নিহত পাইলট তৌকিরের রাজশাহীর বাড়িতে শোকের মাতম


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:১৪ অপরাহ্ন, ২১শে জুলাই ২০২৫


নিহত পাইলট তৌকিরের রাজশাহীর বাড়িতে শোকের মাতম
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামের মৃত্যুর খবরে রাজশাহীর বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। 


সোমবার (২১ জুলাই) বিকেলে রাজশাহী নগরীর উপশহর এলাকার ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে পরিবারের কেউ উপস্থিত না থাকলেও স্বজন ও প্রতিবেশীদের কান্না, উদ্বেগ এবং শোক স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে।


স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরই তৌকিরের বাবা তোহরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন, স্ত্রী এবং ছোট বোন সৃষ্টি খাতুন ও তার স্বামী ডা. তুহিন ইসলাম বিমানবাহিনীর সহায়তায় একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় রওনা হন। রাজশাহী শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে তারা ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন।


তৌকিরের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসার্ট এলাকায় হলেও তিনি পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহীর উপশহরের ‘আশ্রয়’ নামের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। নিহত তৌকিরের বাবা তোহরুল ইসলাম পেশায় সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পাথর ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিণী।


বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন তৌকিরের চাচাতো মামা রফিকুল ইসলাম ও গাড়িচালক আলী হাসান। তারা জানান, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই এলাকার মানুষজন ভিড় করছেন। কেউই সঠিকভাবে জানেন না ঢাকায় তৌকিরের সর্বশেষ অবস্থা কী, তবে সবাই উৎকণ্ঠা ও শোকে মুহ্যমান।


এ সময় বাড়িতে ছুটে আসেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাবেক ওয়ারেন্ট অফিসার মোস্তাক হোসেন। তিনি বলেন, “তৌকির ছিলো অত্যন্ত নম্র, ভদ্র ও প্রতিভাবান। ছোটবেলা থেকেই ওর পাইলট হওয়ার স্বপ্ন ছিল। এমন একজন তরুণের মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।”


জানা গেছে, তৌকির ইসলাম রাজশাহী গভ. ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে পরে পাবনা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন। পড়াশোনায় ছিলেন মেধাবী। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হয়ে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে যোগ দেন। সম্প্রতি তিনি প্রথমবারের মতো একা প্রশিক্ষণ বিমান চালানোর সুযোগ পান, যা নিয়ে পরিবারে ছিল আনন্দের জোয়ার।


বাসার মালিক আতিকুল ইসলাম জানান, “পরিবারের সদস্যরা যখন ঢাকায় রওনা হন, তখনো তারা জানতেন না তৌকির মারা গেছেন। তারা ভাবছিলেন, সাগর (তৌকির) ঢাকার সিএমএইচ-এ চিকিৎসাধীন রয়েছেন।”


নিহত পাইলটের বড় চাচা মতিউর রহমান বলেন, “তৌকিরের বাবা-মাকে এখনও মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি। গত বছর সে বিয়ে করে, আর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকতা হয়। তার স্ত্রী ঢাকার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষক।”


উল্লেখ্য, সোমবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামসহ এ পর্যন্ত ১৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।