সাংবাদিকদের অবরুদ্ধের চেষ্টা শিক্ষকদের

ইউটিউব থেকে হুবহু কপি করে পরিক্ষার প্রশ্ন বানালেন শিক্ষক


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৪৮ অপরাহ্ন, ২৬শে জুন ২০২৫


ইউটিউব থেকে হুবহু কপি করে পরিক্ষার প্রশ্ন বানালেন শিক্ষক
ছবি: প্রতিনিধি

কুষ্টিয়া তালবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে অর্ধবার্ষিক পরিক্ষা। সেই পরিক্ষার প্রশ্ন তৈরি করার জন্য ইউটিউবের ভিডিও থেকে হুবুহু কপি করে প্রশ্ন বানিয়েছেন ওই স্কুলের নবম শ্রেনীর বাংলা ১ম পত্রের শিক্ষক মো. হাসমত আলী। আর এই কর্মকান্ড জানাজানি হয়ে গেলে সাধারন মানুষ সহ অভিভাবকদের মাঝে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠেছে । বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সহ সংশ্লিষ্টরা কোন প্রকার ব্যাবস্থা না নিয়েই সাপাই গাইছেন ওই শিক্ষকের পক্ষে।


কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া এলাকায় অবস্থিত তালবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়। নানা ধরনের বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারনে জেলা জুড়ে আলোচনা ও সমালোচনায় সামনে আসে এই বিদ্যালয়টি। এবার এক নতুন কর্মকান্ড সামনে এসেছে।


সুত্রে জানা যায়, গত ২৪ জুন থেকে একযোগে সারা বাংলাদেশে উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে শুরু হয়েছে অর্ধবার্ষিক পরিক্ষা। এবার সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড কতৃপক্ষ প্রশ্নপত্রে করেছে অনেক কড়াকড়ি। কোন ধরনের শিক্ষা সমিতি ও শিক্ষা বোর্ড কতৃক এবার প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়নি। অন্য কোথা থেকেও প্রশ্নপত্র কপি করে নেওয়াও নিষেধ বিধান করেছে শিক্ষা বোর্ড। প্রত্যেক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশ্নপত্র তৈরি করে শিক্ষার্থীদের পরিক্ষা নিতে বলা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৪ জুন তালবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিক্ষা শুরু হয়। 


পরিক্ষায় নবম শ্রেনীর বাংলা ১ম পত্রের যেই প্রশ্ন করা হয়েছে তা ইউটিউব থেকে নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। গত ১০ জুন এফ এইচ পিসি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে বাংলা ১ম পত্রের পরিক্ষার প্রশ্নপত্র আপলোড করা হয়েছে। সেই হুবহু প্রশ্নপত্র তালবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর বাংলা ১ম পত্রের শিক্ষক মো. হাসমত আলী ইউটিউব দেখে বানিয়ে শিক্ষার্থীদের পরিক্ষা নেওয়ার প্রমান পাওয়া গেছে।


এছাড়াও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে যেসব শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে পড়ে তাদেরকে ৫০০-১০০০ টাকায় পরিক্ষায় আগের দিন তাদের মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্রের ইউটিউব লিংক দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে বিদ্যালয়ের ওই অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এই সংবাদ সংগ্রহকালে তিনজন সাংবাদিককে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গনে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করেন ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, অভিযুক্ত শিক্ষক সহ সকল শিক্ষক। বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ শিক্ষকদের সাথে ম্যানেজ করার কথা বলেন। শুধু তাই নয় বহিরাগত বখাটে ছেলেদের ডেকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন তিনজন সাংবাদিককে।


ইতিপূর্বেও, গত দুই মাস আগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দারকে জোরপূর্বকভাবে পদত্যাগ করতে বাধ্য করতে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বহিরাগত শিক্ষকদের ডেকে নিয়ে দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দারকে তার কক্ষের মধ্যে তালা মেরে আটকে রেখে আন্দোলন শুরু করেন। এসময় মিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে বহিরাগতদের বিদ্যালয় থেকে বের করে দিতে গেলে বহিরাগতরা তাকেও অবরুদ্ধ করে লাঞ্চনার চেষ্টা করে।


নবম শ্রেনীর একজন শিক্ষার্থী বলেন, এখানে শোনা যাচ্ছে ইউটিউবে বাংলা ১ম এর প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। কিন্তু এটা আমি জানি না। আমরা নবম শ্রেনীর কেউই জানিনা। পরিক্ষা দিয়ে রাত্রে শুনতে পারি এটা ফাঁস হয়েছে। অনেকের স্যারের উপরে বলছে কিন্তু এটা আমরা কেউই জানিনা।


শিক্ষার্থীর একজন অভিভাবক বলেন, একজন শিক্ষার্থী পরিক্ষার হলে গিয়ে প্রশ্নপত্র পাবে। তার আগেই যদি প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে থাকে তাহলে শিক্ষার মান ক্ষুন্যহবে। এই ধরনের কাজের সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি করেন।


অভিযুক্ত শিক্ষক মো. হাসমত আলীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, দেখেন অনেক সময় এটা কাকতালীয়ভাবে মিলিয়ো যায়। ইউটিউব থেকে অথবা অনলাইন থেকে নিলে অনেক সময় কাকতালীয়ভাবে মিলে। নতুন হিসেবে আমি ওইটা করছি। এখন হবহু মিলছে এটাই মনে করি আমার জন্য আন্যায়।


বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আজিজুর রহমান বলেন, গতকালকে পরিক্ষা হয়ছে আজকে আমি জানতে পারলাম একটা ইউটিউবের ভিডিওর সাথে কিছু অংশ এই প্রশ্নপত্রের সাথে মিল আছে। আগে আমরা বোর্ড থেকে প্রশ্নপত্র দিলে আমরা অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে নিতাম। গত দুই মাস আগে বোর্ড থেকে নিয়ম করেছে শিক্ষকরা প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরিক্ষা নিবে। কিন্তু কোন শিক্ষক যদি কোথা থেকে কপি করে প্রশ্নপত্র তৈরি করে এটা দুঃখজনক। পরবর্তীতে যেনো এর পুনরাবৃত্তি না হয় সেদিকে সতর্কবার্তা করা হবে।


ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদের সাথে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরাও দেখেছি আর যাতে না হয় সেটাও আমরা দেখছি। ওইটার জন্য স্যারের সাথে রাগবাগ করেছি। উনি বললো যে এটা আমার অপরাধ হয়েছে। আপনারা একটু ম্যানেজ করে নেন আর কি।


মিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল ইসলাম জানান, আমরা সরজমিনে গিয়ে প্রশ্নপত্রের সাথে পূর্বের প্রকাশিত প্রশ্নপত্রের মিল পাই। আমরা তাহলে উর্ধতন কতৃপক্ষের মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সেটা প্রেরণ করে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।


কুষ্টিয়া জেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার মুন্সি কামরুজ্জামান জানান, আমাদের সরকারিভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বলে দেওয়া হয়েছে কোন সোর্স থেকে প্রশ্ন আনা যাবেনা নিজেদের তৈরি করা প্রশ্নে পরিক্ষা দিতে হবে। প্রথমত এই বিধি উনারা ভঙ্গ করেছেন। দ্বিতীয়ত একই জিনিস হুবহু কোন সোর্স থেকে তুলে এনে দিয়েছেন। এগুলো যদি সত্যি হয় তাহলে উনি তথ্যপ্রযুক্তি আইনও ভঙ্গ করেছেন। যদি উনি এটা করে থাকেন তাহলে উনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।



এসডি/