টিএন্ডটি লেবারের দুর্নীতি পর্ব-২
শ্বশুর-জামাতার দুর্নীতির অর্থে সফল বাণিজ্য!
বশির হোসেন খান
প্রকাশ: ১২:০৫ অপরাহ্ন, ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫
![শ্বশুর-জামাতার দুর্নীতির অর্থে সফল বাণিজ্য!](https://janobani.com/big_image/1739253909.jpg)
# সংবাদ প্রকাশ করার স্বাদ মিটিয়ে দেওয়ার হুমকি
# নির্মিত ভবনের কোনোটিতেই মানা হয়নি রাজউকের বিল্ডিং কোড
# “ব্যবসার সিংহভাগ অর্থের যোগান তার এই জামাতার”
"আবাসন খাতের মাফিয়া" কুখ্যাতি পাওয়া টিএন্ডটির সাবেক কর্মচারী নুরুল হকের একাধিক অবৈধ প্রতিষ্ঠান ও অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জনের সংবাদ প্রকাশের পর বাড্ডা এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। ওই এলাকার মানুষেরা তাদের আশপাশে এত বড় দুর্নীতিবাজ ঘাপটি মেরে থাকার খবরে বিস্মিত। এই দুর্নীতিবাজ সাবেক কর্মচারীর সম্পদের অনুসন্ধানপূর্ব দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন সকলে। এদিকে, নুরুল হকের সম্পদ খুঁজতে গিয়ে মিলেছে পিলে চমকানো তথ্য। মাত্র ৬/৭ বছরে তিনি বাড্ডা ও আশপাশের এলাকায় গড়েছেন ৩৮টি ভবন। এর মধ্যে ৩০টির কাজ সম্পন্ন, বাকিগুলোর নির্মাণ চলমান।
সেসব ভবনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- উত্তর বাড্ডায় তাকওয়া টুইন টাওয়ার, এএম জেড হসাপাতালের পেছনে ১৫ কাঠা জমির ওপর ১০ তলা ভবন। উত্তর বাড্ডায় নাসিমা মনজিল, একতা রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া। সাড়ে তিন কাঠা জমিতে পাঁচতলা ভবনের প্লান পাস করিয়ে গড়েছেন ৮ তলা ভবন। উত্তর বাড্ডার স্বাধীন সরণিতে ১৬ কাঠা জমির উপর এনজি হাইটস নামে ১০ তলা ভবন। একই এলাকায় শান্তি নিকেতনের ময়নার বাগ বউবাজার এলাকায় সাড়ে ১০ কাঠা জমির উপর ১১ তলা ভবন। উত্তর বাড্ডার বউবাজার এলাকায় ১২ কাঠা জমির উপর তাকওয়া নেক্সজেন নামে ১১ তলা ভবন। যেটির কাজ এখনও চলমান।
বউবাজারের পাশে ১২ কাঠা জমিতে পদ্মা টাওয়ার নামে দশ তলা ভবন। মেরুল বাড্ডা আনন্দ নগর সার্জেন্ট টাওয়ারের সামনে তিনটি ভবনের কাজ চলমান, প্রত্যেকটি দশ তলা করে। আনন্দনগর সুপারমার্কেটের পাশে রয়েছে ১০ তলা ভবন। উত্তর বাড্ডায় সেলিমের বাড়ির সামনে সাত কাঠা জমি কিনে ও ১ কাঠা দখল করে ৮ কাঠার ওপর ১০ তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। তাকওয়া টুইন টাওয়ারে দুইটা ভবনের প্ল্যান নিয়ে একটি ভবন নির্মাণ করেছেন। এছাড়া আফতাব নগরে একাধিক প্লট এবং জলসিড়ি প্রজেক্টে দুইটা প্লট রয়েছে তার।এসব সম্পদের বিষয়ে খোঁজ নিতে সরেজমিনে গেলে সত্যতা মিলেছে। বেশ কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ফুটেজও আছে দৈনিক জনবাণীর হাতে।
এই সম্পদের বিষয়ে নুরুল হকের মুঠো ফোনে একাধিবার কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বরং তিনি বিভিন্ন লোক দিয়ে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। যাতে করে প্রকাশিত সংবাদ অনলাইন সংস্করন থেকে সরিয়ে পত্রিকার মাধ্যমে প্রতিবাদ দেওয়া হয়। না হলে মামলা দেওয়াসহ তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন তারা। এ বিষয় আর কোনো প্রকার সংবাদ প্রকাশ করলে প্রতিবেদককে তুলে নিয়ে গিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার স্বাদ মিটিয়ে দিবেন বলে হুমকি দেন নুরুল হকের শুভাকাক্সক্ষীরা।
নুরুল হকের ব্যবসা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তার প্রতিষ্ঠান দ্বারা নির্মিত ভবনের কোনোটিতেই মানা হয়নি রাজউকের বিল্ডিং কোড। গায়ের জোরে অবৈধভাবে নিয়ম ভেঙে গড়েছেন এসব ভবন। বর্তমানে তিনি উত্তর বাড্ডায় নিজের গড়া ভবনে বাস করেন এবং কাছেই গড়ে তোলা অন্য একটি ভবনে ব্যবসায়ীক অফিস রয়েছে তার।
নুরুল হকের ঘনিষ্ঠ সূত্রের ভাষ্যমতে, তার মেয়ে জামাতা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বর্তমানে মেহেরপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। ৩৩ তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন পতিত আওয়ামীর লীগ সরকারের সময়ে। তিনি বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে স্বৈরাচার সরকারের অবৈধ ও অনৈতিক মিশন বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছেন।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের ডামি নির্বাচনের সময়ে তিনি সাভারের ধামরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে বিতর্কিত নির্বাচন সম্পন্ন করতে ভূমিকা রেখেছেন। ওই নির্বাচনের পরপরই তিনি পুরস্কার হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। এর আগে ২০২০ সালের দিকে তিনি আশুলিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) থাকাকালে ভূমি মালিকদের জিম্মি করে ব্যাপক অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন বলে অভিযোগ আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্র দাবি করেছে, নুরুল হকের আবাসন ব্যবসার সিংহভাগ অর্থের যোগান তার এই জামাতা দিয়েছেন। তিনি এসিল্যান্ড থাকার সময়েই নুরুল হকের ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠে। জামাতা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালে এক সময় নুরুল হক নিজ গাড়িতে ম্যাজিস্ট্রেট স্টিকার লাগিয়ে চলাফেরা করতেন বলে এলাকার অনেকে জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নুরুল হকের জামাতা সাজ্জাদ ২০১৪ সালে যশোরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালে তার বিরুদ্ধে স্ত্রী কারিনী তনিমা আহমেদ নির্যাতনের মামলা করেছিলেন। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ক্ষমতার মেয়াদে অনিয়ম-দুর্নীতি করেও সেই কর্মকর্তা বহাল তবিয়তে এখনো চাকরি করায় বিস্মিত খোদ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, এ সব তথ্য ভিত্তিহীন, যদি প্রমাণ দিতে পারেন তাহলে আমার কিছু করার নেই। যারা ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করছে আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিবো।
আরএক্স/