মেঘনা পেট্রোলিয়ামের দুর্নীতির মহারাজা ইনাম ইলাহী চৌধুরী
বশির হোসেন খান
প্রকাশ: ১১:৪০ পূর্বাহ্ন, ১৫ই জানুয়ারী ২০২৫
# নওফেলকে ম্যানেজ করে লুটপাট সিন্ডিকেট
# ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের অর্থ দাতা
# চট্টগ্রামের চাঁদগাওয়ে ৫ তলা আবাসিক ভবন
# জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত
-ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি
# দুর্নীতিবাজ যেই হোক ব্যবস্থা নিতে হবে
- ড. ইকবাল মাহমুদ সাবেক চেয়ারম্যান,দুদক
মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড বাংলাদেশ সরকারের একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে কতিপয় কর্মকর্তা মিলে একটি শক্তিশালী দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল-কে ম্যানেজ করে লুটপাট চালাতো সিন্ডিকেটটি। এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা হচ্ছে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (এইচ আর) চঃ দাঃ মোহাম্মদ ইনাম ইলাহী চৌধুরী। তাকে কোম্পানির বিভিন্ন অপকর্মে সহযোগিতা করে সিবিএ সেক্রেটারি মো. হামিদুর রহমান। এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা পার্সেজ শাখায় কাজ করার মাধ্যমে দুর্নীতি করে চট্টগ্রামে চাঁদগাও আবাসিক এলাকায় ৫ তলা বিশিষ্ট বিলাস বহুল ভবন নির্মাণসহ চট্টগ্রামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সে কোম্পানিতে কেরানি পদে চাকরিতে যোগদান করে। কিন্তু আওয়ামী লীগের শাসন আমলে কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তার কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে খুব দ্রুত পদোন্নতি বাগিয়ে নেয়। বর্তমান পদে আসার পরে সে দুর্নীতির রাজা থেকে মহারাজা হয়ে গেছে, সাথে নিজের আওয়ামী লীগের খোলসও পাল্টিয়েছে। খোলস পাল্টিয়ে সে এখন কোম্পানিতে টেন্ডার কমিটির আহবায়ক হয়ে টেন্ডারে দুর্নীতিসহ পদোন্নতি ও নিয়োগ বাণিজ্য করে যাচ্ছে। কিছু দিন ই-টেন্ডার দুর্নীতি নিয়ে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি গনমাধ্যমে নিউজ হলেও তার প্রভাবের কারণে কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গহণ করতে পারেনি। সম্প্রতি বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পদে কর্মচারী ও শ্রমিকের ১৪৭ জনের বিশাল জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডে। এতো লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি অত্র কোম্পানি ইতিহাসে কখনো হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের আওয়ামী লীগের সময়ের এই প্রভাবশালী কর্মকর্তা জেনারেল ম্যানেজার (এইচ আর) চঃ দাঃ মোহাম্মদ ইনাম ইলাহী চৌধুরী এবছর অবসর গ্রহণ করবে বলে, তড়িঘড়ি করে নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করে কোটি টাকা হাতিয়া নেয়ার উদ্দেশ্যে কতৃপক্ষের মাধ্যমে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। মূলতো কোম্পানিতে মাস্টার রোলে অর্থাৎ যারা জিই-০১ এ কর্মরত আছেন, তাদের চাকুরী স্থায়ীকরণের জন্যই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন, কোম্পানিতে থার্ড পাটির মাধ্যমে কর্মরত কয়েকজন অস্থায়ী শ্রমিক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অস্থায়ী শ্রমিক অভিযোগ করে বলেন, মূলত জি-১ ভুক্ত লোকজনকে নেয়ার জন্য এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। তারা বলেন, শুনেছি জি-১ লোকজন ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা অগ্রীম দিয়ে জিএম (এইচ আর) সাথে চুক্তি করেছে। এখানে জিএম (এইচ আর) সহযোগী হিসেবে কাজ করচ্ছে সিবিএ সেক্রেটারি হামিদ সাহেব। কারণ উনিই এই মাস্টার রোল নিয়ন্ত্রণ করেন। এই মাস্টার রোলে নিয়োগ পাওয়ার জন্য আবার হামিদ সাহেবকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। আর এই হামিদ সাহেব জিএম (এইচ আর) সিন্ডিকেটের লোক। তারা প্রায় সময়ই একই গাড়িতে চলাফেরা করেন। তারা অভিযোগ করে আরো বলেন, এই জিএম (এইচআর) একজন মহা দুর্নীতিবাজ লোক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, তারা দৈনিক ৪৫০ টাকা মজুরি ভিত্তিতে চাকরি পান। অথচও এই চাকরির জন্য একেকজনকে ২ লাখ, দেড় লাখ টাকা এই ইনাম সাহেবের সিন্ডিকেটকে দিতে হয়। কিন্তু দেখা যায় যে এই সিন্ডিকেট এতো মানুষকে নিয়োগ দিয়েছে যে বসার জায়গা পাওয়া যায় না। এই সিন্ডিকেট আশ্বাস দিয়েছে তাদের চাকরি কিছু বছর পর স্থায়ী করা হবে। এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অনেক পরিবারের ২ থেকে ৪ জন চাকরি করছেন। অনেকের পরিবারে পাঁচ থেকে সাতজন অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করছেন।
এ ব্যাপারে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন্স) মো. মফিজুর রহমান বলেন, আমি এই বিষয় কিছু বলতে পারবো না। আপনি তার সঙ্গে কথা বলেন।
এ ব্যাপারে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের এমডি মো. টিপু সুলতান বলেন, আমি কোনো বক্তব্য দিবো। অভিযোগ রয়েছে এমডি টিপু সুলতানের আশ্রায় প্রশ্রায় এ সব কর্মকান্ড করছেন জেনারেল ম্যানেজার (এইচ আর) চঃ দাঃ মোহাম্মদ ইনাম ইলাহী চৌধুরী।
এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান ড. ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি বন্ধ না হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই দুর্নীতিবাজ যে হউক তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অনিয়ম, দুর্নীতির সঙ্গে যে বা যারা জড়িত তাদের বের করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। দুর্নীতি থাকলে দেশে সুশাসন থাকবে না।
এ ব্যপারে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (এইচ আর) চঃ দাঃ মোহাম্মদ ইনাম ইলাহী চৌধুরীর সঙ্গে বার বার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেননি, এমনকি খুদে বার্তা পাঠিয়েও উত্তর কোন মেলেনি।
আরএক্স/