কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৪শ বছর আগের ঐতিহাসিক চান্দামারী মসজিদ
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩:৫৩ অপরাহ্ন, ১৪ই নভেম্বর ২০২৪
কুড়িগ্রামের রাজারহাটের ঐতিহাসিক চান্দামারী মসজিদ। এ মসজিদটি মোঘল আমলে প্রায় ৪’শ বছর আগে নির্মাণ করা হয় বলে কথিত রয়েছে। স্থাপত্যের নিপুণ কারুকার্যে নির্মিত চান্দামারী জামে মসজিদ আজও তার স্ব-স্থানে মাথা উঁচু করে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বাস চাপায় প্রাণ গেল মোটরসাইকেল চালকের
যদিও মসজিদটি অনেক পুরোনো। তবুও এ মসজিদটি এখনও অক্ষত রয়েছে। এখনও এ মসজিদের নামাজ আদায় করেন এলাকার তথা দূর দুরান্ত থেকে আসা মুসল্লিগণ। এ মসজিদটি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। এটি উপজেলার চান্দামারী মন্ডলপাড়া গ্রামের মাঝে অবস্থিত।
এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ মসজিদটি মোট ৫১ শতাংশ জমির উপর নির্মিত হয়। প্রায় ৪০০ বছর আগে মোঘল আমলে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে তাদের ধারণা। ভারতের বাবরী মসজিদ ও বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের সঙ্গে চান্দামারী মসজিদটির যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে। ঐতিহ্য ও স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে আজও ভগ্ন দশায় দাঁড়িয়ে আছে এ মসজিদটি। এখানে গম্বুজ সংখ্যা কম হলেও সৌন্দর্যে কোনও অংশে কম নয়। তিন গম্বুজ এবং তিন মেহেরার বিশিষ্ট ইট, সুরকী দ্বারা সুনিপুণ কারুকার্যে নির্মিত এ ধরনের মসজিদ জেলার কোথাও দেখা যায় না।
আরও পাড়ুন: জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে কুড়িগ্রামে র্যালি ও সভা
মসজিদের পুরো অবকাঠামোটির দৈর্ঘ্য ৪৫ ফুট এবং প্রস্থ ২২ ফুট। চারদিকে বাউন্ডারি ওয়াল বেষ্টিত এবং ৬০ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন মসজিদটি বিভিন্ন কারণে এখন তার সেই জৌলুস নেই। মসজিদটি অত্যন্ত দৃষ্টিন্দন হওয়ায় অনেক মানুষ এমনিতে যেমন দেখতে আসেন তেমনি নামাজ আদায় করতেও আসেন। বহুকালের পুরোনো ভবন হওয়ায় পুরনো কারূকাজ অনেকটা নষ্ট হওয়ার পথে। দুই একটি অংশে গাঁথুনি ভেঙে গেছে কিংবা লোনা ধরেছে। পুরো অবকাঠামোটি এখন ধ্বংসের সম্মুখীন।
এদিকে, মসজিদ কমিটি ও স্থানীয়দের উদ্যোগে মুসল্লিদের কথা চিন্তা করে জায়গার সংকুলান করতে বাইরেও একটি শেড করা হচ্ছে। বর্তমানে বর্ষাকাল হওয়ায় কিছুটা নামাজ পড়তে সমস্যা হয় মুসল্লিদের। দেয়াল বেয়ে বৃষ্টির পানি জমে যায় মসজিদের ভেতর। এরপরও এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ওই পানিতে কষ্ট করে নামাজ ও এবাদত বন্দেগি করে আসছেন।
গ্রামের লোকজন গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির হওয়ায় তারা মসজিদটি সংস্কারে কোনও উদ্যোগ নিতে পারছেন না বলে জানা গেছে। চান্দামারী মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাকির হোসেন চৌধুরী জানান, রাজারহাট উপজেলায় মোঘল আমলে নির্মিত মসজিদগুলোর মধ্যে চান্দামারী মসজিদটি জেলার সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। এর কিছু কিছু জায়গায় নষ্ট কিংবা ক্ষয়ে গেলেও এখনও এর সৌন্দর্য রয়েছে।
এ এলাকায় এখন জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মুসল্লিদের সংখ্যাও অনেকটা বেড়েছে। ফলে গাদাগাদি করে কষ্ট করে সকল মুসল্লিকে নামাজ আদায় করতে হচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকটের কারনেব এ মসজিদটি পুণঃনির্মাণ কিংবা ভালোভাবে সংস্কার করা যাচ্ছে না। তবে এলাকাবাসীর দাবি এতো সুন্দর একটি মসজিদ সংরক্ষণে সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এমনকি অতি দ্রুত এর স্মৃতি সংরক্ষণে স্থানীয় প্রশাসনসহ জেলা প্রশাসন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহায়তায় অতীত ঐতিহ্য ধরে রাখতে সংস্কারের উদ্যোগ নিতে পারেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ফিরলো রমনা মেইল ট্রেন
এ ব্যাপারে রাজারহাট উপজেলার (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশাদুল হক জানান, উপজেলার চান্দামারী মসজিদটি অত্যন্ত প্রাচীন ও দৃষ্টিনন্দন। এখানে অনেক পুরাকীর্তি ধ্বংস হওয়ার পথে। এগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি। এজন্য এ মসজিদসহ রাজারহাটের প্রাচীন স্থাপনাসমূহের স্মৃতি সংরক্ষণের বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, সরকারের পর্যটন মন্ত্রণালয় ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে অতি দ্রুত এ মসজিদটির ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করে প্রেরণ করা হবে।
এসডি/