উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনার আগে রহস্যময় ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল , যা জানা গেল


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১:৩৯ অপরাহ্ন, ২২শে জুলাই ২০২৫


উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনার আগে রহস্যময় ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল , যা জানা গেল
সংগৃহীত ছবি।

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে বহু প্রাণহানির ঘটনার ঠিক একদিন আগে একটি ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া রহস্যজনক সতর্কবার্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। অনেকেই এটিকে অস্বাভাবিক ও ‘ভবিষ্যদ্বাণীমূলক’ দাবি করলেও সাইবার বিশেষজ্ঞদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য পোস্টটি ছিল একটি আন্তর্জাতিক বেটিং ও স্ক্যাম চক্রের কৌশলী ষড়যন্ত্রের অংশ।


সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি দোতলা ভবনে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার সময় ভবনের ভেতরে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকায় প্রাণহানির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়। এ ঘটনায় বহু শিক্ষার্থী নিহত ও আহত হয়েছেন। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী।


এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার মাত্র একদিন আগেই, রবিবার (২০ জুলাই) ‘অ্যানোনিমাস মেইন পেজ’ নামক একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি সতর্কমূলক পোস্ট দেওয়া হয়।


সেই পোস্টে লেখা ছিল: একটি স্কুল ভবন ধসে পড়তে যাচ্ছে, যার ফলে বহু শিশু প্রাণ হারাবে। আমরা এক ভয়াবহ বিপর্যয় এগিয়ে আসতে দেখছি।


পরদিন দুর্ঘটনার পর সেই পেজটি থেকে আরেকটি পোস্ট করে বলা হয়: আমরা সবসময় আগেভাগেই সতর্কবার্তা পাঠাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেগুলো গুরুত্ব পায় না। এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক।


এই পোস্ট দু’টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল ভাইরাল হয় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। অনেকেই ভাবতে শুরু করেন, পেজটি কোনো ‘অ্যানোনিমাস’ হ্যাকার সংগঠনের অংশ কি না, বা সত্যিই তারা ভবিষ্যতের ঘটনা জানতে পারে কি না।



তবে বিষয়টি আর দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা দ্রুত অনুসন্ধানে নামে। প্রোবফ্লাই আইটি’র ফাউন্ডার আব্দুল্লাহ আল ইমরান নিশ্চিত করেছেন, ওই ফেসবুক পেজটি মূলত অনলাইন বেটিং ও স্ক্যামিং কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল।



ইমরান বলেন, আমরা জানতে পেরেছি এই পেজটি চারজন ব্যক্তি পরিচালনা করছিলেন যার মধ্যে দুইজন নাইজেরিয়ান, একজন আমেরিকান, এবং অপরজনের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি। পেজটি বিভিন্ন সময়ে গুজব ছড়িয়ে ও মানুষের অনুভূতি নিয়ে খেলে তাদের বেটিং সাইট ও স্ক্যাম প্রচারণা চালাত।


ইমরান জানান, পরিচয় ফাঁস হওয়ার পর তারা দ্রুত তাদের আইডিগুলো ডিয়েক্টিভেট করে দেয়, এবং বর্তমানে ফেসবুকে পেজটি আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি জনগণকে এ ধরনের গুজবে কান না দিয়ে বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও অফিসিয়াল সূত্রে বিশ্বাস রাখতে অনুরোধ করেন।


অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি’র বাংলাদেশের সাবেক ফ্যাক্ট-চেক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির বলেছেন, পেজটি কোনো আন্তর্জাতিক হ্যাকার গ্রুপ ‘অ্যানোনিমাস’-এর অংশ নয়। বরং এটি একটি প্রতারণামূলক অনলাইন জুয়া প্রমোট করতে ব্যবহৃত হতো।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমে গুজব ও আতঙ্ক ছড়ানোর মাধ্যমে অসাধু চক্র যেমন বাণিজ্যিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করে, তেমনি জনমনে বিভ্রান্তিও সৃষ্টি করে। এই ধরনের তৎপরতা বন্ধে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।



এসডি/