Logo

মুর্তিমান আতঙ্কের নাম ধনঞ্জয়

profile picture
জনবাণী ডেস্ক
২৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২২:৫৪
55Shares
মুর্তিমান আতঙ্কের নাম ধনঞ্জয়
ছবি: সংগৃহীত

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্টেনোগ্রাফার শ্যালিকা লাবণী সূত্রধর

বিজ্ঞাপন

# পুলিশের বদলি, পদায়ন তার হাতের মুঠোয়

# ‘ত্রিভ’ ফ্যাশন হাউজের মালিক স্ত্রী শ্রাবণী

# হাসিনা সরকারকে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা ছিল তার

বিজ্ঞাপন

# স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্টেনোগ্রাফার শ্যালিকা লাবণী সূত্রধর

# আমার অবৈধ সম্পদ নেই

 -ধনঞ্জয় কুমার দাস, যুগ্ম সচিব

বিজ্ঞাপন

ধনঞ্জয় কুমার দাস। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ক্ষমতাধর কর্মকর্তা। আমলা হলেও তার হাত অনেক লম্বা। তিনি পারেন না, এমন কোনো কাজ নেই। যুগ্মসচিব পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা ঘুষ দুর্নীতিতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা। তবে অনেক ক্ষেত্রেই মন্ত্রীর চেয়ে প্রভাবশালী তিনি।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক উস্কানির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। হাসিনা সরকারের আমলেই এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তার এমন বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাতে নানাভাবে চেষ্টা করেছেন ধনঞ্জয়। এমনকি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমন করতে নিজেই মাঠে নেমেছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অধিশাখার দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস। 

বিজ্ঞাপন

২০২২ সালের ১০ এপ্রিলে সরকারের একটি গোপন প্রতিবেদনে ধনঞ্জয় কুমার দাস সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তিনি চরম দুর্নীতিগ্রস্ত ও কট্টর ইস্কনপন্থী। তিনি ২০১৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জননিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত। পুলিশ নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য করে তিনি বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন। ২০১৯ সালে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগে ১০ জনের নিকট থেকে এক কোটি টাকা নেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।’ 

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডে জড়িত টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিতেন ওই সময়ে। তার দুর্নীতির বিষয়ে ওই প্রতিবেদনে ‘জনশ্রুতি রয়েছে’ উল্লেখ আরও তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার কুয়ালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফাস্ট সেক্রেটারি থাকাকালে সেখানে সেকেন্ড হোম তৈরি করেছেন। বাড়ি কিনেছেন কানাডায়। তার অবৈধ আয়ের অর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন।

বিজ্ঞাপন

ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, পদোন্নোতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের লোকদের তিনি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের কভার পোস্টিংয়ে কর্মরত গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সখ্যতা রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মাশিয়াল কাউন্সেলর ও প্রথম সচিব পদে প্রার্থী ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস। ওই সময়ে তার জীবন বৃত্তান্ত যাচাই সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

বিজ্ঞাপন

তারপর কেটে গেছে দীর্ঘদিন। ধনঞ্জয় এখন যুগ্ম সচিব। পুলিশের বদলি, পদায়ন তার হাতের মুঠোয়। এছাড়াও জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে মূল ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তিনি। শেখ হাসিনা সরকারকে টিকিয়ে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল তার। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমন করতে আগস্টের শুরুতে দুই দিন তাকে রাজপথে দেখা গেছে। পরবর্তীতে সরকারের পতনের পর দেশব্যাপি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন ধনঞ্জয়। গোয়েন্দা সূত্রমতে, হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে স্বামীবাগ থেকে বিপুল লোকজন সমবেত হয়েছিলেন শাহবাগে। এক্ষেত্রে নেপথ্যে থেকে যারা কলকাঠি নেড়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ধনঞ্জয় কুমার দাস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ধনঞ্জয় থাকতেন জগন্নাথ হলে। পদ-পদবি না থাকলেও সক্রিয় ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। লহ্মীপুরের সন্তান ধনঞ্জয়ের সঙ্গে ইস্কনপন্থীদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। দেশব্যাপি জালের মতো বিস্তৃত এই সিন্ডিকেটের মূলহোতা তিনি। পুলিশে ‘গোপালীদের’ চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে শক্তিশালী তার সিন্ডিকেট। 

বিজ্ঞাপন

আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের সিন্ডিকেটের হয়ে অবাধে ঘুষ বাণিজ্য করেছেন ধনঞ্জয় কুমার দাস। এই সিন্ডিকেটের আর্শীবাদ ছাড়া পুলিশের কেউ কোন জেলায় বা গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন পেতেন না। জেলা পুলিশ সুপার পদায়নের ক্ষেত্রে ১ থেকে ৩ কোটি টাকা নিতো এই সিন্ডিকেট। ওসিদের ক্ষেত্রে থানা অনুসারে ১৫ লাখ থেকে দেড় কোটি পর্যন্ত বাণিজ্য করার তথ্য রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এক তারকা নারী সাংবাদিকের সঙ্গে রয়েছে ধনঞ্জয় কুমার দাসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ধনঞ্জয়ের স্ত্রী শ্রাবণী সূত্রধর জলিকে এটিএন নিউজে সংবাদ পাঠিকা হিসেবে চাকরি দিয়েছিলেন ওই নারী সাংবাদিক। কাওরানবাজার এলাকায় তারা বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পূজা পালন করতেন। সেখানে উপস্থিত হতেন ধনঞ্জয় কুমার দাসসহ সিন্ডিকেটের অনেকেই। বর্তমানে তারা কেউ ওই টেলিভিশনে কর্মরত নেই। স্বামীর বদৌলতে অত্যন্ত বিলাসী জীবনযাপন করেন শ্রাবণী সূত্রধর জলি। প্রায়ই ঘুরে বেড়ান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বনানীর ১৩ নম্বর সড়কে ‘ত্রিভ’ নামে একটি ফ্যাশন হাউজের মালিক শ্রাবণী। সূত্রাপুর, নিকেতনসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসা করেছেন ধনঞ্জয়। ধনঞ্জয়ের প্রভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে চাকরি করছেন শ্যালিকা লাবণী সূত্রধর।

জানা গেছে, একাধিক বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়িসহ বিপুল সম্পদের মালিক ধনঞ্জয় কুমার দাস। ছেলে সৌভিক দাস জয়কে লেখাপড়া করাচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মালয়েশিয়াতে তার বিপুল সম্পত্তি রয়েছে বলে জানা যায়। 

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে ধনঞ্জয় কুমার দাস বলেন, আমার অবৈধ সম্পদ নেই। থাকলে দুদক খুজে বের করুক। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হয়নি এই কর্মকর্তা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD