নিষিদ্ধ সংগঠনের সাবেক নেতা পলাশের নিয়ন্ত্রণে ওএমএস, টিসিবিসহ অর্ধশত লাইসেন্স


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০:১১ অপরাহ্ন, ৬ই মার্চ ২০২৫


নিষিদ্ধ সংগঠনের সাবেক নেতা পলাশের নিয়ন্ত্রণে ওএমএস, টিসিবিসহ অর্ধশত লাইসেন্স
ছবি: প্রতিনিধি

* টিসিবি, ওএমএস,সারবীজ, ফেয়ার প্রাইজসহ ৫০ টি লাইসেন্স নিয়ন্ত্রণে।

* বিভিন্ন এতিমখানা মাদ্রাসা দেখিয়ে অফিস সহায়ক মনিরের যোগসাজশে কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাৎ। 

* পিতার ভূয়া  ক্যান্সার দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুদান। 


নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা পলাশের নিয়ন্ত্রণে ওএমএস,  টিসিবিসহ প্রায় অর্ধশত লাইসেন্স।  সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন অঞ্জলে বিডিএস সার বীজ, টিসিবি, ওএমএস  , ফেয়ার প্রাইজ সহ ৫০ টি লাইসেন্স নিয়ন্ত্রণ করে  মাফিয়া আব্দুর রব পলাশ।  আব্দুর রব পলাশ পেশায়  ছিলেন  প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক ও তালা উপজেলা শ্রমিক লীগের প্রভাবশালী আহবায়ক। তার পিতা  রফিকুল বিশ্বাস স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা।  ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তৎকালীন এমপি ইঞ্জিনিয়ার মুজিবর রহমান ও মুস্তফা লুৎফৎল্লার ছত্রছায়ায় আব্দুর রব পলাশ  সরকারি টিসিবি, ওএমএস, ফেয়ার প্রাইজ ও বিএডিসি সার বীজের প্রায় ৫০ টি লাইসেন্স করে নিজের পরিবার আত্মীয়-স্বজনের নামে। কাগজে কলমে  দাদা দাদীর নামে  ভূয়া এতিমখানা দেখিয়ে  সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে বিগত কয়েক বছরে প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা বরাদ্দ নিয়েছে যাহার সরজমিনে কোন অস্তিত্ব নেই। পিতা রফিকুল বিশ্বাসের নামে ভূয়া ক্যান্সার দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুদান নিয়েছে।  একসময় নুন আনতে -পান্তা ফুরানো আব্দুর রব পলাশ সিন্ডিকেট করে  জিরো থেকে রাতারাতি বর্তমানে সে প্রায় ২০-৩০  কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছে । 


অনুসন্ধানে খোঁজ মিলছে তার নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রায় ১০-১৫ টি টিসিবির লাইসেন্স। নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে তার নিজের নামে দুইটি টিসিবি লাইসেন্স করেছে । একটি পাটকেলঘাটা বাজারে মুন ট্রের্ডাস অপরটি আশাশুনি কুল্লা গুনগরকাটিতে মের্সাস রাদ এন্টারপ্রাইজ।


তাছাড়া তার নিয়ন্ত্রণে পরিবারের নামে রয়েছে  তালা উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়নে তার আপন ছোট ভাই স্বর্ণ ছিনতাই মাললার চাকরিচ্যুত পুলিশের এএসআই আব্দুর রউফ পল্টুর শালা জাহিদ হাসানের নামে মের্সাস জাহিদ স্টোর,  খেশরা  ইউনিয়নে বড়কাশিপুর  মেঝ -শালী শিরিনার  নামে মের্সাস আলিফ ট্রের্ডাস ,   


সাতক্ষীরা সদর উপজেলা  ধুলিহরে খালাতো ভাই হাবিবুর রহমানের নামে মের্সাস হাবিব ষ্টোর, ধুলিহরের গোবিন্দপুরে মামা রবিউলের নামে মের্সাস মাওয়া ষ্টোর, ব্রক্ষরাজপুরের মাছখোলায় খালু মোক্তার আলীর নামে মের্সাস আবিদ মুদিখানা ষ্টোর।


আশাশুনি  উপজেলার শোভনালী বদরতলাবাজারে  ছোট ভাই আব্দুর রউফের নামে মের্সাস মাছুরা ষ্টোর,


টিসিবি লাইসেন্স ছাড়া তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে  আলীপুরে দুটি  ওএমসএস লাইসেন্স, লাবসায় মের্সাস হাবিব এন্টারপ্রাইজ নামে একটি  ওএসমএস লাইসেন্স, পাটকেলঘাটা বাজারে ২ টি বিএডিসি সার বীজ লাইসেন্স।  পাটকেলঘাটা বাজারে সারবীজের লাইসেন্স দুটি ভাড়ায় পরিচালিত করে একটি কেশবসাধু অপরটি তুলসী সাধু। 


আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় সিন্ডিকেট করে গড়ে তোলা  এসকল লাইসেন্স  নিয়ন্ত্রণ করে শ্রমিক লীগ   নেতা আব্দুর রব পলাশ।  কাউকে মাসিক একটা নামমাত্র টাকা দিতেন আবার কাউকে আওয়ামী লীগের ভয় দেখিয়ে হুমকি দিতেন। 


আব্দুর রব পলাশ নিষিদ্ধ সংগঠন  ছাত্রলীগ নেতা প্রভাবশালী নেতা  ছিলেন। সর্বশেষ তালা উপজেলা শ্রমিক লীগের আহবায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছে। ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তালা উপজেলা শ্রমিক লীগের আহবায়ক হিসাবে আওয়ামী লীগের  দলীয় প্রতীক নৌকা চেয়ে মনোনয়ন ক্রয় করেন । আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন।সে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে  বিভিন্ন দপ্তরে  নিয়োগ বাণিজ্য করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। 


তাছাড়া পলাশের নিয়ন্ত্রণে কুমিরা হাটবাজার, বিনেরপোতা মাছ বাজার ও পাটকেলঘাটা কাঁচাবাজার ইজারা  বরাদ্দ রয়েছে।   এসকল হাটবাজারের বরাদ্দ নিয়ম না মেনে  জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান  নজরুল ইসলামের সাথে যোগসাজশে টাকার বিনিময়ে ইজারা নিয়েছে।  


তার নামে ক্রয়কৃত সরুলিয়া ও  আশাশুনির কাঁদাকাটিতে কয়েক একর  কৃষি জমি মালিকাধীন রয়েছে। একাধিক প্রেট্রোল পাম্পের শেয়ার ও  রাবেয়া এন্টারপ্রাইজ নামে কয়েকটি ১০ চাকার  বড় ট্রাক  রয়েছে। এসকল অবৈধ সম্পদ গড়েছে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে সংসদ সদস্য মুস্তাফা লুৎফুল্লাহ ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নজরুল ইসলামের ছত্রছায়ায়।


৫ই আগষ্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর গা ঢাকা দিয়েছে শ্রমিক লীগ নেতা  আব্দুর রব  পলাশ।  কিন্তু তার সকল অবৈধ ব্যবসা বহাল তবিয়তে পরিচালনা করছে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে। গত এক সপ্তাহ আগে  তালা উপজেলার ইউএনও অফিসের অফিস সহায়ক মনিরের  যোগসাজশে বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা,মন্দির এতিমখানার নামে ৩০-৪০ টি অনুদানের আবেদন করেছে জেলা প্রশাসকের তহবিল থেকে অনুদান নেওয়ার জন্য। বিগত কয়েক বছর ধরে তালার উপজেলার সকল সরকারি বরাদ্দ ভূয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে মনিরের যোগসাজশে পাসের্ন্টে অনুদান নেন আব্দুর রব পলাশ।


এবিষয়ে অভিযুক্ত  শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুর রব পলাশোর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি এড়িয়ে যান। সাংবাদিকদের বক্তব্য প্রদানে অপরগতা প্রকাশ করেন। ব্যস্ত আছি বলে ফোন রেখে দেন।


তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  শেখ রাসেল বলেন, আব্দুর রব পলাশের  বিষয় টা শুনছি  আমি খতিয়ে দেখব। আমার অফিসের কেউ বরাদ্দ আত্মসাৎ  জড়িত থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নিব।


এসডি/