স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, স্বামীর বাড়িতে আগুন দিল জনতা
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ পিএম, ৭ই আগস্ট ২০২৫

গাজীপুরের শ্রীপুরে স্ত্রী সুইটি আক্তার নিশিকে (২০) পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামী নুরুল ইসলামের বাড়িতে আগুন দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। এ ঘটনায় নিহত নারীর শাশুড়িকে আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার (৬ আগস্ট) সাড়ে রাত ১০টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুরে বরমী ইউনিয়নের বরমী গ্রামের মধ্য পাড়া এলাকার শাজাহান মৃধার বাড়িতে এ নিহতের ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকালে শাজাহান মৃধার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
শ্রীপরের ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে পুরো বাড়ি পুড়ে ভস্মীভূত হয়।
অভিযুক্ত স্বামী নুরুল ইসলাম (৩৫) উপজেলার বরমী গ্রামের মো. শাজাহান মৃধার ছেলে।
জানা গেছে, দেড় বছর আগে সুইটির সঙ্গে নুর ইসলামের বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে ৪ মাসের এক মেয়ে রয়েছে। রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করেছে। সেই সঙ্গে শাশুড়ি জোবেদাকে আটক করেছে।
নিহতের স্বজনরা জানান, সুইটি এক অসহায় মেয়ে। ছোটকাল থেকে বাবা-মা তার খবর নিতেন না। খালা আকলিমার আদরে তার বেড়ে ওঠেছে সে। দেড় বছর পূর্বে গোপনে খালু নাজমুল সুইটির বিয়ে দেন নুর ইসলামের সঙ্গে। নুর ইসলাম এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। বিয়ের পর থেকেই নুর ইসলাম সুইটিকে প্রতিনিয়ত মারপিট করতেন। বুধবার রাত ১০টার দিকে খালু নাজমুল ফোনে স্বামী সুইটির পরিবারকে জানান, সে মারা গেছে। খবর পেয়ে স্বজনরা এসে সুইটির মরদেহ দেখতে পান।
সুইটির মামা জসিম শেখ বলেন, ‘আমার ভাগ্নি বড় অসহায়। ছোটবেলা থেকে বাবা-মা তার খবর নিতেন না। আমার এক বোনের কাছে তার বেড়ে ওঠা। উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় গোপনে খালু নাজমুল নুর ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে দেন। আমরা বিয়ে মেনে নিতে পারিনি। নুর ইসলাম এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। বিয়ের পর থেকে মাদকাসক্ত নুর ইসলাম সুইটির উপর নির্যাতন করতেন। এ নিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। বুধবার সাড়ে রাত ১০টার দিকে ঘটক নাজমুল ফোন করে জানান, সুইটি মারা গেছে। খবর পেয়ে আমরা দৌড়ে নুর ইসলামের বাড়িতে এসে ভাগ্নির মরদেহ দেখতে পাই। তাকে মেরে নুর ইসলামসহ বাড়ির লোকজন পালিয়ে গেছে। রাতেই পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে সুইটির মরদেহ উদ্ধার করেছে। সুইটির দুই পা হাঁটুর নিচে থেতলানো। পা থেকে মাথা পর্যন্ত প্রতি ইঞ্চি শরীরেও মারপিটের চিহ্ন। নুর ইসলাম পিটিয়ে আমার ভাগ্নিকে মেরে পালিয়েছে।’
নিহতের খালা আকলিমা জানান, বিয়ের পর থেকেই সুইটির ওপর নির্যাতন করতেন নুর ইসলাম। বুধবার রাতে পিটিয়ে সুইটিকে মেরে তিনি পালিয়ে গেছেন। ৪ মাসের দুধের শিশুর পাশেই মাকে পিটিয়ে মেরেছেন নুরু। শিশুটির শরীরেরও আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। শিশুটি এখন মায়ের জন্য হাহাকার করছে। এ শিশুটিকে আমরা কোথায় নিব। আমাদের সামর্থ নেই শিশুটিকে পালার।
শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এস আই) মো.জাহাঙ্গীর জানান, খবর পেয়ে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে। স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।