এক অনন্য প্রেরণা তারেক রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২১ অপরাহ্ন, ১৬ই জুলাই ২০২৫

শাহেদ শফিক: রাজনীতি কোনো ভৌগোলিক সীমারেখায় আবদ্ধ নয়। এই প্রমাণ যুগে যুগে বহু নেতাই দিয়েছেন। গণতন্ত্রবিনাশী শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে ইতিহাসে বহু জনপ্রিয় নেতা হয়েছেন নির্বাসিত, কিন্তু তাদের অনেকেই নির্বাসনের কারণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি। তবে এর ব্যতিক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি দীর্ঘদিন লন্ডনে নির্বাসনে থেকেও দল পরিচালনায় আধুনিক পদ্ধতি ও প্রযুক্তিনির্ভ কৌশল ব্যবহার করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও ভার্চুয়াল নেতৃত্ব আজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেছে।
বিশ্ব ইতিহাসে দেখা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনী, স্পেনের জোসে মনুয়েল গার্সিয়া বা তিব্বতের দলাই লামা এমন বহু নেতা স্বদেশে ফিরে এসে পরিবর্তনের পথ তৈরি করেছেন বা প্রবাস থেকেই জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দশকাধিক সময় বিদেশে থেকেও তাদের দেশ ও জনগণের মুক্তির স্বপ্ন ত্যাগ করেননি। তারেক রহমানও সেই ধারার একজন আধুনিক প্রতিনিধি। হাসিনা সরকারের দমন-পীড়নের কারণে বাংলাদেশে ফিরতে না পারলেও তিনি লন্ডন থেকে দলকে সুসংগঠিত রাখেন, ভার্চুয়াল সভা, সাংগঠনিক দিকনির্দেশনা ও রাজনৈতিক বার্তা প্রদান করেন।
বিশেষ করে বিএনপির ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণায় তার নেতৃত্ব ও চিন্তাধারার প্রতিফলন দেখা যায়। যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সুশাসনের দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে। ডিজিটাল যোগাযোগ ও আন্তর্জাতিক সংযোগ ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি বিএনপিকে আধুনিক একটি রাজনৈতিক দলে রূপান্তর করার চেষ্টা করেছেন। তার নেতৃত্বে দল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জোরালোভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছে।
প্রবাসে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে তারেক রহমানের সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হলো তিনি কখনো দলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে দেননি। নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙা রাখার পাশাপাশি তিনি সরকারের দুর্নীতি, দমননীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে বক্তব্য রেখেছেন, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত না হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রভাব ফেলেছে।
এটা বলা বাহুল্য, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন যখন কঠিন হয়ে ওঠে, তখন নেতৃত্বের ধরন ও কৌশলই হয়ে ওঠে আন্দোলনের প্রাণ। তারেক রহমানের প্রবাসে থেকেও বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। বিশ্বজুড়ে যেখানে অনেক রাজনৈতিক নেতা নির্বাসনে গিয়ে রাজনৈতিক শূন্যতায় হারিয়ে যান, সেখানে তারেক রহমান আধুনিক প্রযুক্তি, সাংগঠনিক দূরদর্শিতা ও অবিচল রাজনৈতিক অবস্থানের মাধ্যমে দলে প্রাণ সঞ্চার করেছেন। ফলে অন্যান্য দেশের স্বৈরাচারবিরোধী নেতারা তার এই ভার্চুয়াল নেতৃত্ব মডেলকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। বিশেষত তারা যারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন কিন্তু আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান।
তারেক রহমান দেখিয়েছেন, শারীরিকভাবে দেশে না থেকেও একটি রাজনৈতিক দলকে কৌশলগতভাবে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব। তিনি প্রমাণ করেছেন সংগঠনের সঙ্গে সুসংবদ্ধ যোগাযোগ, রাজনৈতিক বার্তার স্পষ্টতা এবং নৈতিক দৃঢ়তা থাকলে প্রবাস থেকেও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করা যায়। আমার বিশ্বাস এ অভিজ্ঞতা থেকে শিখে মিয়ানমার, সিরিয়া কিংবা ভেনেজুয়েলার মতো দেশের নির্বাসিত নেতারাও নিজ নিজ রাজনৈতিক দলকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংগঠিত রাখতে পারেন এবং দূর থেকে নেতৃত্ব দিয়ে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবেন।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তারেক রহমানের নেতৃত্বে রাজনৈতিক বার্তাগুলো শুধু দলের অভ্যন্তরেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং আন্তর্জাতিক মহলে পৌঁছেছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার নিয়ে তার ধারাবাহিক বক্তব্য বিদেশি নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এটি বিশ্ব রাজনীতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। যেখানে স্বৈরাচারবিরোধী লড়াই শুধু দেশের ভিতরে সীমাবদ্ধ নয় বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ও সহানুভূতি অর্জনের মাধ্যমেও এগিয়ে নেওয়া যায়।
সুতরাং, বিশ্বজুড়ে যারা স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন এবং প্রবাসে নির্বাসনে থেকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন, তারা তারেক রহমানকে একজন কৌশলী, প্রযুক্তিসচেতন ও আদর্শিকভাবে দৃঢ় নেতার প্রতিমূর্তি হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। তিনি প্রমাণ করেছেন আদর্শ, প্রযুক্তি ও নেতৃত্বের ভারসাম্য থাকলে দূরত্ব কখনো সংগ্রামের বাধা হতে পারে না।
এটা এখন স্পষ্ট- দেশের ভেতরে রাজনৈতিক কর্মসূচির স্পষ্ট রূপরেখা প্রদান, দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র সংকটকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত কার্যকর। তিনি দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকেও ভার্চুয়াল যোগাযোগ, দলীয় প্ল্যাটফর্ম এবং বিকেন্দ্রীকৃত সাংগঠনিক নেটওয়ার্কেও মাধ্যমে এমন একটি অবস্থান তৈরি করেন, যেখানে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং নিপীড়নের মধ্যেও মানুষ দিকনির্দেশনা পায়।
এ আন্দোলন দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। তার ডাকে মানুষ আবার রাজপথে নামে এবং জনগণের অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কঠিন স্বৈরাচারী অবস্থান ভেঙে পড়ে। এক পর্যায়ে সে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। যা ইতিহাসে “জুলাই বিপ্লব” নামে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই বিপ্লবে তারেক রহমান কেবল রাজনৈতিক বার্তাদানেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, বরং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আন্দোলনের ধারাকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করেন।
সর্বশেষ জুলাই বিপ্লবে সবচেয়ে বড় কৌশল ছিল তার নেতৃত্বে আন্দোলনকে এককেন্দ্রিক না রেখে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়। যাতে সরকারের দমনপীড়ন কোনো এক জায়গায় থেমে যেতে না পারে। তারেক রহমান সাংগঠনিকভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত দলে প্রাণ ফেরান এবং আন্দোলনকে নির্দিষ্ট ইস্যু ভিত্তিক করার পরিবর্তে গণআকাঙ্খার বিস্তৃত কাঠামোতে রূপ দেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ইউটিউব ভাষণ, ভার্চুয়াল কনফারেন্স এবং গ্লোবাবাল মিডিয়ার মাধ্যমে জনমত গঠন করেন। ফলে আন্দোলন শুধু সড়কে নয়, মানুষের মনে এবং আন্তর্জাতিক ফোরামেও ছড়িয়ে পড়ে তার নেতৃত্বের ফল।
তারেক রহমানের এই মডেল আজকের বিশ্বে গণতন্ত্রকামী অন্য নেতারাও অনুসরণ করতে পারেন। তিনি বুঝিয়ে দিলেন, নেতৃত্ব শুধু নিজের আশেপাশে সীমাবদ্ধ না রেখে জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সরকারের নজরদারির বাইরে আন্দোলনের ধারা সচল রাখা সম্ভব হয়।
তার নেতৃত্বের মাধ্যমে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো নেতৃত্ব মানে শুধু উপস্থিতি নয়, বরং সঠিক সময়, সঠিক বার্তা ও কার্যকর সংযোগের মাধ্যমে জনগণের শক্তিকে জাগিয়ে তোলা। তারেক রহমানের "জুলাই বিপ্লব" কৌশল প্রমাণ করে, স্বৈরাচার যতই শক্তিশালী হোক, সংগঠিত জনশক্তি ও দূরদর্শী নেতৃত্বই তাকে নতজানু করতে পারে।
বিশ্বব্যাপী স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা নেতাদের তালিকায় তারেক রহমান আজ এক নতুন নাম হয়ে উঠেছেন। তার প্রবাসজীবন শুধু আত্মরক্ষার উপায় নয়, বরং তা এক রূপান্তরমূলক রাজনৈতিক সংগ্রামে রূপ নিয়েছে। দেশের মানুষ এখন তাকে একজন প্রতিশ্রুতিশীল ও পরিণত নেতা হিসেবে দেখছে, যার নেতৃত্বে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পূর্ণ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা সম্ভব।
লেখক: সাংবাদিক, লন্ডন, যুক্তরাজ্য।