স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক অধ্যাপক যতীন সরকার আর নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০৭ পিএম, ১৩ই আগস্ট ২০২৫

স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক যতীন সরকার (৯০) বুধবার (১৩ আগস্ট) বিকেল পৌনে ৩টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন।
দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন যতীন সরকার। গত জুনে পড়ে গিয়ে উরুর হাড়ে আঘাত পান, পরে তাকে ঢাকায় চিকিৎসা দেওয়া হয়। সপ্তাহে ময়মনসিংহে নেওয়ার পর সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।
তিনি দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনার্থে উদীচীর ময়মনসিংহ কার্যালয়ে নেওয়া হবে। তবে শেষকৃত্যের তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি, জানিয়েছেন সিপিবির ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সভাপতি এমদাদুল হক মিল্লাত।
জান্যযোগ্য, যতীন সরকার ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোণার কেন্দুয়ার চন্দপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘকাল মননশীল সাহিত্যচর্চা, বাম রাজনীতি এবং প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
লেখক হিসেবে তিনি ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পদক, ২০০৫ সালে ‘পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন’ গ্রন্থের জন্য প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থপুরস্কারসহ ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার ও মনিরুদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন।
৪২ বছরের শিক্ষকতার পর ২০০২ সালে অবসর গ্রহণের পর স্ত্রী কানন সরকারের সঙ্গে নেত্রকোণায় ফিরে যান।
তার প্রথম গ্রন্থ ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে। এরপর প্রকাশিত হয় ‘বাংলাদেশের কবিগান’, ‘বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য’, ‘সংস্কৃতির সংগ্রাম’, ‘মানবমন, মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব’। শিশুদের জন্যও তিনি একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা করেছেন। ১৯৯৪ সালে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘গল্পে গল্পে ব্যাকরণ’ শিশুসাহিত্যে উল্লেখযোগ্য সংযোজন হিসেবে বিবেচিত।
বাংলা একাডেমির জীবনীগ্রন্থমালায় তিনি চারটি গ্রন্থ রচনা করেন—‘কেদারনাথ মজুমদার’, ‘চন্দ্রকুমার দে’, ‘হরিচরণ আচার্য’ ও ‘সিরাজউদ্দিন কাসিমপুরী’। সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘রবীন্দ্রনাথের সোনার তরী’, ‘প্রসঙ্গ মৌলবাদ’ ও ‘জালাল গীতিকা সমগ্র’। এছাড়া তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন’, ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব, নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞান-চেতনা’, ‘সংস্কৃতি ও বুদ্ধিজীবী সমাচার’, ‘সাহিত্য নিয়ে নানাকথা’।