সুনামগঞ্জে বাঁধে বাঁধে ফাটল, আতঙ্কে হাওরপাড়ের লাখো কৃষক


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


সুনামগঞ্জে বাঁধে বাঁধে ফাটল, আতঙ্কে হাওরপাড়ের লাখো কৃষক

সুনামগঞ্জের শাল্লায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধে বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে ফসল ডুবির আতঙ্কে রয়েছেন উপজেলার লাখো কৃষক। 

বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার বরাম হাওর উপ প্রকল্পের আওতায় ২৫ নং পিআইসির বাঁধটি চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। 

জানা যায়, সঠিকভাবে দুরমুজ না করায় বাঁধ হেলে যাচ্ছে উত্তর দিকে। অনেকটা ফুলেফেঁপে উঠেছে বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশটুকু। এতে বড় বড় ফাটল ধরেছে ওই বাঁধে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এই বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাবে বরাম হাওরের হাজার হাজার হেক্টর বোরোজমি। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দিরাই-শাল্লা উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্ররামের কৃষক। ১৪ নং পিআইসির বাঁধেও ফাটল দেখা দিয়েছে। ফাটল দেখা দিয়েছে ভান্ডাবিল ৩নং পিআইসি ও ১০ নং পিআইসির বাঁধেও। নিম্নমানের কাজ হওয়ায় আরো অনেক বাঁধেই এধরণের ফাটল দেখা দিয়েছে। 

এরআগে বুধবার (৬ এপ্রিল) উপজেলার ছায়ার হাওর উপ প্রকল্পের ৯০ নং পিআইসির বাঁধে ধস নেমে বাঁধ ভাঙার উপক্রম দেখা দেয়। বাঁধে নিচ দিয়ে পানি ঢুকতে থাকে ছায়ার হাওরে। এতে উপজেলার হাজারো নারী-পুরুষ ও শিক্ষার্থীদের আপ্রাণ চেষ্টায় কোনো রকমে রক্ষা করা যায় বাঁধটি। সারারাত স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেন এলাকাবাসী। এসব বাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় উপজেলাজুড়ে কৃষকদের মাঝে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। হতাশ হয়ে পড়েছেন খোদ্ প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পিআইসির লোকজনই।

৯০নং পিআইসির সভাপতি ও সদস্য সচিবকে বাঁধে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি তাকে। 

২৫ নং পিআইসির সভাপতি স্বাধীন সরকার বলেন, বৃষ্টি হলে আমার বাঁধ ঠিকবে না। এই বাঁধ ভেঙে গেলে বরাম হাওর তলিয়ে যাবে। আমি এসওকে বলেছিলাম আমার বাঁধের পেছনে বাঁশের আড়ি দেওয়ার জন্য। তিনি বলেছেন আড়ি লাগবে না। 

এবিষয়ে পাউবো'র উপ সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, বৃষ্টি হলে কোনো বাঁধই রক্ষা করা যাবে না। বাঁধের পেছনে নয়, সামনে আড়ি দেওয়ার নিয়ম আছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব দিনরাত বাঁধের তদারকি করছেন। যেসমস্ত বাঁধে ঝুঁকি রয়েছে ছুটে যাচ্ছেন তিনি। 

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের ব্যাপারে তিনি বলেন, যখন যে বাঁধে যা প্রয়োজন আমরা পিআইসিদের নির্দেশনা দিয়েছি। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। 

অন্যদিকে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুদ্দোহার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও ফোন রিসিভ করেননি। পরে নিজেই ফোন করেন এ প্রতিবেদকের নাম্বারে। বৃষ্টির বিষয়টি মাথায় নিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি কেনো-এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর না দিয়েই সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি। 

উল্লেখ্য, এ উপজেলার কৃষকরা সারা বছর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একমাত্র ফসল বোওরোধান আবাদ করেন। এই বোরো ফসলের উপরই নির্ভরশীল হারাঞ্চলের মানুষ। একমাত্র আয়ের উৎস এই ফসল। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে সংসারের যাবতীয় খরচ মেটানো হয় এই ফসলের ধান বিক্রি করে। অনেকই চড়াসুদে টাকা এনে বোরোজমি চাষ করেছেন। আবার অনেক দরিদ্র কৃষক বর্গাচাষ করেছেন। ফসল ঘরে না উঠলে এসব কৃষকরা অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে হবে। এবছর ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে উপজেলার ৮৭ কিঃমিঃ বাঁধ মেরামতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৪ কোটি ৪০লাখ টাকা। উপজেলার ৬টি হাওরে (পিআইসি) প্রকল্প কমিটি গঠন করা হয়েছে ১৩৮টি।

এসএ/