গাইবান্ধায় আতঙ্ক কাটেনি মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬:০৫ অপরাহ্ন, ১৫ই আগস্ট ২০২৪
গাইবান্ধায় মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক এখনো কাটেনি। জেলার বিভিন্ন মেসে গিয়ে মোবাইল ছিনতাই, মারধর, টাকা লুট করে শিক্ষার্থীদের মেস ছাড়তে বাধ্য করার পর এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে তাদের মধ্যে।
বুধবার (১৭ জুলাই) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কর্মসূচিতে অংশ নেন গাইবান্ধার সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে শহরের ১নং রেলগেটে আওয়ামী লীগের নেতারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। তখন আন্দোলনকারীরা চড়াও হয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালান। ও জেলা আওয়ামীলীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী আহত হন।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় বন্যায় ৭৬ কোটি টাকার ফসলি জমির ক্ষতি
বিষয়টি পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়লে জেলার বিভিন্ন মেসে মেসে গিয়ে মোবাইল ছিনতাই, মারধর, টাকা লুট করে তাদের হুমকি দিয়ে মেস ছাড়তে বাধ্য করেন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
গাইবান্ধা সরকারি কলেজ, মহিলা সরকারী কলেজ, আসাদুজ্জামান স্কুল এন্ড কলেজ, একেএস স্কুল এন্ড কলেজ, আহম্মেদ উদ্দিন শাহ্ শিশু নিকেতন স্কুল এন্ড কলেজ, গাইবান্ধা কৃষি ডিপ্লোমা, উত্তরবঙ্গ টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং ইনিস্টিউট গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে শহরের কলেজ পাড়া, পলাশপাড়া, আদর্শ পাড়া, ফয়জারের মোড়, টাবু পাড়া, সুন্দর জাহান মোড়, প্রফেসর কলোনি, সরকার পাড়া, থানা পাড়া, খানকা শরিফ ও স্টেশন এলাকায় কমপক্ষে শতাধিক মেস রয়েছে। এসব মেসে অনন্ত ৩ হাজার শিক্ষার্থী থাকেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগষ্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, মেসগুলোতে শিক্ষার্থীরা আসা শুরু করেছেন। তবে ওইসব এলাকায় সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে অপরিচিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন না।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় ৭ মাসে নারী-শিশু ধর্ষণের শিকার ৯২ জন, ডিভোর্স-মামলা বাড়ছে
থানা পাড়ায় মেসে থাকা শিক্ষার্থী মেজবাহুল ইসলাম বলেন, কোটা সংস্কার দাবি আদায়ের জন্য সকল শিক্ষার্থীর মতো আমিও গিয়েছিলাম। জুলাই মাসের ১৭ তারিখে মেয়র মতলুবর রহমান আহত হওয়ার পর আওয়ামিলীগের নেতাকর্মীরা কলেজপাড়ার মেসগুলোতে ঢুকে শিক্ষার্থীদের মারধর করে মোবাইল ও টাকা নিয়ে মেস থেকে বের করে দেন। সেই দিনের ভয়ে আর মেসে যেতে দেয়না মেয়রের লোকজন অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীর, এর আগেও মেসে মেসে চাঁদা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। আবার মেসে গেলে হামলা করে কি না ভয়ে আছি। এদিকে আরেক ছাত্র রেজওয়ান শেখ বলেন আহাদ এডুকেশন কেয়ার কোচিং করাই কিন্তু মেসে বন্ধ থাকায় প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে থেকে ঘোড়াবান্ধা চোরাস্তা বাজার গ্রামের বাড়ি সেখান থেকে কোচিং করানোর জন্য আসতে হয়।।
শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি ৮ তারিখে মেসে আসছি। কলেজপাড়া এলাকায় মেয়রসহ তার লোকজন রাত ও দিনে শোডাউন দিচ্ছেন, আমাদের ভয় লাগছে। এর আগেও আমাদের শিবিরের ট্যাগ লাগিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়েছেন। মুখ খোলার সাহস পাইনি। নীরবে সহ্য করে গেছি।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ, শহর রণক্ষেত্রে পরিণীত
এ বিষয়ে গাইবান্ধা পৌরসভার মেয়র মতলুবর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
গাইবান্ধা ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মৈত্রীয় হাসান জয়ীতা বলেন, কোন কোন এলাকায় ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কী করেছে সব আমরা জানি। এ বিষয়ে মেয়র মতলুবর রহমানের সঙ্গে বসে ছাত্রদের ছিনতাই করা মোবাইল, টাকা উদ্ধারসহ তার লোকজন যেন আর কোনো মেসের শিক্ষার্থী ভাই-বোনের ওপর অত্যাচার না করে সেটি বলার চেষ্টা করছি। তবে তিনি আমাদের ডাকে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া দেননি। ছাত্রলীগ বা কোনো নেতাকর্মী যদি আমার আর কোনো ভাই-বোনের ওপর কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্ট করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা রাজপথে অবস্থান নেবো।
এমএল/