ঈদুল আজহার ব্যস্ততায় নির্ঘুম কামারপল্লী


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৫৭ অপরাহ্ন, ২৬শে মে ২০২৫


ঈদুল আজহার ব্যস্ততায় নির্ঘুম কামারপল্লী
সংগৃহীত ছবি


আগামী ৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা অর্থাৎ  কুরবানী ঈদ, ঈদকে সামনে রেখে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন বিভিন্ন এলাকার কামাররা দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা, এই ঈদে গরু ছাগল মহিষ কুরবানী পশু হিসেবে জবাই করা হয়,সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুরবানী পশু জবাই চলে, এ-সব পশু গোশত কাটতে দা বটি ছুরি চাপাতি ইত্যাদি ধাতব হাতিয়ার অপরিহার্য।


আরও পড়ুন: কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে প্রান গেল ৪ কৃষকের


মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে আত্মোৎসর্গ করাই কোরবানি। শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তার নামে পশু জবেহ করাকে কোরবানি বলে।


আর এই ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা বিভিন্ন বাজারে  কামার শিল্পীরা। দিন-রাত চলছে কামার পাড়ায় চাপাতি, দা, বটি, ছুরি তৈরি ও শানের কাজ।


সম্প্রতি পাকুন্দিয়া উপজেলার পুলেরঘাট উপশহর, কোদালিয়া,আশুতিয়া, মির্জাপুর, বাহাদিয়া, মঠখোলা, নারান্দী বাজার  ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যন্ত জনপদের কামাররা এখন মহাব্যাস্ত সময় পার করছেন। লাল আগুনের লোহায় কামারদের পিটাপিটিতে মুখর হয়ে উঠেছে কামার দোকানগুলো। টুংটাং শব্দটি তাদের জন্য এক প্রকার ছন্দ।


ঘুম নেই কামারপাড়ায় কি দিন কি রাত, কান পাতলেই শোনা যায় ঠুংঠাং শব্দ। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস বানাতে আগুনের শিখায় লোহাকে পুড়িয়ে তৈরি করা এসব দা, ছুরি, কুড়াল, বটি, চাপাতি অত্যাবশ্যকীয়। কোরবানির আগে এসব উপকরণ হাতের কাছে না থাকলেই নয়। সেগুলো সংগ্রহ ও প্রস্তত রাখতে এখন ব্যস্ত সবাই। তাই এসব কিনতে এখন কামারের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ভৈরবের সবচেয়ে বড় কামারপাড়া হিসেবে পরিচিত রাণীর বাজার কামারপাড়া। সেখানকার কর্মকার নতুন নতুন দা, ছুরি ও বটিসহ নানান ধারালো অস্ত্র তৈরি করছে। কেউ আবার পুরনো দা, ছুরি, বটি ঝালাই দিয়ে ধারালো করে নিচ্ছেন।


এসব দোকানের কারিগররা জানান, কোরবানি দিন সকাল পর্যন্ত দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে । কথা বলার সময় নেই কারও। কেউ হাপর টানছেন। কেউবা আগুনে কয়লা দিচ্ছেন। জ্বলন্ত আগুন থেকে লোহা তুলে সমানতালে পেটাচ্ছেন তাঁরা। সেই পেটানো তপ্ত লোহা থেকে তৈরি হচ্ছে দা, বটি, ছুরি কুড়াল, চপাতিসহ বিভিন্ন ধরনের ধারালো অস্ত্র।

কয়েকজন কামারের সাথে আলাপ করে জানা যায়, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, দা ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা, বটি ২৫০ থেকে ৫০০, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাপাতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অনেক ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা।


পশু জবাইয়ের সরঞ্জামাদি কিনতেও লোকজন ভিড় করছেন তাদের দোকানে। আগে যে সব দোকানে দু,জন করে শ্রমিক কাজ করতো, এখন সে সব দোকানে ৩-৪ জন করে শ্রমিক কাজ করছেন।


ক্রেতাদের অভিযোগ ঈদ উপলক্ষে দাঁ, চাপাতি ও ছুরির দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। ছুরি শান দেওয়ার জন্য ৫০ টাকা থেকে শুরু করে কাজের গুণাগুণের উপর ভিত্তি করে ১৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। কুরবানির ঈদ উপলক্ষে কামারদের বেচা কেনা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।


আরও পড়ুন: কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে প্রাণ গেল তিন ছাত্রী ও এক কৃষকের


কামাররা বলেন, ঈদকে সামনে রেখে কাজের চাপ বেশি। কাজের চাপে কখন খাওয়ার সময় চলে যাচ্ছে আমরা টেরও পাই না। চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে আমাদের বিক্রি তত বাড়ছে।


নতুন করে অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এই অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে বাইরের এলাকা থেকেও অর্ডার নেওয়া হয়। সারা বছর কাজের চাপ থাকে না। যা লাভ এই ঈদ মৌসুমেই। তাই ঈদে সামান্য একটু বেশি নিয়ে থাকি। তবে এবারের ঈদে চাপ বেশি যেহেতু লকডাউনে দোকান বন্ধ ছিল, এ কারণে কাজের চাপ বেড়েছে। কামাররা বলছে ঈদ এলে লোহার দাম না বাড়লেও কয়লার দাম বৃদ্ধি পেয়ে যায়।


এসডি/