বিদেশ পাঠানোর কথা বলে ধর্ষণ ও প্রতারণা করত তাঁরা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


বিদেশ পাঠানোর কথা বলে ধর্ষণ ও প্রতারণা করত তাঁরা

রাজধানীর রামপুরা ও হাতিরঝিল এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। বিদেশ পাঠানোর কথা বলে ধর্ষণ ও প্রতারণা করত তাঁরা। শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) দিনগত রাতে রামপুরা ও হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

শনিবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব ৩ অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, চক্রের মূলহোতা কামরুল আহম্মেদ (৪২), সহযোগী খালেদ মাসুদ হেলাল (৩৬), তোফায়েল আহম্মেদ (৩৮), মো. জামাল (৪২)।

র‍্যাবের দাবি তাঁদের কাছ থেকে ২৭টি পাসপোর্ট, একটি কম্পিউটার, ১০০টি ভিসার কপি, ১২৫টি টিকিট, চারটি মোবাইল ফোন ও প্রিন্টার উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কিছু ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ জানতে পারে, রামপুরা এলাকায় একটি মানবপাচার ও প্রতারক চক্র মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে প্রেরণের প্রলোভন দেখিয়ে ভূয়া ভিসা ও টিকেট সরবরাহ করছে এবং এর মধ্যে দিয়ে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক বেকার নারী-পুরুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাঁদেরকে সর্বশান্ত করছে। সহজ সরল বিদেশ গমনে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা ওই ভূয়া ভিসা ও টিকেট বিমানবন্দরে প্রদর্শন করলে ইমেগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাঁদের ভিসা ও টিকেট জাল হওয়ায় ফিরিয়ে দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এমন কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব নজরদারী ও ছায়াতদন্ত শুরু করে। গত ৪ এপ্রিল চক্রটি মৌলভীবাজার থেকে একজন নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে রামপুরা এলাকার কামরুলের বাসায় নিয়ে আসেন। ওই বাসায় নারীকে আটক রেখে তোফায়েল ধর্ষণ করেন।

পরে সেই নারী মোবাইল ফোনে র‌্যাবের নিকট সাহায্য চাইলে র‌্যাবের একটি আভিযানিক দল গত বুধবার দিনগত রাতে রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে।

উদ্ধার হওয়া ভুক্তভোগীর জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভুক্তভোগী নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাইফুল ইসলাম শান্ত নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সাইফুল যৌতুক বাবদ তাঁর কাছ থেকে ধাপে ধাপে পাঁচ লাখ টাকা আদায় করেন। পরবর্তীতে সাইফুল ভুক্তভোগী নারীকে ত্যাগ করে চলে যান। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে যৌতুকের টাকা ওই নারীর বাবা মানুষের কাছ থেকে ধার দেনা করে জোগাড় করেছিলেন। পরবর্তীতে পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপ দিতে থাকলে ওই নারী তাঁর গ্রামের দালাল তোফায়েলের শরণাপন্ন হয়। ভুক্তভোগীর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তোফায়েল তাঁকে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদিআরব প্রেরণের প্রলোভন দেখায়। প্রলোভনে পড়ে ভুক্তভোগী সৌদিআরব যেতে রাজি হয়। এরপর সৌদিআরব যেতে হলে আরবী ভাষার ট্রেনিং করতে হবে, এই কথা বলে তাঁকে ঢাকায় এনে কামরুলের বাসায় আটক রেখে ধর্ষণ করে।’

ওই নারীকে উদ্ধার করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রামপুরা থানায় পাঠানো হয়। ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তারা সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। কামরুল উক্ত চক্রের মূলহোতা এবং অন্যরা তাঁর সহযোগী। তাঁদের জনশক্তি রপ্তানির কোনো লাইসেন্স নেই। কিন্তু, দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে অবৈধভাবে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লোক পাঠাতেন তাঁরা।

এসএ/