মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড টেন্ডার জালিয়াতির মাস্টার ইনাম


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ১২:৩৭ অপরাহ্ন, ১৯শে জানুয়ারী ২০২৫


মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড টেন্ডার জালিয়াতির মাস্টার ইনাম
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া।

# গত তিন বছরে ৯১ টেন্ডার

# ফারদিন বিল্ডার্সের অভিযোগ 

# কাজ পাচ্ছেন পছন্দের ঠিকাদার


টেন্ডার জালিয়াতি করে চট্টগ্রাম মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (এইচআর) অঃদাঃ ইনাম ইলাহী চৌধুরী কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে জালিয়াতির মাষ্টার হিসেবে আখ্যা পেয়েছেন তিনি। এই জালিয়াত চক্রের নেপথ্যে রয়েছে আরো দুই কর্মকর্তা। 


অভিযোগ সূত্র বলছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২১ কাজের জন্য দুটি পদ্ধতিতে দরপত্র আহবান করে। এরমধ্যে ২০টি ‘উন্মুক্ত দরপত্র’ পদ্ধতির (ওটিএম) মাধ্যমে এবং একটি টেন্ডার ‘ওএসটিইটিএম’ পদ্ধতিতে করা হয়।


ওটিএম দরপত্রে নিয়ম অনুযায়ি যেসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ গ্রহণ করবে, তারা শিডিউলের মোট মূল্যের ১০ ভাগ অর্থ কম বা বেশি দেখিয়ে দরপত্র দাখিল করে থাকেন। এক্ষেত্রে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ইনাম ইলাহী চৌধুরীর যোগসাজশে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে গোপন করা হয় শিডিউলের প্রকৃত মোট মূল্যের অংকের পরিমাণ। এতে মোট অংকের ১০ ভাগ অর্থ কম বা বেশি দেখিয়ে দরপত্র দাখিল করেও কাজ পাইনি  অনেক প্রতিষ্ঠান। তাদের কৌশলের ফাঁদে পড়ে টাকা খরচ করে শিডিউল কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক ঠিকাদার। 


অভিযোগ রয়েছে, সরকারি স্বায়ত্বশাসিত মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (এইচআর) ইনাম ইলাহী চৌধুরী কৌশলের মারপ্যাচে’ পড়ে নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বারবার কাজ পেয়েছে। পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে দরপত্রের কাজটি পাইয়ে ওই কর্মকর্তার পকেটে কোটি টাকারও বেশি। 


মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের গত তিন বছরের ৯১ টেন্ডারের তথ্য বলছে- ‘ওএসটিইটিএম’ পদ্ধতিতে ১৯ টি দরপত্র আহবান করা হয়েছে। আর পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে অর্থের বিনিময়ে কাজ পাইয়ে দিতে বাকী টেন্ডারগুলো হয় ওটিএম পদ্ধতিতে। এর মাধ্যমে এম.এস ইসলাম এন্টারপ্রাইজ পেয়েছে ৯টি কাজ। এমএস আরিয়ানা ট্রেডিং,সামুদা কনটেইনার্স লিমিটেড ৫টি করে কাজ পেয়েছে। এছাড়া টি.এস এন্টারপ্রাইজ, সু-কন্যা এন্টারপ্রাইজসহ বেশ কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওই অসাধু কর্মকর্তাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। যেকারণে ঘুরে ফিরে একই প্রতিষ্ঠানগুলো বারবার কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে হাজার হাজার টাকা খরচ করে তাদের কৌশলের কারণে দরপত্রে অংশ গ্রহণ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে অনেক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।


এই ঘটনায় একটি প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডারের কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. টিপু সুলতানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ফারদিন বিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।


ওই চিঠি বলা হয়, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ঝালকাঠী ডিপোর বিভিন্ন কাজের একটি দরপত্রে অংশগ্রহণ করে ফারদিন বিল্ডার্স। দরপত্রের মোট মূল্য দেখানো হয় ৫২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ওটিএমের নিয়মে মোট মূল্য অনুযায়ী দরপত্র দাখিল করা হয়। কিন্তু দরপত্র খোলার পর দেখা যায় অফিশিয়ালি দরপত্রের মোট মূল্য ছিল ৫২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৯ টাকা। অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দরপত্রের এই প্রকৃত হিসাব আগে থেকে জেনে যাওয়ায় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজটি পেয়েছে টি.এস এন্টারপ্রাইজ।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন, ইনাম ইলাহী চৌধুরীর কৌশলে পছন্দের ঠিকাদারদের কাছ দিচ্ছি। আর এই জন্য তিনি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই বিষয় এমডিকে জানালেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। তাই নিদিষ্ট ঠিকাদার ছাড়া অন্য কেউ পায় না।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের জিএম (এইচআর) মো. ইনাম ইলাহী চৌধুরীকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও উত্তর পাওয়া যায়নি।  


মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের এমডি মো. টিপু সুলতান বলেন, সরাসরি এসে কথা বলুন। না হলে আমি ফোনে কথা বলবো না। 


আরএক্স/