কিশোর ফাইয়াজকে উপুড় করে নির্যাতন করেছিল পুলিশ
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২:২১ অপরাহ্ন, ৭ই সেপ্টেম্বর ২০২৪
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাত্রাবাড়ি এলাকায় পুলিশ হত্যা মামলায় বুধবার (২৪ জুলাই) রাতে যাত্রাবাড়ীর বাসা থেকে ফাইয়াজকে তুলে আনে পুলিশ। পরে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে শনিবার (২৭ জুলাই) সিএমএম আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করে তদন্ত কর্মকর্তা।
পরে জানা যায়, হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজ ঢাকা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তার বয়স ১৭ বছর। সে সময় শিশু ফাইয়াজকে নিয়ে বিভিন্ন মহলে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
সোমবার (৫ আগস্ট) আওয়ামীলীগ পতনের পর দিন টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে জামিন পেয়ে এখন নিয়মিত পড়াশোনায় মনোযোগ দিয়েছেন এই মেধাবী শিক্ষার্থী।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) আন্দোলনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফাইয়াজের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দৈনিক জনবাণীর ঢাকা কলেজ প্রতিবেদক আল জুবায়ের।
প্রতিবেদক: আসসালামু আলাইকুম। অনেক তাজা রক্তের বিনিময়ে দেশ আজ স্বৈরাচারমুক্ত করেছেন। কেমন আছেন এখন?
আরও পড়ুন: ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ইবিতে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি
ফাইয়াজ: আলহামদুলিল্লাহ আগের থেকে এখন ভাল আছি।
প্রতিবেদক: আন্দোলনের সাথে কিভাবে যুক্ত হয়েছিলেন শুরুটা জানতে চাই?
ফাইয়াজ: আন্দোলনের শুরুতে শহীদ আবু সাঈদ এবং মুগ্ধ যারা প্রথম দিকে শহীদ হয়েছিল সেই বিষয়টি আমাকে আবেগ আপ্লুত করেছে এবং আমি বাসায় অনেক কান্না করেছিলাম। শহীদ আবু সাইদ যেভাবে বুক পেতে দিয়েছিল এটা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করি যে আমাদের আর বাসায় বসে থাকার সময় নাই, আমাদের বের হতে হবে। পরে আমরা 'আবু সাঈদের বুকে গুলি কেন? এ স্লোগানকে সামনে নিয়ে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম।
প্রতিবেদক: আপনাকে থানায় নিয়ে কিভাবে নির্যাতন করেছিল পুলিশ সে বিষয়ে জানতে চাচ্ছি?
ফাইয়াজ: পুলিশ প্রথম আমাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে পুলিশের উধ্বর্তন কর্মকর্তারা আমাকে ধরে মারছিল, প্রথম আঘাত খাওয়ার পর অনেকটাই সেন্সলেসের মতো হয়ে পড়েছিলাম, তারপর আমার পা উপুড় করে পায়ের গোড়ালিতে অনেকগুলো আঘাত করেছিল। আর ভিডিও অন করে পুলিশ হত্যার স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য জোর করছিল। বার বার জিজ্ঞাসা করছিল, তোর সাথে কারা জড়িত? তোর বন্ধুদের ঠিকানা দে। পরে যখন ডিবিতে নেওয়া হয় তখন আমাকে ' শিবির' কর্মী হিসাবে ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ভাইয়া ঐ মুহূর্তগুলো ছিল আমার জন্য খুব কঠিন। মাঝে মাঝে মনে পড়লে এখনও পেইন দেয় আমাকে।
প্রতিবেদক: আদালতের দিনগুলো কেমন ছিল?
আরও পড়ুন: জাবির নতুন উপাচার্য হলেন কামরুল আহসান
ফাইয়াজ: কোর্টে নেওয়ার পর অনেক খারাপ লাগছিল বুঝতে পারছিলাম তারা আমাকে দিয়ে কোনো একটা কাজ করতে চাচ্ছে। তখন আমি এই দৃঢ়তা নিজের মধ্যে রাখছি যে যত যায় হোক নিজের দেশের জন্য যে কাজটা করতেছি এটা কখনও বৃথা যেতে দেবো না। তখন আমি এই মুভমেন্টটা নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছিলাম, তখন আমার গায়ে বাংলাদেশের জার্সি পরা ছিল। এরপর তারা আমাকে হাতকড়া পড়িয়ে রসি দিয়ে শক্ত করে বেঁধেছিল। যার ফলে আমি নাড়ায়তে পারতাম না কিছু।
প্রতিবেদক: বাবা-মায়ের থেকে কেমন সাপোর্ট পেয়েছিলেন?
ফাইয়াজ: প্রথম থেকেই, আব্বু-আম্মু অনেক সাপোর্ট করেছেন।আমাকে সাহস দিয়েছেন যেন ভেঙে না পড়ি। তারা হয়তো আড়ালে কান্নাকাটি করতেন তবুও আমাকে বুঝতে দিতেন না।
প্রতিবেদক: আপনার জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চাই?
ফাইয়াজ: বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংকট এখন বুদ্ধিবৃত্তিক সংকট। দক্ষ প্রকৌশলী হিসাবে নিজেকে গড়তে চাই। আল্লাহ যদি চান অবশ্যই হবো যদি নাও চান ইনশাল্লাহ দেশের উন্নতির খাতিরে আমি আমার সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করবো।
আরও পড়ুন: নোবিপ্রবির নতুন উপাচার্য ঢাবি অধ্যাপক ইসমাইল
প্রতিবেদক: সামনে কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান?
ফাইয়াজ: আমার ভাই-বন্ধুরা যে এত শহিদ হয়েছে, আমরা হয়তো জেলে গিয়েছি, অল্প কিছু করেছি কিন্তু তারা তো পুরো জীবনটাই ত্যাগ করেছেন। সেই জায়গা থেকে বলতে চাই, তাদের ত্যাগটা সবসময় মনে রাখতে চাই। সবাই একসাথে সুন্দরভাবে পড়াশোনা করতে পারি এমন একটা সুন্দর পরিবেশ সবসময় থাকুক এটাই চাই।
এমএল/