কাপাসিয়ার কমিউনিটি ক্লিনিকে নেই ওষুধ, ভোগান্তিতে প্রান্তিক মানুষ


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:২৭ পিএম, ২৩শে আগস্ট ২০২৫


কাপাসিয়ার কমিউনিটি ক্লিনিকে নেই ওষুধ, ভোগান্তিতে প্রান্তিক মানুষ
ছবি: প্রতিনিধি

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ওষুধ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। রোগীদের উপস্থিতি থাকলেও প্রয়োজনীয় ওষুধের অভাবে সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে, ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠী। এ মাসেই ওষুধ সরবরাহের আশ্বাস স্বাস্থ্য কর্মকর্তার।


প্রায় দুই দশক আগে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এসব ক্লিনিক চালু করা হলেও নানা সমস্যায় জর্জরিত রয়েছে সেগুলো।


কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট ৫৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।


রায়েদ ইউনিয়নের বড়হর গ্রামের হাজেরা খাতুন, মৌসুমি আক্তার, আমেনা, খাদিজা জানান, আমরা ক্লিনিকে ওষুধের জন্য এসেছিলাম, ওষুধ নেই, তাই চলে যাচ্ছি। 


তরগাঁও ইউনিয়নের নবিপুর গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন (৫০) জানান, আমরা গরিব মানুষ বাজারে ওষুধের দাম বেশি এ জন্য ক্লিনিকে মাত্র ২ টাকায় ওষুধ নেয়। সব সময় ক্লিনিক থেকে আমার পরিবারের সবাই ওষুধ আনতাম। এখন সবার কমবেশি জ্বর ঠান্ডা হচ্ছে। ওষুধ আনতে গিয়ে দেখি নেই। 


লতাপাতা গ্রামের জহুরা খাতুন জানান, এসেছিলাম জ্বরের ওষুধ নিতে, ফিরে যাচ্ছি, ওষুধ নেই। 


উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ডেফুলিয়া এলাকার শাহিদা আক্তার (৪০) ঠান্ডা জ্বরে ভুগছিলেন। সকালে স্থানীয় ডেফুলিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য গেলেও কাঙ্ক্ষিত ওষুধ পাননি বলে অভিযোগ করেন। 


তিনি জানান, আমরা গরিব মানুষ বাজার থেকে ওষুধ কিনতে কষ্ট হয়, তাই ক্লিনিকে আসি। আগে নিয়মিত ওষুধ নিতাম, এখন পাচ্ছি না।


রায়েদ ইউনিয়নের বড়হর ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার শরিফ জানান, প্রয়োজনীয় ওষুধ তিন মাস ধরে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সাধারণ মানুষের ওষুধ কেনার সামর্থ্য না থাকায় ক্লিনিকে আসেন। এখন ওষুধ নেই, এজন্য খালি হাতে ফিরতে হয় মানুষের। আমরা রোগীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রেফার করি। ওষুধও নেই। রোগীরা এসে গালমন্দ করেন, বিষয়টি খারাপ লাগে।


আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় যুবদল নেতাকে জবাই করে হত্যা


বীর উজলী এলাকার আসমা বেগম, নূরহাজান, ইয়াসমিন, শামিমা আক্তার,  তারা জানান, প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্য নেই বলে একমাত্র ভরসা বাড়ির পাশের কমিউনিটি ক্লিনিক। কিন্তু সেখানে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। 


কাপাসিয়া সদর ইউনিয়নের পাবুর গ্রামের আয়েশা খাতুন, সুফিয়া বেগম, ফাতেমা, আলেয়া আক্তার জানান, আমাদের আর্থিক সংকটের কারণে ক্লিনিক থেকে সবসময় ওষুধ নিয়ে থাকি। কিছুদিন ধরে এলাকায় জ্বর ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় ওষুধ নিতে এসে দেখি ওষুধ নেই। 


তরগাঁও ইউনিয়নের লাহুরি কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মো. সজিব সিকদার জানান, সর্বশেষ এ বছরের এপ্রিল মাসে ক্লিনিকের জন্য ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছিল। এরপর থেকে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। রোগী আসলে তাদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রেফার করে দেয়। 


বীর উজলী কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার শিউলী আক্তার বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর সময় ৩২ প্রকার ওষুধ সরবরাহ করা হলেও পরে তা কমে আসে। সর্বশেষ এপ্রিল মাসে ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছিল, কিন্তু গত ৩ মাস ধরে নতুন করে কোনো ওষুধ আসেনি। আগের যে ওষুধ ছিল তা শেষ হয়ে গেছে। এখন মানুষ এসে খালি হাতে চলে যেতে হচ্ছে।


তরুল কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার আশরাফ জানান, অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মেট্রোনিডাজল, অ্যামোক্সিসিলিন ও পেনিসিলিনসহ বেশ কয়েকটি ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে, যেগুলো প্রান্তিক মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য অত্যাবশ্যক। আমার এখানে এপ্রিল মাসে ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছিল। দেড় মাস হল ওষুধ নেই। সপ্তাহ দশদিনের ভিতরে আশা করছি ওষুধ সরবরাহ করা হবে।


টোক ইউনিয়নের ভেঙ্গুরদী কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার নাসরিন মহল জানান, এ বছরের এপ্রিল মাসে ওষুধ সরবরাহ করে সরকার এরপরে আর ওষুধ সরবরাহ নেই। প্রতিনিয়ত মানুষ আসে চিকিৎসা সেবা ওষুধ নেওয়ার জন্য।  আগের যে ওষুধ আনা ছিল তা শেষ হয়ে গেছে। রোগীদের পরামর্শ দিয়ে শান্তনা দিয়ে বিদায় দেয়। 


এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো: হাবিববুর রহমান বলেন, অফিসিয়াল সমস্যার কারণে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে গত কয়েক মাস ধরে ওষুধ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ মাসেই ওষুধ সরবরাহ করা হবে। সমস্যার সমাধান কবে হবে।

এসএ/