ডিপিডিসির শ্যামপুর ডিভিশন

সোনা মনি চাকমার মদদে মাঈন উদ্দিনের হাতে সোনার চাবি!


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ১২:৪১ অপরাহ্ন, ২৬শে সেপ্টেম্বর ২০২৪


সোনা মনি চাকমার মদদে মাঈন উদ্দিনের হাতে সোনার চাবি!
ছবি: জনবাণী

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি’র) শ্যামপুর ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন (আইডি নং- ১১১২৯)। চাকুরী জীবন শুরু করেছিলেন ২০০৮ সালের ৯ জুলাই। তার চাকুরী জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই কেটেছে নারায়ণগঞ্জ এলাকায়। এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার অনিয়ম নিয়ে খোঁজ করতে গিয়ে পাওয়া যায় অসংখ্য দুর্নীতির তথ্য। প্রতিদিন বেশিরভাগ সময়ই সে অফিসে থাকে না।  সরোজমিনে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। দিনের অধিকাংশ সময় কাটে দালাল সিন্ডিকেটের সঙ্গে। তার নেশা এখন টাকা। টাকা ছাড়া কিছুই বুঝেন না এই কর্মকর্তা। ডিপিডিসির একাধিক সূত্র জানায়, সংস্থাটির বিভিন্ন ডিভিশনে গ্রাহকদের উচ্চচাপ সংযোগে বিদ্যুতের সাবস্টেশন নির্মাণ, সোলার প্ল্যান স্থাপনের ঠিকাদারী কাজ নেয়। এর বাইরেও তিনি উচ্চচাপ সংযোগকে নিম্নচাপ সংযোগ দিয়ে কামিয়েছেন অঢেল টাকা। আর এই টাকা কামানোর পেছনের অদৃশ্য হাত রয়েছে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (এডমিন এন্ড এইচ আর) সোনা মনি চাকমার। সোনা মনি চাকমার মদদে যেন মাঈন উদ্দিনের হাতে সোনা চাবি। অভিযোগ সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জের নরসিংপুর এলাকার ফ্রেম অ্যাপারেন্স নীট কোম্পানির ৮০০ কিলো লোডে নতুন সংযোগে ২৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছে শ্যামপুর ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন। তিনি ঐ গ্রহককে হুমকিও দিয়েছেন। টাকা না দিলে সংযোগ পাবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে কোম্পানীর এমডি মাসুদ আলম মুঠো ফোনে বলেন, বিষয়টি অনেক দিন হয়েছে। ঘটনা অনেক গড়িয়েছে। অবশেষে সংযোগ পেয়েছি। যা হওয়ার হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ব্যবসা মন্ধ। তাই ব্যবসা রেখে দুবাই এসেছি। দেখা হলে বিস্তারিত বলবো। তবে এতোটুকো বলি দালাল ছাড়া কাজ হয় না ডিপিডিসিতে। কর্মকর্তারা যদি দালাল হয় তাহলে ডিপিডিসির সুনাম থাকবে না। তাই এ বিষয় সংস্থা প্রধানের শতর্ক হওয়া জরুরি। না হলে দিন দিন বাড়বে দুর্নীতি। 


সরোজমিন দিয়ে দেখা যায়, ফ্রেম অ্যাপারেন্স নীট কোম্পানির যে এলাকা সেই এলাকা অন্য ডিভিশনের। ঠিক এই ভাবে নারায়গঞ্জের প্রতিটি ডিভিশনে ঘুরে ঘরে কাজ করেন শ্যামপুর ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন। ডিপিডিসিতে এই কর্মকর্তার রয়েছে একাধিক দালাল। আর এই দালালদের নেতৃত্ব দিচ্ছে নারায়ণগঞ্জের কবির। মূলত এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম খানপুর, মিশনপাড়ায় হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের শিল্পাঞ্চলের যেকোন বিদ্যুৎ সংক্রান্ত কোন সমস্যা হলে তা আসান হয়ে যায় এই কর্মকর্তার মাধ্যমে।


ডিপিডিসির বিভিন্ন ডিভিশনের একাধিক নির্বাহী প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই কর্মকর্তা প্রতিদিনিই কোন না কোন বিদ্যুৎ সংযোগের তদবির করে। আর তদবির যদি কেউ না রাখে তখন তার উপর নেমে আসে অনিয়মের অভিযোগ। মূলত এই কর্মকর্তার সাথে রয়েছে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের সক্ষতা। আর এই সক্ষতাকে পুঁজি করেই দিনে দিনে তিনি হয়ে উঠেছেন অনেক ক্ষমতাধর। 


সূত্র আরও জানায়, সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) সোনা মনি চাকমার সাথে রয়েছে তার বিশেষ সক্ষতা। আর এই সক্ষতাকেই পুঁজি করে মাঈন উদ্দিন ডিপিডিসির বিভিন্ন স্তরে বদলি বাণিজ্য করে হয়েছেন সম্পদশালী। 


সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ডিপিডিসির কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর যদি অনিয়ম নিয়ে কোন অভিযোগ উঠে তা সেটেলম্যান করার জন্য মাঈন উদ্দিনের জুড়ি নেই। এক কথায় বলতে হয় টাকা হলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।


 সূত্র আরও জানায়, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত টানা ৪ বছর ফতুল্লা ডিভিশনে নির্বাহী প্রকৌশলী দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তিনি রামরাজত্ব্য কায়েম করেছিলেন। সূত্র আরও জানায়, তৎকালীন সময় ফতুল্লা ডিভিশনে বেশ কয়েকটি বড় বিদ্যুৎ সংযোগ এক্সপ্রেস ফিডারে না করে ডিপিডিসির ১১ কেভি লাইনে সরাসরি সংযোগ দিয়ে ডিপিডিসির বিপুল অঙ্কের টাকা রাজস্ব বঞ্চিত করেন। পরবর্তীতে তিনি শ্যামপুর ডিভিশনে ২৩ আগস্ট ২০২২ থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত কর্মরত রয়েছে। 


শ্যামপুর ডিভিশনে গত দুই দিন সরজমিনে পরির্দশনকালে তাকে তার দপ্তরে পাওয়া যায়নি। ঐ সময় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি কখন আসেন আর কখন চলে যায় তা কেউ বলতে পারেনি। পরিদর্শনকালে ঐ ডিভিশনে সেবা নিতে আসা বেশ কয়েকজন গ্রাহকের কথা বলতে গেলে তারা জানান, বিদ্যুৎ বিলের কিস্তি ও নতুন সংযোগ নিতে গ্রাহকরা তাৎক্ষনিক সেবা পাচ্ছে না। ঐ ডিভিশনে আরও দেখা যায়, ডিভিশন চত্বরে স্থানীয় দালাল ও ডিভিশনের কিছু কর্মচারী গ্রাহকদের বিভিন্ন হয়রানি করে অর্থ নিচ্ছে। 

শ্যামপুর ডিভিশন থেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, নির্বাহী প্রকৌশলী সারাদিনই ডিপিডিসির প্রধান কার্যালয় আর ডিপিডিসির বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বেড়ায় বিভিন্ন রকম সংযোগের কাজ নিয়ে। তাই ডিভিশনে তিনি সময় দিতে পারেন না। তাহলে ডিভিশন কে চালায় ঐ সূত্রকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, মূলত শ্যামপুর ডিভিশনটির পরিচালনা করে নির্বাহী প্রকৌশলীর অধীনস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা। ঐ কর্মকর্তা কারা সূত্রকে প্রশ্ন করলে তিনি নাম বলতে অস্বীকৃতি জানান। গত দুই দিনের পরিদর্শনে দেখা গেছে, টাকা হলেই যেকোন কাজ করা যায় শ্যামপুর ডিভিশনে।


এ প্রসঙ্গে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (এডমিন এন্ড এইচ আর) সোনা মনি চাকমাকে ফোন দিলেও তিনি ফোন কেটে দেন। এমকি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে উত্তার পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে ডিপিডিসির শ্যামপুর ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিনকে ফোন দিলে তিনি রিসিপ করেনি। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান ড. ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। দুর্নীতিবাজদের শান্তি দিন, দেখবেন দুর্নীতি কমে যাবে। এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের(টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি বন্ধ করতে সমাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। না হলে দিন দিন বাড়বে দুর্নীতি। চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। 

 

এ ব্যাপারে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ নোমান বলেন, ঘটনা সম্পর্কে যেনে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নিবো। তিনি আরো বলেন, একজন নির্বাহী প্রকৌশলী আলাদা করে ব্যবসা করার সুযোগ নাই। প্রমান পেলে ছাড় দেওয়া হবে না।


জেবি/এসবি