বিদ্যুৎকর্মীর মৃত্যু
অজ্ঞাত ক্ষমতায় বরখাস্তের পরদিনই বহাল ডিপিডিসি’র প্রকৌশলী নাসির
বশির হোসেন খান
প্রকাশ: ১২:১৩ পিএম, ২৭শে এপ্রিল ২০২৫

# আদেশ প্রত্যারের অপেক্ষায় আরো দুই প্রকৌশলী
# টাকার জোরে আদেশ বাতিল
# ভুল করে নাছিরের নাম দেওয়া হয়েছে
- নূর আহমদ ব্যবস্থাপনা পরিচালক(অতিরিক্ত দায়িত্ব), ডিপিডিসি
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (ডিপিডিসি) ঘটে গেল তুঘলকি কাণ্ড। প্রকৌশলীদের অব্যবস্থাপনায় একজন কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় তিন প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করা হয়। এর ঠিক এক দিন পরেই তাদের মধ্যে একজনের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ওই কর্মকর্তা হলেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন। প্রশ্ন উঠেছে, এত বড় অভিযোগে বরখাস্ত করার পরেও কোন ক্ষমতার ইশারায় সেই আদেশ বাতিল করা হল? নাকি, টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ!
সূত্র জানায়, গত ৯ এপ্রিল বিকালে ১৫/১৫ পশ্চিম রামপুরা ঠিকানায় নতুন সার্ভিস তার সংযোগ প্রদানকালে এলটি লাইনে দুর্ঘটনাবশত বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ হারান কামরান হোসেন। তিনি তামিম ইন্টারন্যাশনালের লাইনম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই মৃত্যুর ঘটনায় বিদ্যুৎ বিভাগ ও ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
ডিপিডিসি এইচআর সূত্রে জানা যায়, ডিপিডিসি গঠিত তদন্ত কমিটি ওই দুর্ঘটনায় মগবাজার ডিভিশনের কোনো প্রকৌশলীকেই দায়ী করেননি। তবে তারা প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশও সংযুক্ত করেছে। লাইন চালু রেখে নতুন সংযোগ দেওয়ার কোনো বিধান নেই। আর সেখানে গঠিত তদন্ত কমিটি কিভাবে প্রমাণ পেলেন না এমন প্রশ্ন সাবেক বেশ কয়েকজন প্রকৌশলী। কোনো ভাবে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা দায় এড়াতে পারেন না।
কর্তৃপক্ষ দায় খুঁজে পেয়ে এ ঘটনায় ডিপিডিসির তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এই ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে ডিপিডিসির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (এইচ আর) নূর কামরুন নাহার স্বাক্ষরিত পৃথক তিনটি পরিপত্রের মাধ্যমে তিন কর্মকর্তার বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়। বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন- তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন (আইডি: ১১২৫৯), উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ মাহে আলম (আইডি: ১১৪৮৩) ও সহকারী প্রকৌশলী শেখ আবেদ আলী (আইডি: ১১৪৩২)।
তিন কর্মকর্তাকেই ডিপিডিসি এমপ্লয়িজ সার্ভিস রুলস, ২০১৭-এর ৭.৬ ধারা অনুযায়ী সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন)-এর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। বরখাস্তকালীন সময়ে তারা নিয়ম অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন এবং নির্ধারিত দপ্তরে তাদের নিয়মিত উপস্থিত থাকতে হবে। অনুমতি ছাড়া তারা কোথাও যেতে পারবেন না।
ডিপিডিসি সূত্র জানায়, ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় বিষয়টি প্রশংসিত হয়।
অথচ, দুর্ঘটনা সংঘটিত ও নিয়মানুযায়ী শাস্তি প্রদানের পর দিনই পরিস্থিতি উল্টে গেল। যার তত্ত্বাবধানে থাকা ডিভিশনে এই ঘটনা ঘটলো, সেই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাছির উদ্দিনের বরখাস্তের আদেশ বাতিল হয়ে গেল!
অভ্যন্তরীন একাধিক সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, নাছির উদ্দিনের বরখাস্তের আদেশ বাতিলের পেছনে প্রকৌশলীদের একটি চক্র কাজ করেছে। তারা একজোট হয়ে এমডির ওপর চাপ প্রয়োগ করেছে। এমনও শোনা গেছে, বড় অংকের অর্থ লেনদেনের বিনিময়ে নাছির উদ্দিন তড়িৎগতিতে দায়মুক্তি পেয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) সোনামনি চাকমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ছুটিতে ছিলাম। তাই আমি এ বিষয় জানি না।
ডিপিডিসির দুই শীর্ষ প্রকৌশলী জানান, তিন প্রকৌশলী বরখাস্তের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিলো। নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাছির উদ্দিনের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করেছেন। এটা ডিপিডিসির জন্য খুবই খারাপ খবর।
তাহলে নির্বাহী প্রকৌশলী মাহে আলম কি একাই আপরাধের শান্তি পাবেন। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন এর দায় দাড়াতে পারে না। তাহলে প্রশ্ন টাকার কাছে শাস্তি ক্ষমা পেলেন নাছির।
এ ব্যাপারে ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক(অতিরিক্ত দায়িত্ব) নূর আহমদ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাছির নির্দোষ তাই তার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখানে অন্য কোনো কারণ নেই। ভুল করে তার নাম দেওয়া হয়েছে।
আরএক্স/