রাতভর গোলার শব্দে অশান্ত টেকনাফ সীমান্ত


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৩৬ অপরাহ্ন, ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪


রাতভর গোলার শব্দে অশান্ত টেকনাফ সীমান্ত
ছবি: প্রতিনিধি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মংডুতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্য চলমান যুদ্ধে ।


শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাত ১১ টায় গোলার বিকট শব্দ শুনা যায় এ শব্দ রবিবার (৮ সপ্টেম্বর) ভোর পর্যন্ত এ শুনা গেছে। এতে নতুন করে এপারের বসবাসকারী  সীমান্ত মানুষের মাঝে আতঙ্ক কাজ করছে। 


আরও পড়ুন: টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ


সীমান্তের লোকজন জানান, মিয়ানমারের মংডু টাউনশীফে বিপরীতে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এবং সাবরাং এর পূর্বে নাফনদীর ওপারে মংডু শহরের অবস্থান। মংডু শহরের নাফনদী দিয়ে প্রবেশপথ খায়েনখালী খালটি। ওই খালের মোহনায় রোহিঙ্গারা জড়ো হতে দেখা গেছে। ওই সীমান্ত এলাকায় প্রচন্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী বিদ্রোহী আরাকান আর্মির দখলে থাকা এলাকা চৌকি উদ্ধারের জন্য এমন গোলাগুলি বলে সীমান্ত এলাকার লোকজন মনে করছেন। 


স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান,মিয়ানমারের এখনো সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবসা করছে।  এর মধ্য রাখাইনের বুথেডংয়ে আড়াই লাখ, মংডুতে তিন লাখ এবং বাকিরা আকিয়াবসহ অন্য টাউনে রয়েছে। বর্তমানে মংডুতে হামলা হচ্ছে, সেখানে অধিকাংশ রোহিঙ্গা নাগরিকের বসবাস। তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ নাফ নদী অতিক্রম করে বাংলাদেশের টেকনাফে পালিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন।


তবে সীমান্তে আগের তুলনায় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা অনেকটা কমেছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি জানান, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত কাছাকাছি হওয়ার কারনে বড় বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। সেদেশে চলমান যুদ্ধের কারনে সীমান্ত বিকট ভেসে আসছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা রোহিঙ্গাদের আমরা প্রতিহত করছি। একটি বড় সংখ্যা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের যে খবর বলা হচ্ছে ,সেটি মনগড়া। আমরা সীমান্ত অনুপ্রবেশ ঠেকানার পাশাপাশি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন। এছাড়া সীমান্ত পেরিয়ে যাতে কোন অপরাধী পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্যও নজরদারী বাড়ানো হয়েছে।  


আরও পড়ুন: টেকনাফে ১ লাখ ২০ হাজার ইয়াবা জব্দ


এদিকে খারাংখালী, টেকনাফ, পৌরসভা, হ্নীলা, জাদিমুড়া, দমদমিয়া, নাইট্যংপাড়া, পৌরসভার জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, নাফ নদীর মোহনা ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বড় বড় শব্দ।  সীমান্তের লোকজন বলছে, দীর্ঘদিন বন্ধের পরে  আবার বড় ধরনের মর্টারশেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কাঁপছে টেকনাফ। 


সীমান্তে টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ার মুহাম্মদ কাদেট হোসেন বলেন, ‘রাতভর ওপারের গোলার বিকট শব্দে নির্ঘুম রাত কেটেছে। শনিবার সারা রাত গোলার চলছে ওপারে। তাই আমরা রাত জেগে বসে ছিলাম। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা ভয়ে ছিল।’ 


সীমান্তের বাসিন্দা মো. ইসলাম বলেন, ‘রাতভর মংডুতে তুমুল যুদ্ধে আমরা সীমান্তের মানুষ ঘুমাতে পারেনি। অনেকে ঘরের বাইরে রাত কেটেছে। একটু পর পরই বিকট গুলির শব্দে সীমান্ত কেঁপে ওঠে।  এর ভয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পরি। রাতের মতো এমন গোলির শব্দ আগে কখনো শুনেনি। এ পরিস্থিতিতে যে-কোন মূর্হতে সীমান্তে আবারও অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে।’


ক্যাম্পের কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, দুই পক্ষের গোলাগুলিতে অনেক রোহিঙ্গা মারা যাচ্ছে। এখন পাশের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ছাড়া তাদের যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। তাই যে কোনো সময় তারা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ছুটতে পারে।  কিন্তু যারা এপারে আসার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে, তাদের এখানে না আসতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।’ 


আরকান রোহিঙ্গা আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, মূলত যুদ্ধের নামে রাখাইনে যেসব রোহিঙ্গা রয়েছে তাদের নিশ্চিহ্ন করতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্য নাটক চলছে। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ করবো, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে সেফজোন গড়ে তুলে তাদের সেখানে বসবাসের উপযোগী করা হোক। অন্য এসব মানুষগুলো প্রাণে বাচঁতে এদিক-ওদিক পালাতে থাকবে।’ 


আরও পড়ুন: টেকনাফে শিক্ষকের নিরাপত্তা চেয়ে স্মারকলিপি প্রদান


একিকে, মিয়ানমার মংডুও শহরের মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে।, টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীরদ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফনদীতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা দিনরাত নাফনদী ও সীমান্ত সড়কে টহল বৃদ্ধি করেছে।সেটি চলমান এবং যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সব সময় প্রস্তুত বিজিবি ও কোস্টগার্ড।


টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন,‘মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আবারও  বিস্ফোরণের বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার রয়েছে।’ 


এসডি/