দুদকের কর্মকর্তা পরিচয়ে ফেসবুক লাইভে চাঁদাবাজি, গ্রেফতার ৩


Janobani

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬:৫৬ অপরাহ্ন, ৬ই জানুয়ারী ২০২৫


দুদকের কর্মকর্তা পরিচয়ে ফেসবুক লাইভে চাঁদাবাজি, গ্রেফতার ৩
ছবি: সংগৃহীত

দুদকের ভুয়া কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা, জরিমানা ধার্য ও আদায়, চাঁদাবাজির অভিযোগে 'দুর্নীতি নিবারণ সহায়ক সংস্থা' নামে একটি প্রতারক চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করতে এসে তিনজন প্রতারক হাতেনাতে গ্রেফতার হয়েছেন।


সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচা দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকেই তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ওই তিন প্রতারকসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মামলা দায়ের করা হয়।


বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেন দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, ভুয়া পরিচয়দানকারী দুদক কর্মকর্তাদের আটকের পর তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে নেয় প্রতারক চক্রের দুই সদস্য। পরে তাদের স্বীকারোক্তি রেকর্ড করে অজ্ঞাত আট আসামিসহ চৌদ্দ জনের নামে পল্টন থানায় একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করা হয়।


আরও পড়ুন: ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ই-পাসপোর্ট পুরোপুরি চালু করা হবে


গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন, কথিত ‘দুর্নীতি নিবারণ সহায়ক সংস্থার’ নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম সম্রাট, সংস্থার পরিচালক (অপারেশন) মো. রায়হান ওরফে সৈয়দ রায়হান, নেত্রকোনার সাইফুল ইসলাম। এছাড়াও মামলার অন্য অভিযুক্তরা হলেন পটুয়াখালীর বাসিন্দা সোলাইমান মুফতি, সিয়াম মাহমুদ মোবারক, হবিগঞ্জের রনি আহেমদ পায়েল এবং অজ্ঞাত পরিচয়ে আরও আটজন।


দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, সরকারি কর্মচারী না হয়েও পরস্পর যোগসাজশে সরকারি কর্মচারীর ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রতারণার আশ্রয়ে দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ভয় ভীতি প্রদর্শন করে এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরসহ দুই শতাধিক বেসরকারি স্থানে আইন বহির্ভূত অবৈধ অভিযান পরিচালনা করেন। জরিমানা ধার্য ও আদায়, চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক মীমাংসা নামে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ এবং ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা, বিকৃত ও মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করেন।


আসামিরা দণ্ডবিধি, ১৮৬০ -এর ৩৮৫/৪১৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৫০৬/৩৪ ধারা এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ এর ২৪/২৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।


মামলার এজাহারে বলা হয়, এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাত আসামিগণ ভুয়া দুদক পরিচয় দিয়ে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে কমিশনের নির্দেশিত হয়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। আসামি মো. রায়হান ওরফে সৈয়দ রায়হান এর নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র ‘দুর্নীতি নিবারণ সহায়ক সংস্থা’ (ঠিকানা: ৮৫ নয়া পল্টন (৪র্থ তলা), নামীয় দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুরূপ প্রতিষ্ঠান তৈরি করে দুদকের সহযোগী বাহিনী পরিচয় প্রদান করে নানাবিধ প্রতারণা করে থাকেন। দুদকের অনুরূপ তাদের নিজস্ব লোগো সংবলিত ইউনিফর্ম, ছবিযুক্ত আইডি কার্ড পরিধানপূর্বক বিভিন্ন সরকারি দপ্তরসহ দুই শতাধিক বেসরকারি স্থানে আইন বহির্ভূত অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযান পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ/ভুক্তভোগী জনগণের কাছ থেকে চাঁদা দাবি অন্যথায় দুদকে অভিযোগ দেওয়া এবং অভিযান পরিচালনাকালে বিনা অনুমতিতে ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম Syed Rayhan, syed rayhan official, এবং ইউটিউব আইডি। (১) আইনের চোখ/ Syed Rayhan,  বিকৃত তথ্য প্রচার করে ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকি প্রদান ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে।


আরও পড়ুন: আইনের বাইরে কোন কাজ করা যাবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা


এজাহারে বলা হয়, গত ১১ নভেম্বর হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দুদকের ছদ্মবেশ ধারণ করে অভিযান পরিচালনা করে কর্তব্যরত সরকারি কর্মচারীদেরকে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে মো. সাইফুল ইসলামসহ কয়েকজনকে তাৎক্ষণিক বিচারের নামে আইনবহির্ভূতভাবে জন প্রতি ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন এবং তা নিজেরাই আত্মসাৎ করেন। এখন পর্যন্ত চক্রটি সর্বমোট ১৫৩টি স্থানে অভিযান পরিচালনাসহ সর্বমোট দুই শতাধিক স্থানে প্রকাশ্যে বিচারের নামে চাঁদাবাজি করেছে।


দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে ১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নগদ ও বাকিতে প্রায় ৫ লাখের বেশি টাকা চাঁদাবাজি করার কথা স্বীকার করেছেন।


এমএল/