সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় উৎপাদনে যাবে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র: নির্মাণ কর্তৃপক্ষের দাবি


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৩৩ পিএম, ২৪শে আগস্ট ২০২৫


সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় উৎপাদনে যাবে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র: নির্মাণ কর্তৃপক্ষের দাবি
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র -ছবি: সংগৃহীত

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করেই উৎপাদনে যাবে বলে দাবি করেছে নির্মাণ কর্তৃপক্ষ।


তাদের ভাষ্য, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের চেরনোবিল দুর্ঘটনার মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা রূপপুর প্রকল্পে নেই। রাশিয়ার কারিগরি সহায়তায় নির্মিত দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই প্রকল্প বর্তমানে চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে। এখন চলছে কমিশনিং কাজ, এরপরই শুরু হবে বিদ্যুৎ উৎপাদন।


তবে সম্প্রতি নিয়োগে অনিয়ম ও অদক্ষ জনবল ব্যবহারের অভিযোগ তুলে কিছু মহল রূপপুর প্রকল্পকে চেরনোবিল দুর্ঘটনার সঙ্গে তুলনা করে প্রচার চালানোয় জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।


আরও পড়ুন: ফের লঘুচাপের আভাস, বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত


নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রচারণা ভিত্তিহীন। প্রকল্পের প্রতিটি ধাপেই আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর কাছ থেকে অনুমোদন ও লাইসেন্স নিতে হয়েছে, যেখানে কর্মকর্তাদের দক্ষতা যাচাই করা হয়। দক্ষতার শর্ত পূরণ না হলে পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়।


নিয়োগ ও অভিযোগ: সাম্প্রতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্য অনুযায়ী, রূপপুর প্রকল্পে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ ও পদোন্নতির অভিযোগ উঠেছে। যেমন—চিফ সুপারইনটেনডেন্ট পদে মুশফিকা আহমেদকে নিয়োগ দেওয়া হয়, যিনি ২০১৯ সালে ‘কেমিক্যাল অ্যান্ড রেডিওঅ্যাকটিভ ওয়েস্ট ম্যানেজার’ পদে অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিযুক্ত হন বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা রেডিয়েশন মনিটরিংয়ে কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক ছিল।


এছাড়া মেকানিক্যাল বিভাগের ঊর্ধ্বতন সহকারী ব্যবস্থাপক রবিউল আলমকেও প্রয়োজনীয় তিন বছরের অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।


এই বিষয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটম একটি চিঠিতে কিছু কর্মকর্তার অভিজ্ঞতা ঘাটতির বিষয়ে মন্তব্য করলেও, প্রকল্পের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা হয়নি বলে জানানো হয়।


প্রকল্প কর্মকর্তাদের দাবি, বাংলাদেশে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কারণে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জনবল পাওয়া ছিল চ্যালেঞ্জিং। তাছাড়া, নিয়োগপ্রাপ্ত সবাই স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং নিয়োগের সময় প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা দাখিল করেছেন। তারা রাশিয়ায় সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করে বিভিন্ন পদে নিযুক্ত হয়েছেন।


যোগ্যতা নিয়ে ব্যাখ্যা: নিয়োগ পাওয়া উপ-ব্যবস্থাপক আবু কায়সার, মেরাজ আল মামুন ও রবিউল আলম বলেন, তারা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত বিষয়ের ওপর স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারী। আবু কায়সার রূপপুর প্রকল্পে ডেপুটি হেড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং এর আগে নৌবাহিনী পরিচালিত ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডে প্রায় ৯ বছর কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে।


তাদের বক্তব্য, নিয়োগ বোর্ড তার ক্ষমতাবলে প্রযোজ্য নিয়ম অনুযায়ী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিয়োগ দিয়েছে। একটি চক্র উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভ্রান্তিকর প্রচারণার মাধ্যমে প্রকল্পকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।


প্রকল্প পরিচালকদের বক্তব্য: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের তথ্য কর্মকর্তা ও ফোকাল পয়েন্ট সৈকত আহমেদ বলেন, “৫০ বছর আগের চেরনোবিল দুর্ঘটনার সঙ্গে রূপপুর প্রকল্পের তুলনা করা একেবারেই অযৌক্তিক।”


প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ কবীর হোসেন বলেন, “রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে দক্ষ জনবল দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রকল্প পরিচালনায় কোনো অসুবিধা নেই, উদ্বেগেরও কোনো কারণ নেই।”


এসএ/