শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড
জনবাণী ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬:৫৩ অপরাহ্ন, ১০ই সেপ্টেম্বর ২০২৪
"Education is the backbone of a Nation" শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত। শিক্ষা হচ্ছে একজন মানুষের মৌলিক অধিকার। প্রত্যেকটা মানুষের শিক্ষা অর্জনের অধিকার রয়েছে। যা পূরণ করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। তার জন্য একটা সু -পরিকল্পিত প্ল্যাটফর্ম দরকার। যেখানে থাকবে না কোন বৈষম্য।
এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থী প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ এ তিন স্তরে শিক্ষা অর্জন করে। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর হচ্ছে মাধ্যমিক স্তর। কেননা, এই স্তরের শিক্ষাটাই তার জীবনের ভিত্ গড়ার অন্যতম কারিগর। আর এই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাটাই তার শিক্ষা অর্জনের পরবর্তী ধাপ এমনকি বাস্তব জীবনেও প্রতিফলিত হয়। তাই কোনভাবেই এ স্তর বা মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাটাকে দুর্বল বা অবহেলা করা যাবে না। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রত্যেককেই অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থাটাই সবচেয়ে দুর্বল ও অবহেলার শিকার। বিশেষকরে, এমপিও ভুক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল- মাদ্রাসা)। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো খুবই নাজুক। প্রতিষ্ঠানগুলো ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নামক ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে আজ ক্ষত-বিক্ষত। প্রতিষ্ঠান প্রধানের যোগ সাজশে সভাপতির দ্বারা আক্রান্ত সহকারি শিক্ষকগণ। যার নেতিবাচক প্রভাব পরে শিক্ষার্থীর ওপর এবং পাঠদানের উপর। একজন সহকারী শিক্ষকের পূর্ণ স্বাধীনতা না থাকায় সভাপতি ও প্রতিষ্ঠান প্রধানের চাপের কারণে বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার হন। প্রতিষ্ঠানের মাসিক খরচের পারসেন্টেন্স হিসেবে হার (খরচের অংশ) দিতে হয় সহকারী শিক্ষকদের।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে স্নাতক স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা একজন সহকারী শিক্ষকের মাসিক বেতন মাত্র ১২৫০০/- টাকা যা একজন দিনমজুর কিংবা রিকশাচালকের মাসিক আয়ের তুলনায় খুবই কম। (কোন কাজকে ছোট করার জন্য নয়, শুধু তুলনা মাত্র) ।
একজন সহকারি শিক্ষক এই বেতন দিয়ে না পারেন তার পরিবার নিয়ে দু-বেলা দু-মুঠো ডাল- ভাত খেতে, না পারেন পরিবারের চাহিদা মেটাতে, না পারেন জীবনটা উপভোগ করতে। দৈন্যতায় ভোগতে হয় সর্বক্ষণ। পারিবারিক/ আর্থিক চাপাচাপের পাশাপাশি সহ্য করতে হয় প্রতিষ্ঠান প্রধানের মানসিক চাপ।আমি সবার কথা বলছি না, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারি শিক্ষকদের সহকর্মী নয় বরং মুনিবের দাস মনে করে। তার অধীনস্থ হওয়ায় যা বলবে তাই পালন করতে হবে তিনিই "অল-ইন-অল"।তার কথার বাইরে কোন কথা বলা যাবে না। কোন অন্যায় হলে তা প্রতিবাদ করা যাবে না। তার কথাই "আইন"। অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান চাকরী জীবনে একটি ক্লাসও কোনদিন নেননি। অথচ নিজে সর্বোচ্চ সুবিধা নিয়ে গাধার মতো সহকারী শিক্ষকদের খাঁটাবে আর দোষ খুঁজবে। প্রতিবাদ করলে হতে হয় অপমানিত। সত্যি বলতে এমপিও ভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকরা যেন বলির পাঠা।
শিক্ষা যদি জাতির মেরুদণ্ড হয় তবে এ মেরুদন্ড গড়ার কারিগর এই শিক্ষকরা, যাদের পদে পদে হতে হয় অপদস্থ।
বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশেই শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া হয়, দেওয়া হয় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু এদেশের শিক্ষকের জীবন মানের দিকে তাকালে হতাশা ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। শিক্ষকের জীবন মানের উন্নতির চিন্তা যদি না করা হয় তবে কোনদিনই শিক্ষার মানের কোন উন্নতি হবে না। তাই একজন শিক্ষকের জীবন মানের পরিবর্তন তথা উন্নতি প্রথমেই করতে হবে।যাতে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে সংগ্রামী এ শিক্ষককে অন্য কিছুর চিন্তা না করতে হয়। কোন দৈন্যতায় যেন ভোগতে না হয়। আর যেন ঋণে জর্জরিত হতে না হয়। নিজের কষ্টার্জিত উপার্জনেই যেন সব সমস্যার সমাধান হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিষ্ঠান প্রধানের স্বচ্ছ জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করতে হবে। সভাপতি নামক ভাইরাস/ বিষফোঁড়া দূর করতে হবে। সুন্দর, গ্রহণযোগ্য, ন্যায্য অধিকার সংবলিত একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। যেখানে সম অধিকার থাকবে কোন ধরনের বৈষম্য থাকবে না। বদলী,পদায়ন থাকবে। সহকারি শিক্ষকদের একই গ্রেট/ স্কেল হতে হবে, গ্রেট /স্কেলের ক্ষেত্রে কোন ভিন্নতা থাকবে না। শুধু ধাপে ধাপে ইনক্রিমেন্ট/ টাইম স্কেল যোগ হবে।
শিক্ষক পেশাকে বলা হয় মহান পেশা, সম্মানের পেশা, এটাকে টাকা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। মানলাম সব যুক্তি, কিন্তু তা শিক্ষকদের ঠকানোর জন্যই এ বচন গুলি। শিক্ষকদের কি সংসার নাই? স্ত্রী, সন্তানের প্রতি,পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রতি তার কি কোন দায়িত্ববোধ নাই? নাকি সব হাওয়ায় চলে? একমাত্র শিক্ষকরাই সারা জীবন সংগ্রাম করে জীবন নির্বাহ করে। অথচ চাকরি শেষে তাদের পেনশন নিয়েও প্রহসন চলে। এ থেকে বের হয়ে আসতে হবে, সকল বৈষম্য থেকে মুক্তি দিতে হবে জাতি গড়ার এই মহান কারিগরকে।
আনিসুর রহমান
সহকারী শিক্ষক (ইংরেজী)
পালটিপাড়া দাখিল মাদ্রাসা
গফরগাঁও, ময়মনসিংহ।
জেবি/এসবি