দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রকে ‘চাঁদাবাজ’ বললেন প্রধান শিক্ষক, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসি


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২:৫১ এএম, ১৮ই আগস্ট ২০২৫


দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রকে ‘চাঁদাবাজ’ বললেন প্রধান শিক্ষক, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসি
ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র তাছিন তালহাকে মারধরের কারণ জানতে গিয়ে সন্তানের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে চাঁদাবাজ আখ্যা পেতে হয়েছে মা তাসলিমা আকতার শাপলাকে। এই ঘটনার পর থেকেই প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের ওপর ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও এলাকাবাসি। জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের সোনামুখী ইউনিয়নের অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটনাটি ঘটেছে। 


এসব ঘটনায় রবিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে ওই শিক্ষার্থীর মা এবং ওই বিদ্যালয়ের ২৫ জন অভিভাবক স্বাক্ষর করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।


বিকালে ওই বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা শিক্ষা কর্মকতা এবং সহকারী শিক্ষা কর্মকতারা শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা এবং অভিভাবকরা অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে অন্যত্র বদলির দাবি জানান। পরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন কর্মকর্তারা।


অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) উপজেলার অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী তাছিন তালহা প্রতিদিনের মতো স্কুলে যায়। ওই দিন প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ক্লাসে গিয়ে ক্লাস টেস্ট অনুশীলনের অংশ হিসাবে সবাইকে ‘আমাদের ছোট নদী’ ছড়া লিখতে দেন। ছড়া লেখায় ছাত্র তালহা বেশ কয়েকটি বর্ণ ছোট বড় করে লিখে শিক্ষককে জমা দেন।


আরও পড়ুন: রাজশাহীতে কোচিং সেন্টারে যৌথ বাহিনীর অভিযান, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরঞ্জাম উদ্ধার


কিছু লেখা ছোট বড় এবং ক্লাসে বিশৃঙ্খলা করায় তাকে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। এ সময় ছাত্রটির পিঠ এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর জখম হয়। পরে সমাবেশ চলাকালীন লাইন বাঁকা হওয়াই আবারও তালহাসহ আরও বেশ কিছু শিক্ষার্থীর হাতে কঞ্চি দিয়ে মারেন ওই প্রধান শিক্ষক। বিষয়টি সে বাড়িতে এসে মাকে জানালে তার মা মারধরের কারণ জানতে স্কুলের ওই শিক্ষকের কাছে যান। এ সময় গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে তাকে ও তার ছেলেকে ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা দিয়ে গালাগাল করেন ওই শিক্ষক।


এর পর থেকে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা। ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে তিনি শিশু ছাত্রকে ‘চাঁদাবাজ’ বানানোর চেষ্টা করছেন বলে স্থানীয়রা জানান।


শিশুটির মা তাসলিমা আকতার শাপলা বলেন, আমার ছেলে ওই দিন দুপুরে বাড়িতে এসে কান্না করতে করতে আমাকে মারধরের বিষয়টি জানায়। পরে আমি ওই শিক্ষকের কাছে মারধরের কারণ জানতে গেলে তিনি আমাকে বলেন, আপনার ছেলে আমার কাছে এক মাস আগে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। তার ওপর লেখা পড়া খারাপ করেছে বলে, আমাকে ও আমার ছেলেকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে গালাগাল করেছে। দ্বিতীয় শ্রেণির একজন ছাত্র কীভাবে চাঁদা চাইতে পারে? ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে আমার ছেলের বিরুদ্ধে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ওই শিক্ষক। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।


স্থানীয় বাসিন্দা মনজুর ইসলাম কবির বলেন, প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম সবসময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। সামান্য ভুলেও বাচ্চাদের পেটান, সমাবেশে লাইন বাঁকা হলেও ছাড় দেন না। এমনকি প্রশংসাপত্র দিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে টাকা নেন। তার এই আচরণে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। দ্বিতীয় শ্রেণির শিশু চাঁদা চাইবে এটা অবিশ্বাস্য।


আরও পড়ুন: যমুনার পানি বিপৎসীমা অতিক্রমের হুমকিতে


সেবা আক্তার নামের এক অভিভাবক বলেন, ওই প্রধান শিক্ষক কোমলমতি শিশুদের সাথে প্রায় সময় খারাপ আচরণ করেন। সে ছোট খাটো ব্যাপারে শিশু শিক্ষার্থীদের গাল মন্দ করে মারধর করেন। তাকে আমরা এই স্কুলে দেখতে চাইনা।


অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, মাস খানেক আগে ওই ছাত্র আমার কাছে এসে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দাবি করেছিল। সেদিন ক্লাসে হট্টোগোল করায় ক্লাস নিয়ন্ত্রণ করতে মেরেছি। এটা আমার ঠিক হয়নি। প্রশংসাপত্র কম্পিউটার থেকে তৈরি করতে খরচ হয়। তাই অল্প পরিমাণে আদায় করি। কিন্তু এর কোন রশিদ দেওয়া হয় না। তবে সবার কাছে নেই না।


দ্বিতীয় শ্রেণির শিশু চাঁদা চেয়েছে– বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ। সে ৫০ হাজার টাকা চেয়েছে।’


এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আমরা অবগত হয়েছি। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট শিক্ষার্থীর অভিভাবক একটি অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।


উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলম বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় ছাত্রটির মা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনায় আগামীকাল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


এমএল/