মশুরীখোলা দরবার শরীফে হযরত ক্বেবলা শাহ আহসানুল্লাহ (রহ.)’র ১৫৫তম পবিত্র ওরস মোবারক পালিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাজধানী নারিন্দায় ঐতিহ্যবাহী মশুরীখোলা দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা হযরত ক্বেবলা শাহ আহসানুল্লাহ (রহ.)’র ১৫৫তম পবিত্র ওরস মোবারক পালিত হয়েছে। গদ্দিনিশীন পীর সাহেব- আলহাজ্ব আল্লামা শাহ্ মুহাম্মাদ আহসানুজ্জামান (মা.জি.আ.)’র সভাপতিত্বে মশুরীখোলা দরবার প্রাঙ্গণে মশুরীখোলা আঞ্জুমানে আহসানিয়া বাংলাদেশের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় (২০ ফেব্রুয়ারী) বৃহস্পতিবার ওরশ মোবারক অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে মশুরীখোলা দরবার শরীফের পীর সাহেব আলহাজ্ব আল্লামা শাহ্ মুহাম্মাদ আহসানুজ্জামান (মা.জি.আ.) বলেন, শাহ্ সূফি আহসানুল্লাহ (রহ.) ছিলেন আধ্যাতিক জগতের দীপ্তমান একজন সূর্য সন্তান । বাংলা ও আসামের হাজারো মানুষ তাঁর সংশ্রব ও শিক্ষা নিয়ে সিরাতুল মুস্তাকিমে দিশা লাভ করেন। ফরায়েজী আন্দোলনের নেতা মুহাম্মদ মুহসীন উদ্দীন দুদু মিয়ার বেজুম্মা দলের নির্মম অত্যাচার বন্ধ ও পুনরায় বাংলার জনপদে জুমা নামাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শাহ্ সূফি আহসানুল্লাহ (রহ.)’র অবদান ছিলো অনস্বীকার্য।
তিনি আরো বলেন, এদেশের ৯২% মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাস সংস্কৃতিকে উপেক্ষা কোনভাবেই মেনে নেয়া হবেনা। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সকল জনগোষ্ঠির নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহবান আমাদের। ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্বতন্ত্রতার রক্ষা করেই আধুনিকায়ন করতে হবে। দেশে ইসলাম প্রচার প্রসার হয়েছে হক্কানি তরিকতের পীর ওলিদের মাধ্যমে। সুতরাং বর্তমান চতুর্মূখী ফেতনা ও মুসলিমসমাজ দ্বীনের প্রতি উদাসীনতার পরিস্থিতিতে আউলিয়াগণের আদর্শ অনুসরন করাই ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তির একমাত্র উপায়”। লক্ষাধিক ভক্ত আশেকানদের উপস্থিতিতে তিনি সরকারের কাছে উদাত্ব আহবান জানিয়ে বলেন, মুসলমানদের পবিত্র আত্মশুদ্ধির মাস; পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্য মূল্য ঊর্ধ্বগতি রোধ করে পণ্যসামগ্রীর দাম নির্ধারণ উচিত। যেন সমাজের বিত্তশালীদের মতো অল্প আয়ের মানুষরাও স্বাচ্ছন্দ্যে সিয়াম পালন করতে পারে।
সভাপতির বক্তব্য তিনি বলেন, ক্রমাগত মাযারের হামলা দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপনের নীল নকশার অংশ। সুফিদের মাজার-দরগাহ বাংলাদেশের ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ। শতাব্দীর পর শতাব্দী দরে এই উপমহাদেশে ইসলামের হুকুম-আহকাম প্রচারে পীর আউলিয়াদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ মধ্যে দিয়ে ইসলামের ইতিহাস থেকে সুফিয়ানে কেরামের অবদানকে মুছে ফেলার যাবে না।
পরিশেষে তিনি বলেন, পবিত্র এই দরবার শরীফে তরিকা গ্রহণ করে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা শরীয়তের পথে পরিচালিত হচ্ছে। তাদের অনেকেই এখন হাফেজ, মাওলানা, মুফতি হয়েছে। সুতরাং আলোর দিশা ছড়িয়ে দেওয়া এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র মেনে নেয়া হবে না। আউলিয়া ও তাদের আশেকানদের উপর নির্বিচারে হামলার চেষ্টা করা হলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। একইসাথে দেশের এসব প্রতিষ্ঠান রক্ষায় সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন দরবার শরীফের পীর সাহেব।
এসময় জাকেরীনদের জিকির আযকার তালিম প্রদান করেন শাহ্জাদা মাওলানা হাফেজ শাহ্ মুহাম্মদ সাইফুজ্জামান এরফান। এতে বক্তব্য রাখেন,অধ্যক্ষ মুফতি কাজী আবু জাফর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, উপাধ্যক্ষ মুফতি আবুল কাশেম ফজলুল হক,ডক্টর মোহাম্মাদ আনোয়ার হোসাইন সাইফী, সহ-অধ্যাপক মাও. আবুল বাশার, মাও. গোলামুর রহমান আশরফ শাহ্, পীর মাও. আহমদুল হুদা খান, মাও. মুফতি মঈন উদ্দিন হেলাল, মাও. তাওহীদুল ইসলাম, মাও. জিয়াউর রহমান আবু শাহ, মাওলানা নেয়ামত উল্লাহ আল কাদেরী,। উক্ত অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম, প্রখ্যাত বুযুর্গ, বরেণ্য শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবি, সাহিত্যিক, কবি, সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন। খতমে কুরআন, দরসে হাদিস, দরবার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহের শিক্ষার্থীদের মাঝে ইসলামিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরুষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে ওরসের মাহফিল আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে সারারাত হক্কানি ওলামায়ে কেরাম ও পীর-মাশায়েখদের বয়ান, নসিহত, যিকির, তাহাজ্জুদ নামায, মিলাদ-ক্বিয়াম, তাবারুক বিতরণ এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে দোয়া কামনায় মুনাজাত পরিচালনা করে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
আরএক্স/