১২ বছরেও হয়নি চবি ছাত্র আসাদ হত্যার বিচার


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


১২ বছরেও হয়নি চবি ছাত্র আসাদ হত্যার বিচার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ স্থানীয়দের হাতে ২০১০ সালের ১৫ এপ্রিল খুন হয়। ঘটনার পরে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ ১২জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হলেও গত ১২ বছরে বিচার হয়নি।

শুক্রবার রাত ১ টার দিকে মোয়াজ্জেম হোসেন বাদি হয়ে নগরীর রেলওয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। এর ১৭ দিন পরে পুলিশ চার্জশিট দিলেও কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

আসাদুজ্জামান আসাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। 

২০১০ সালের ১৫ই এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চবি রেল ক্রসিং এলাকায় আসাদ  ও তার দুই বন্ধু আড্ডা দেয়ার সময় তাদের সাথে শার্ট ও লুঙ্গি পরা কয়েকজন এলাকাবাসীর কথা কাটাকাটি হয়।এক পর্যায়ে উভয়পক্ষ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় হাতে লাঠি, দা, ছোরা নিয়ে আরো কয়েকজন এলাকাবাসী এসে তাদেরকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। এতে দর্শন প্রথম বর্ষের ছাত্র মোয়াজ্জেম হোসেন জেমস ও রসায়ন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মীর হোসেন মিরাস আহত অবস্থায় পালিয়ে চলে আসলেও হামলাকারীরা আসাদকে আটকে ফেলে।এরপর রাত সাড়ে এগারটার দিকে শাহী মঞ্জিলের পাশ থেকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে দায়ের কোপসহ মুমূর্ষু অবস্থায় আসাদকে উদ্ধার করে চবি মেডিকেলে নেয়ার পর রক্তক্ষরণ বন্ধ না করতে না পেরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে প্রায় ১১ ঘণ্টা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে পরদিন শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু ঘটে।

আসাদ হত্যাকাণ্ডে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আল-আমীন। উনি ওই হত্যাকাণ্ডের খুনীদের চিহ্নিত করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলেও তা প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি প্রতিবেদনে করা কোন সুপারিশও বাস্তবায়ন হয়নি আজ পর্যন্ত। 

প্রফেসর ড.মোহাম্মদ আল-আমীন তখন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আসাদ হত্যার আসামিদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলাম।কিন্তু তা আমলে নেওয়া হয়নি। আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের থাক প্রতিবেদনটি সিন্ডিকেটসহ কোন পর্ষদেই উত্থাপন করা হয়নি।

পূর্বের এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া,দোষীদের কে শাস্তির আওতায় না আনার কারণেই বর্তমানে স্থানীয় ও সিএনজি চালক কর্তৃক শিক্ষার্থী লাঞ্চিতের ঘটনা, শাটলে যৌন হয়রানি,পাথর নিক্ষেপ,শিক্ষার্থীদেরকে মারধর করার মতো লজ্জাজনক ঘটনার পুনরাবৃত্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

শাখা ছাত্রলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক আবু সাঈদ মারজান বলেন,'১২ বছরেও আসাদ ভাই হত্যা মামলার তদন্ত চলমান।এই হত্যাকান্ডসহ অন্যান্য ঘটনার বিচার না হওয়ার কারনেই বর্তমানে চবির ছাত্ররা বারবার ভিকটিম হচ্ছে।স্থানীয়রা বুঝে গেছে ছাত্র হত্যার বিচারই যখন প্রশাসন করতে পারে না মারধর করলে আর কি বিচার করবে!!'

তিনি প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন,'বর্তমানে ক্যাম্পাসে যে একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে চলেছে তার পিছনে কোন সিন্ডিকেটের স্বার্থ থাকতে পারে,তাদের খুজে বের করুন।শাস্তির আওতায় আনেন,অতীতে যে চক্রাকার বাস সার্ভিস ছিল সেটা চালু করেন তাহলে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হবে।'

তিনি আরও বলেন,'আমরা যারা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে পড়তে এসেছি তারা স্থানীয় দের শত্রু নয়,আমরা একে অপরের পরিপূরক।'

এসএ/