আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রাণোচ্ছল একুশে বইমেলা


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭:৫১ অপরাহ্ন, ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫


আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রাণোচ্ছল একুশে বইমেলা
ছবি: সংগৃহীত

আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দিনটির সঙ্গে একই সূত্রে গাঁথা প্রাণের বইমেলা। তাইতো প্রতি বছর শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দলে দলে মেলা প্রাঙ্গণে ভিড় করেন বিভিন্ন বইপ্রেমীরা। অবশ্য বইপ্রেমীর চেয়ে মেলার দর্শনার্থীর সংখ্যাই যেন বেশি। লাখো দর্শনার্থীর প্রাণোচ্ছল উপস্থিতিতে যেন বইয়ের ক্রেতার দেখা মেলাই ভার। বিক্রয়কর্মী ও প্রকাশকরা বলছেন, বইমেলায় দর্শনার্থীর ভিড় অনেক বেড়েছে, তবে বেশির ভাগই স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, পরে চলে যাচ্ছেন। 


শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বইমেলার ২১তম দিনে মেলা প্রাঙ্গণের চিত্র এটাই। এদিন সকাল ৭টায় মেলা শুরু হওয়ায় তখন থেকেই মানুষের উপস্থিতি ছিল নজরে পড়ার মতো। পরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীদের আগমন বেড়েছে কয়েকগুণ।


এদিন বিকেলে বইমেলা ঘুরে দেখা যায়, দর্শনার্থীরা সেজেগুঁজে, পাঞ্জাবি-শাড়ি পরে দলবেঁধে মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকছেন। তারা বিভিন্ন স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। কেউ কেউ কোনো স্টল বা প্যাভিলিয়নের সামনে বই হাতে নিয়ে ছবি তুলছেন, করছেন ভিডিও। কিন্তু এরপর বই না কিনেই তারা বিদায় নিচ্ছেন। বিক্রয় কর্মী ও প্রকাশকদের মতে, গতবছরও পাঠকের এমন খরা ছিল না।


আরও পড়ুন: ভাষা শহীদদের প্রতি বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের শ্রদ্ধা নিবেদন


চন্দ্রদ্বীপ প্রকাশনীর এক বিক্রয় কর্মী বলেন, মেলায় এত এত মানুষ আসছেন কিন্তু বিক্রি তেমন হচ্ছে না। গত বছরও এমন পরিস্থিতি ছিল না। এবার সবাই এসে শুধু ছবিই তুলছেন, এরপর চলে যাচ্ছেন।


সময় প্রকাশনের এক বিক্রয় কর্মী বলেন, মানুষ দেখলে ভালো লাগে। ভাবি তারা হয়ত বই কিনতে আসবেন। কিন্তু না, তারা আমাদের প্যাভিলিয়নের সামনে আসেন, ছবি তোলেন, আবার চলেও যান। খুব কম দর্শনার্থী বই কেনেন।


এ এইচ প্রকাশনীর প্রকাশক শাহ আলম বলেন, গত বছর অনেক বেশি বিক্রি হয়েছে কিন্তু এ বছর তেমন বিক্রি হচ্ছে না। মেলায় যেমন মানুষ হচ্ছে সে অনুযায়ী বিক্রি নেই বললেই চলে। মানুষ বইয়ের প্রতি দিন দিন যেন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।


বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত বইমেলায় ২০তম দিনে সর্বমোট নতুন বই এসেছে ১ হাজার ৯১০টি। এর মধ্যে শুধু বৃহস্পতিবারই মেলায় বই এসেছে ১১২টি।


বইমেলায় এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে সর্বাধিক এসেছে কবিতার বই। এ পর্যন্ত ছয়শোর বেশি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। তবে কেনার ক্ষেত্রে পাঠকদের অপছন্দের তালিকায়ও অন্যতম কবিতার বই। কবিতার বইয়ের মান কমে যাওয়ায় পাঠকরা কবিতার বইয়ের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে মেলায় দর্শনার্থীদের পছন্দের বইয়ের মধ্যে উপন্যাস, থ্রিলার, সায়েন্স ফিকশন, সাহিত্য, অনুবাদধর্মী বই উল্লেখযোগ্য।


আরও পড়ুন: মাতৃভাষার গুরুত্ব না বুঝলে এসডিজি অর্জন সম্ভব নয়: প্রধান উপদেষ্টা


মেলায় কথা হয় বেশ কয়েকজন দর্শনার্থীর সঙ্গে। তাদের মধ্যে রিফাত নামে একজন বলেন, এখন অনলাইনে সব বই কমবেশি পাওয়া যাচ্ছে। তাই মেলায় সেভাবে বই কেনা হয় না। 


পরিবার নিয়ে বইমেলায় আসা ‎ফারিহা জামান নামে একজন বলেন, এর আগেও একবার এসেছিলাম, তবে আজ বেশি ভালো লাগছে। চারদিকেই একুশের আবহ বিরাজ করছে। ভাষা দিবসের বিভিন্ন আয়োজন খুব উপভোগ করছি।


কয়টা বই কেনা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলে, আসলে বই পড়ার তেমন সময় হয় না।    


মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আজ বইমেলা শুরু হয় সকাল ৭টা থেকে। শেষ হবে রাত ৯টায়। তবে ৮টার পর কোনো দর্শনার্থীকে মেলায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।


এমএল/