন কমবে একইসাথে দেশ গঠনে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
শনিবার (১০ আগস্ট) শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান বলেন, দুর্নীতিকে মেনে দেশ চালানোর প্রশ্নই আসে না। সুতরাং দুর্নীতিকে মেনে নেওয়ার কোন উপায় নেই। রক্তক্ষয়ী গণ- আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি মানা হবে।
বিসিআইসিকে বাঁচাতে ১৯৮৮ সালের প্রবিধান মালার আলোকে প্রায় ৩০ বছরের চলমান ও ধারাবাহিক জ্যেষ্ঠতা তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি চালু করতে হবে। একই সাথে স্ব-প্রণোদিত হয়ে ২০২২ সালে চলমান জ্যেষ্ঠতা তালিকা পরিবর্তনের পেছনে ছড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে জানান অনেকে।
আরও পড়ুন: গভর্নরের দায়িত্ব পেলেন নূরুন নাহার
জানা যায়, বিসিআইসির ঊর্ধ্বতন মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) পদটি পূর্বে সচিব পদ হিসেবে নামকরণ ছিল যা এখন আর নেই। ঊর্ধ্বতন মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) পদটি পূর্বের অবস্থানে অর্থাৎ সচিব পদনামে ফিরিয়ে আনা ও পরিচালনা পর্ষদে বিসিআইসি হতে পূর্বের ন্যায় ৩ জন পরিচালক পদায়ন করলে এবং এমপ্লয়ী আইডিধারী সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন কেন্দ্রীকরণ করলে সংস্থাটির কর্মতৎপরতা ও শৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাবে।
বিসিআইসি'র পরিচালনা পর্ষদ থেকে সুবিধাভোগীদের অপসারণ ও বদলীর আদেশাধীন পরিচালককে ছাড়পত্র প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি বিসিআইসি রক্ষায় জ্যেষ্ঠতা বিষয়ে অনেক কর্মকর্তা ইতিপূর্বে মামলা করেছেন তাদের উপর বিভিন্নভাবে নিপীড়নও করেছে সংস্থাটি। তাদের উপর নিপিড়ন বন্ধ করে যোগ্যতা অনুযায়ী পদায়ন করলে সরকারের ভাবমূর্তি যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ তৈরি হবে।
যে সংস্থার আইন শাখার প্রধানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধ মামলার আপিল চলমান থাকে সে সংস্থার আইন বিভাগ কিভাবে চলে তা জাতির নিকট পরিস্কার করা দরকার। একইসাথে বিসিআইসি প্রধান কার্যালয়ের প্রশাসন বিভাগেও রয়েছে নানা বিভাজনের খবর। অনেক কর্মকর্তা বছরের পর বছর একই চেয়ারে বসে সময় পার করছে। কেউ চাকরি শুরু থেকে অবসর পর্যন্ত একই চেয়ারে রয়েছেন এমন ঘটনার নজির রয়েছে। ফলে সংস্থার চেন অফ কমাণ্ড মুখথুবড়ে পড়েছে। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, অনেককে অবৈধভাবে চাকুরীচ্যুতও করা হয়েছে। অপরদিকে কোন প্রতিষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিক সিবিএ না থাকলে কর্মকর্তাদের অনিয়ম দুর্নীতি মাথাচাড়া দেয় ঠিক তেমনই হয়েছে সংস্থাটিতে। বিভিন্নভাবে আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে বিসিআইসিতে সিবিএ দমন করা হয়েছে যার ফলে বেপরোয়া হয়েছে অনেক কর্মকর্তা। তাই দ্রুততম সময়ে সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে সিবিএ নির্বাচন সম্পন্নকরা উচিৎ।
আরও পড়ুন: ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গোলাগুলি, ৫ কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ
বিসিআইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন যেহেতু কর্মকর্তাদের ভাল-মন্দ, কল্যাণ ও উৎপাদন নিয়ে কাজ করে সেহেতু বিসিআইসি বোর্ডে গৃহীত সকল প্রকার কার্যবিবরণী ও তদালোকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বিসিআইসি'র স্বার্থ বিরোধী কিনা তা পর্যালোচনা করার জন্য বিসিআইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি বরাবর কপি প্রেরণের জন্য দাবি জানিয়েছেন অনেকেই।
সংস্থাটির অনেক কর্মকর্তা মনে করেন, বিসিআইসি প্রবিধানমালা সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্য প্রযোজ্য বিধায় নতুন করে প্রবিধানমালা সংস্কারের পূর্বে সকলের মতামত গ্রহণের জন্য খসড়া প্রবিধান মালা বিসিআইসি'র ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে আপত্তি নিষ্পত্তি করা হোক। গৃহ নির্মাণ/জমি ক্রয় ঋণ দ্বিগুণ করা ও কর্তন রেটের হার সর্বোচ্চ বাড়িভাড়া পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখা হোক বলে তারা দাবি জানান।
সংস্থাটির অনেক কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে জানা যায়, বিসিআইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সদস্যবৃন্দ বিসিআইসি'র সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের ভাল-মন্দ ও কল্যাণ নিয়ে কাজ করে বিধায় বিসিআইসি নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন কারখানা/প্রতিষ্ঠানে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি চান তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জনবাণীকে বলেন, দ্রুততম সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিসিআইসি'র উন্নয়ন সাধনে বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন কারখানার এন্টারপ্রাইজ বোর্ড বা কোম্পানি বোর্ডের চেয়ারম্যান বিসিআইসি'র পরিচালক ও চেয়ারম্যানের মধ্য থেকে নির্বাচন করা হোক। অপরদিকে জেএফসিএল ও এসএফসিএলের কোম্পানী বোর্ডে বাহিরের চেয়ারম্যান রয়েছে যা এই সংস্থার জন্য হুমকি সরূপ।
জেবি/এসবি