ধরলার ড্রেজিংয়ে কমেছে ভাঙ্গন বাড়ছে কৃষি উৎপাদন


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:১৪ অপরাহ্ন, ২৬শে মার্চ ২০২৫


ধরলার ড্রেজিংয়ে কমেছে ভাঙ্গন বাড়ছে কৃষি উৎপাদন
ছবি: সংগৃহীত

ভারতে থেকে আসা পানি কারণে প্রতিবছর ধরলা নদী ভাঙ্গন ও বন্যায় প্লাবিত হয় হাজার হাজার ঘর বাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 


ভাঙ্গনের কারণে অসহায় হয়ে পড়তো নদী পাড়ের হাজার হাজার মানুষ। নদী ভাঙ্গনে বাড়ি ভিটা জমি হাড়িয়ে খোলা আকাশের নিচে জীবন যাপন করতে হতো অনেক মানুষকে। তবে এখনো ভাঙ্গন ও বন্যার কবলে পড়তে হচ্ছে ধরলা পাড়ে মানুষকে। কিন্তু বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) অধিনে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় কুড়িগ্রাম জেলার ধরলা নদীর খনন ও ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের কারণে গত এক বছর ধরে নদীর দুই পাশে ভূমি উন্নয়ন ও নদীর তীর রক্ষার জন্য ড্রেজিংকৃত ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ফেলানোর ফলে নদী ভাঙ্গন ও বন্যায় প্লাবিত হওয়ার সম্ভবনা অনেকাংশে কমে গেছে।


নদীর দুই পাশের জমি গুলোতে তরমুজ, বাদাম. ভুটা, মিষ্টি কুমড়া ও মরিচসহ বিভিন্ন ধরনে কৃষি ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে আবার নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সাথে স্থানীয় এলাকাবাসীর আর্থ ও সামাজিক অবস্থার উন্নতি সাধিত হয়েছে। 


আরও পড়ুন: ৯০ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ যাচাই চলছে: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা


কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ অঞ্চলে প্রতি বছর বন্যায় কৃষিতে ক্ষতি হয় প্রায় ২৭ কোটি টাকা।  বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে ৭ উপজেলার ১৩ হাজার ১৩৭ জন কৃষক। এতে করে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ কোটি টাকা। ধরলা নদী ড্রেজিং করার ফলে অনেক এলাকায় ফসল  উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।


কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের সিতাই ঝাড় এলাকার কৃষক ছমির আলী জানান, নদী ড্রেজিংগের কারণে আমার এক বিঘা জমির পটলের আবাদ ভালো হয়েছে। এখনও বাড়ির চারিদিকে জমি জেগে উঠেছে। একই এলাকার কৃষক মোস্তাফা বলেন, আগে বানের পানিতে চাষের জমি তলিয়ে যেতো। বীজতলা করার সময় পাওয়া যেতো না। এবার তেমন ক্ষতি হয়নি। আবাদ করতে চিন্তা করতে হয়নি। তবে ধরলা পুরো নদী ড্রেজিং করা দরকার। এটি হলে আরো ফসল বাড়বে।


কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রতি বছর বন্যায় কৃষিতে ক্ষতি হয় প্রায় ২৭ কোটি টাকা। ধরলা নদী ড্রেজিং করার ফলে অনেক এলাকায় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।


জানা যায়, ধরলা নদী বাংলাদেশের আন্তঃ সীমান্ত নদীগুলির মধ্যে একটি। এই নদীর মূল চ্যানেলের উৎপত্তি ভারতের কুচবিহারে। এটি পাটগ্রামের চ্যাংড়াবান্ধা হয়ে লালমনিরহাটের মোগলহাট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ধরলা ব্রহ্মপুত্র নদের একটি উপনদী। কুড়িগ্রাম জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ধরলা নদীর ভাঙনের ফলে প্রতিবছর যে পরিমাণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা ভাবনার অতীত। এ নদীর দু ধার ও আশপাশের গ্রামগুলোতে যারা বসবাস করেন তাদের অধিকাংশ কৃষক, জেলে, খেটে খাওয়া দিনমজুর।


আরও পড়ুন: চীনে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস


প্রতি বছর বন্যার সময় নদীভাঙনের ফলে মানুষের বসতবাড়ি, গ্রাম, জমিজমা ভেঙে একাকার হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে দারিদ্র্যের হার। নদীটি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ির কাছে ব্রহ্মপুত্রের সাথে মিলিত হয়েছে। নদীর ডানতীরে কুড়িগ্রাম শহর। নদীটির দৈঘ্য ৬০ কিলোমিটার এবং গড় প্রশস্থ ১.২ কি.মি। ধরলা নদী আকার গতভাবে খুব গতিশীল এবং প্রকৃতিগতভাবে ক্রমাগত তার গতিপথ পরিবর্তন করে। এ নদী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি, সদর এবং উলিপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।


অভ্যন্তরীণ নৌ-পথের গুরুত্বপূর্ণ ৪ টি নদীতে সারাবছর পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান উভয় নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে চলাচল করার লক্ষ্যে নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে খননসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পাদন করছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। ধরলা নদীর ড্রেজিং সংক্রান্ত বিষয়ে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।


এভায় ধরলা নদীর ড্রেজিং কাজ দ্রুত শুরু করার লক্ষে ড্রেজিংকৃত মাটি-বালি ধরলা নদীর উভয়তীরে বাপাউবোর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে, খাস জমিতে এবং নীচু জমিতে স্তুপ রাখার বিষয়ে মতামত জানানো হয়। পরে সে আলোকে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর থেকে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বিআইডব্লিউটিএ মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে ২টি প্যাকেজে ৭টি লটে ৭টি বেসরকারী কোম্পানীর মাধ্যমে ধরলা নদীর ড্রেজিং কাজ শুরু হয়েছে।


প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অফ ওয়াটার মডেলিং সার্বক্ষনিক খনন কাজ তদারকি করে যাচ্ছে। অদ্যবধি কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৪৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ চলতে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ধরলা নদীর মিলিত স্থান উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ির কাছে ব্রহ্মপুত্র নদ হতে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ২৫ কি.মি. নাব্যতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে ড্রেজিং কাজ চলমান রয়েছে।


আরও পড়ুন: বায়তুল মোকাররমে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের সময়সূচি প্রকাশ


নাব্যতার সৃষ্টির মাধ্যমে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক ব্যবসা বাণিজ্যক সমৃদ্ধশালী ও প্রসার ঘটানোর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নৌ-পথের মাধ্যমে জীবনযাত্রা এবং আর্থিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি এবং ধরলা নদীর ভাঙ্গনের হাত হতে রক্ষা পাবে। উপজেলা ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল কমিটি কর্তৃক অনুমোদনক্রমে ড্রেজিংকৃত ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল সদর উপজেলায় স্কুল, কলেজ ও কবরস্থানের নিচু জায়গা ভরাট এবং ভূমি উন্নয়ন ও নদীর তীর রক্ষার জন্য ৪০টি স্থানে ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ফেলানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৭ টি স্থানে ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ফেলানোর কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।


উলিপুর উপজেলায় ৪টি স্থানে ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ফেলানোর কাজ চলমান রয়েছে। ড্রেজিংকৃত মাটি-বালি ব্যবস্থাপনার জন্য জেলা প্রশাসক, কুড়িগ্রাম ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা সভা ও নিয়মিত সরজমিনে কাজের সাইট পরিদর্শন করা হচ্ছে। নদীর দুই পাশে ভূমি উন্নয়ন ও নদীর তীর রক্ষার জন্য ড্রেজিংকৃত ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ফেলানোর ফলে নদী ভাঙ্গন ও বন্যায় প্লাবিত হওয়ার সম্ভবনা কমে গেছে এবং স্থানীয় এলাকাবাসীর আর্থ ও সামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে জানা যায়।


বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমান ধরলার ডেজিং প্রসঙ্গে বলেন, ধরলা নদী খনন কাজ প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করা হচ্ছে।নদীর দুই পাশে ভূমি উন্নয়ন ও নদীর তীর রক্ষার জন্য ড্রেজিংকৃত ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ফেলানোর ফলে নদী ভাঙ্গন ও বন্যায় প্লাবিত হওয়ার সম্ভবনা কমে গেছে। এর ফলে কৃষি জমি বৃদ্ধি পাচ্ছে। চর এলাকায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কাজ শেষ হলে আরো কৃষি জমি রক্ষা নদী ভাঙনের হাত থেকে  পাবে।


এমএল/