‘প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না’- পোস্ট মুছে বিশেষ সহকারী লিখলেন ‘স্ট্যাটাসটি ব্যক্তিগত’


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫:৩৪ অপরাহ্ন, ২৩শে মে ২০২৫


‘প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না’- পোস্ট মুছে বিশেষ সহকারী লিখলেন ‘স্ট্যাটাসটি ব্যক্তিগত’
ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জনের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন তার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না’। যদিও সেই পোস্ট আবার সরিয়ে ফেলেছেন তিনি।


তবে শুক্রবার (২৩ মে) দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজে ফয়েজ আহমেদের ওই পোস্টের পর প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ গুঞ্জন বিষয়টি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তার সেই ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশটও শেয়ার করেছেন অনেকে। কিন্তু বিকাল থেকে সেই পোস্ট আর সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে না।


সেই ফেসবুক পোস্টে প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী নির্বাচন ও বিভিন্ন প্রসঙ্গে সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক শক্তিশালী বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতা প্রয়োজন নেই, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ ডেমোক্রেটিক ট্রাঞ্জিশনের জন্য ড ইউনূস স্যারের দরকার আছে।’


আরও পড়ুন: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার-আহতদের পুনর্বাসন অধ্যাদেশ চূড়ান্ত অনুমোদন


ফেসবুকে পোস্টে তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতা প্রয়োজন নেই, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনের জন্য ড. ইউনূস স্যারের দরকার আছে। বরং ক্যাবিনেটকে আরও গতিশীল হতে হবে। সরকারকে আরও বেশি ফাংশনাল হতে হবে, উপদেষ্টাদের আরও বেশি কাজ করতে হবে, দৃশ্যমান অগ্রগতি জনতার সামনে উপস্থাপন করতে হবে- এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না। আমাদেরকে দেখাতে হবে যে, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে জনতার সম্মতিতে ক্ষমতায় এসে প্রফেসর সাফল্য দেখিয়েছেন।বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর সম্মান আছে, এটা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।’ 


ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব লিখেছিলেন, ‘আমি মনে করি, সরকারকে এখন থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে আলোচনায় বসতে হবে, নিয়মিত বসে এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত চাইতে হবে। কোনো ধরনের বিচ্ছিন্নতা কাম্য নয়।পাশাপাশি সেনাবাহিনীও রাজনীতিতে নাক গলাতে পারবে না। আজকের দুনিয়ায় কোনো সভ্য দেশের সেনাবাহিনী রাজনীতি করে না। তাই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের বক্তব্যে সেনাপ্রধান জুরিশডিকশনাল কারেক্টনেস রক্ষা করতে পারেননি। তবে সেনাবাহিনীকে প্রাপ্য সম্মান দেখাতে হবে, আস্থায় রাখতে হবে। সেনাবাহিনী প্রশ্নে হুট করে কিছু করা যাবে না, হঠকারী কিছু করা যাবে না। তেমনি, ইনক্লুসিভনেসের নাম করে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনও চাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব এবং আস্থার জায়গা- সেটা কেউ ভঙ্গ করবে না।’


তিনি লিখেছিলেন, ‘সব দরকারি প্রস্তুতি শেষ করে নির্বাচন এপ্রিল-মে’র মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে বলেই আশা করি। এ সময়ে সব যৌক্তিক সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে, করতে হবে জুলাই সনদ।’


আরও পড়ুন: শুধু নির্বাচন দেওয়ার জন্য আমরা দায়িত্ব নিইনি: পরিবেশ উপদেষ্টা


ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আরও লিখেছিলেন, ‘জুলাই-আগস্ট ২৫ এ আমরা জাতীয়ভাবে দুই মাস জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির উদযাপন করব, ইনশাআল্লাহ। এবং আগস্টের মধ্যেই স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার বিচারের প্রথম রায়টি আলোর মুখ দেখতে পাবে বলেও আশা প্রকাশ করি। ইনশাআল্লাহ আমরা হারবো না, আমাদের হারানো যাবে না। ইনকিলাব জিন্দাবাদ। প্রফেসর ইউনূস জিন্দাবাদ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’


তবে তার এই স্ট্যাটাস ফেসবুকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। পরে বিকাল ৩টা ৩০মিনিটের দিকে ফয়েজ আহমদ আরেকটি পোস্ট দেন তার ফেসবুক পেজে। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা স্যারের বিষয়ে দেওয়া স্ট্যাটাসটি আমার ব্যক্তিগত মতামত। এটাকে নিয়ে নিউজ না করার অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।’


প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন ওঠে বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাত থেকে। ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। পরে নাহিদের বরাত দিয়ে রাতেই বিবিসি বাংলা খবর প্রকাশ করে যে, ‘প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’। এরপরই শুরু হয় নানা আলোচনা।


ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগে করে ভারতে পালিয়ে যান।এর তিন দিন পর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।


এমএল/