সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা

তিন বছর ধরে সহকারী দিয়ে চলছে মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১:২০ পূর্বাহ্ন, ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫


তিন বছর ধরে সহকারী দিয়ে চলছে মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম
ফাইল ছবি।

তিন বছর ধরে নেই সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। তবে শারিরীক ভাবে তিনিও অসুস্থ। 


এদিকে উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার পদে থাকা শ্যামল কুমার রায় বকশিগঞ্জ উপজেলায় রয়েছেন সংযুক্তিতে। যার ফলে বৃহত্তর এ উপজেলার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে উপজেলা প্রশাসনের।


উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও মাদ্রাসা নিয়ে সর্বমোট ৫৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যেকোন প্রয়োজনে একমাত্র ভরসা অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটারের দায়িত্বে থাকা শংকর পদ পাল।


রীতিমত অভিভাবক হীনতায় মুখ থুবড়ে পড়েছে এ উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থা। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা এবং প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবে দিন দিন কমছে শিক্ষার মান। এ সমস্যা উত্তরণে শূন্য পদ পূরণ করতে জোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা।


উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে সরকারি ও বেসরকারি মিলে মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে ৫১টি, সরকারি কলেজ ১টি, বেসরকারি কলেজ ৬টি, কারিগরি কলেজ ১টি এবং দাখিল ও আলিম মিলে মোট ১০টি মাদ্রাসাসহ সর্বমোট ৫৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।


এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ে ১৯ হাজার ৫৭৫ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছেন। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, দাখিল ও আলিম মাদ্রাসা এবং কারিগরি কলেজে আরো প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় তিন বছর ধরে এ উপজেলায় নেই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। নেই একাডেমিক সুপার ভাইজার। তাই অফিস সহকারী দিয়েই চলছে গুরুত্বপূর্ণ এই শিক্ষা দপ্তর।


জানা গেছে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম বদলি হয়ে চকুরিয়া উপজেলায় যান। পরে কিছুদিন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তীতে তাহিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রমা কান্ত দেবনাথ ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে গোয়াইনঘাটে বদলি হলে তাকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বভার দেওয়া হয়। এতে তাকে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে। এদিকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বদলি হওয়ার তিন বছর অতিবাহিত হলেও গোয়াইনঘাটবাসী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার শিক্ষা সেবা থেকে এখন পর্যন্ত বঞ্চিত রয়েছে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা না থাকার কারণে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকরা। নিরুপায় হয়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে যেতে হচ্ছে অফিস সহকারীর কাছে।


গোয়াইনঘাট সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা গত ৫ মাস ধরে অসুস্থ। স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে গেছে। এতে বিরাট সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে এর আগে এত সমস্যা ছিল না।


উপজেলা মাধমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ৭টি পদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ শূণ্য থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে গোয়াইনঘাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর শংকর পদ পাল বলেন, তিন বছর ধরে এ উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নেই। উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রমা কান্ত দেবনাথ শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তিনিও শারিরীক ভাবে অসুস্থ।


এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা না থাকায় ব্যাপক ভাবে সেবা ব্যহত হচ্ছে। বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। সমস্যাসংকুল এ উপজেলার শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছেনা। 


ইউএনও জানান, শুধু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস নয়, প্রত্যেকটি অফিসেই লোকবল সংকট রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সৃষ্ট শূণ্য পদ পূরণ হওয়া প্রয়োজন।


এ ব্যাপারে সিলেট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গোয়াইনঘাটে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা আছেন। অন্যান্য উপজেলায় তো তাও নেই। লোকবল নাই। আমরা চাহিদা জানিয়ে রেখেছি। আশা করছি ব্যবস্থা হবে।


আরএক্স/