মেঘনা এমডি টিপু’র ঘুষের দোকান


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ০৫:১৭ অপরাহ্ন, ২৭শে জানুয়ারী ২০২৫


মেঘনা এমডি টিপু’র ঘুষের দোকান
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া ।

# 'মধু’র নেশায় একই জায়গায় বছরের পর বছর

# সংবাদ ঠেকাতে সাংবাদিককে হুমকি ধামকি     

# সিন্ডিকেটের ছোবলে অনিয়মের স্বর্গরাজ্য


# আইনের আওতায় আনতে হবে

-ড. ইকবাল মাহমুদ সাবেক চেয়ারম্যান, দুদক



মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ঘাটে ঘাটে দুর্ণীতির জাল বিছিয়ে রেখেছেন এমডি মো. টিপু সুলতান। বদলি ও পদোন্নতিতে অনিয়ম এবং ভোক্তাদের নিম্নমানের জ্বালানি সরবরাহসহ মেঘনা পেট্রোলিয়ামে এমডি টিপু সুলতান খুলে বসেছে ঘুষের দোকান। অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন ডিপোর বেশ কিছু কর্মচারী একই জায়গায় এক যুগেরও অধিক সময় পার করে দিয়েছেন। এমডি টিপুকে 'ম্যানেজ' করেই তারা একই জায়গায় বছরের পর বছর কর্মরত থেকে গড়ে তুলেছেন অনিয়মের স্বর্গরাজ্য। একই সঙ্গে তারা নিজস্ব সিন্ডিকেট তৈরি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। আর জনপ্রতি এমডির পকেটে যাচ্ছে ১০ লাখ টাকা। আর এর সুফলে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে অনেকই রয়েছেন পদোন্নতির তালিকায়।


সূত্র বলছে, মেঘনা পেট্রোলিয়ামের গোদনাইল ডিপো’র সাবেক ইনচার্জ ম্যানেজার (অপারেশন) মো. লুৎফর রহমান ছিলেন ৯ বছর। এমডি’র আস্থাভাজন অঘোশিত ক্যাশিয়ার হিসেবে লুৎফর আছেন ডিজিএম (ঢাকা)  । আবার পদোন্নতির জন্য রয়েছে এমডি’র গুড বুকে। ফতুল্লার ডিপো ইনচার্জ জিয়াউল হক একই কর্মস্থালে ৪ বছরের অধিক সময় ধরে চাকরি করছেন। ভৈরব ডিপোর নাজিম উদ্দিন। এক চেয়ারেই তিনি পার করেছেন প্রায় ৫ বছর। ঢাকার ইপিওএল ডিপোর মনিরুল বাশার একবার চার বছর থেকে বদলি হয়ে আবার ১৫ দিন পরে এই কর্মস্থালে। এ ছাড়া ইপিওএল ডিপোর জি-১ মিটারম্যান সারোয়ার বদলি হলেও সেই বদলি বাতিল করতে ১০ লাখ টাকায় রফাদফা হয়েছে। এদিকে অনেক কর্মীদের স্থায়ী করে লাখ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এমডি টিপুর বিরুদ্ধে।


অনুসন্ধানে চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে। মেঘনার ২১টি ডিপোতে বিভিন্ন স্তরের বেশ কয়েকজন কর্মচারী রয়েছেন, যাঁরা একই জায়গায় একই পদে কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাত বছর পর্যন্ত কর্মরত। এর বাইরে, ১০ বছর, ১১ বছরও কাজ করছেন কেউ কেউ। একই জায়গায় দীর্ঘদিন থাকা এই কর্মচারীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তেল চুরির মহোৎসব মেতে উঠে। আর এই চোরের নেতৃত্বে খোদ কোম্পানীর এমডি মো. টিপু সুলতান। তেল চুরির টাকার ৪০ শতাংশ যায় টিপুর পকেটে।  এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা অবৈধভাবে মালিক হয়েছেন বিপুল অর্থবিত্তের। 


সিন্ডিকেটের কাছে কোম্পানীর অনেক শীর্ষ কর্মকর্তারাও জিম্মি! এদের অনেকে নানা বাহনা করে একই জায়গায় বহু বছর ধরে চাকরি করে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোন পদক্ষেপ নিতে সাহস করেন না। কেননা তারা নিয়মিত এমডি টিপুর পকেটে মাসোয়ারা দিয়ে আসছেন। এতে করে ওই সমস্ত ডিপোতে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে। জানা যায়, ডিপোর ইনচার্জদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে জেনারেল ম্যানেজার (এইচ আর)  মো. ইনাম ইলাহী চৌধুরী ও ডিজিএম (ঢাকা) মো. লুৎফর রহমানের সঙ্গে। আর এই ডিপো থেকে মাসোয়ারাও কালেকশন করেন লুৎফর রহমান। তিনি এমডি টিপু সুলতানের অঘোষিত ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন। এতে ধীরে ধীরে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছেন এই দাপুটে কর্মকর্তা লুৎফর। সবমিলিয়ে ওই সব ডিপোতে অনিয়মের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিপো কর্মচারী বলেন,  যোগ্যতার দাম নেই। টাকা দিলেই মেলে পদোন্নতি কিংবা বদলি। কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তাকে প্রাইজ পোষ্টিং দেওয়া হয়। বর্তমান এমডির সিন্ডিকেট টাকা ছাড়া কিছু বুঝে না। 


এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেঘনার এক ডিপো কর্মকর্তা বলেন, মাঝখানে আমার একবার বদলির আদেশ হয়েছিলো। লুৎফর স্যারকে টাকা দিয়েছি। সে এমডি স্যারকে ম্যানেজ করে আমাকে একই স্থানে রেখেছে।

 

চট্টগ্রামে এক ডিপো কর্মকর্তা বলেন, এমডি স্যারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো। তাই দীর্ঘ দিন ধরে আছি একই কর্মস্থলে। এতে আপনার সমস্যা কি। আমাদের ভালো সাংবাদিকরা দেখতে পারে না বলে মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।

 

এ ব্যাপারে মেঘনা পেট্রোলিয়ামে এমডি মো. টিপু সুলতানকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বরং তিনি নানা ধরনের লোক দিয়ে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। যাতে করে আর নিউজ না করা হয়। এ ভাবে প্রতিনিয়তই এমডির পক্ষ থেকে প্রতিনিধিরা হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।   

 

এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান ড. ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতিবাজ যতই শক্তিশালী হউক তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। না হলে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। 


এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতিবাজদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। দুর্নীতিবাজদের কঠোর শান্তি দিতে হবে। না হলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না।