রোদ যতই তীব্র হোক, ত্বক থাকবে সুরক্ষিত!


Janobani

জনবাণী ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭:৫৮ পিএম, ২৫শে আগস্ট ২০২৫


রোদ যতই তীব্র হোক, ত্বক থাকবে সুরক্ষিত!
ছবি: সংগৃৃহীত

গ্রীষ্ম-বর্ষা পেরিয়ে শরৎকাল চলে এসেছে। রোদের তীব্রতা কিন্তু মোটেই কমছে না। আকাশ পরিষ্কার থাকলে প্রতিদিনই কড়া রোদ পড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে ছোট থেকে বড় সবার জীবনে। পরিমাণমতো রোদ ত্বকের জন্য উপকারী, কিন্তু দীর্ঘ সময় সরাসরি রোদ পড়লে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া, ঘামাচি, চুলকানিসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসব সমস্যা থেকে বাঁচতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা হতে পারে একটি কার্যকর সমাধান। 


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত দুই ধরনের অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে। ইউভি-এ ত্বকের গভীর পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে এবং এর ফলে ত্বক কুঁচকে যাওয়া, ডিএনএ-এর ক্ষতি হওয়া, বয়সের তুলনায় ত্বকে বেশি ভাঁজ পড়াসহ নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। ইউভি-বি ত্বকের উপরের দিকের স্তরগুলোতে প্রবেশ করতে পারে এবং এর ফলে ত্বক পুড়ে যাওয়া (সানবার্ন), এমনকি ত্বকের ক্যান্সার পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে। 


সানস্ক্রিন ত্বককে অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করতে ত্বকের উপরিভাগে একটি সুরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে এবং এই স্তরের সাহায্যে ত্বকে অতিবেগুনি রশ্মির প্রবেশ রোধ করে। বাজারে দুই ধরনের সানস্ক্রিন প্রচলিত রয়েছে- ফিজিক্যাল এবং কেমিক্যাল সানস্ক্রিন। ফিজিক্যাল সানস্ক্রিনে জিংক অক্সাইড বা টাইটেনিয়াম অক্সাইড থাকে এবং এটি মূলত সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিকে প্রতিফলিত করে ত্বকের গভীরে প্রবেশে বাধা দেয়। কেমিক্যাল সানস্ক্রিনে অক্সিবেনজোন বা অক্টোক্রাইনের মতো উপাদানগুলো অতিবেগুনি রশ্মিকে তাপে রূপান্তরিত করে ত্বকের বাইরে রাখে। 


আরও পড়ুন: রাতের খাবারের পর হাঁটার ৬ উপকারিতা জানলে অবাক হবেন!


বাংলাদেশের মতো ক্রান্তীয় অঞ্চলগুলোতে সূর্যের আলো সারা বছর তুলনামূলক সরাসরি পড়ায় এই অঞ্চলের সূর্যের আলোতে অতিবেগুনি রশ্মির পরিমাণ অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি থাকে। এছাড়া বাংলাদেশে প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বাইরে সূর্যের আলো থাকে। ফলে নিয়মিত বাইরে চলাচল করা হয় এমন সবার ত্বকের নানান সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। 


এছাড়া বাংলাদেশের আবহাওয়াতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে পানিশূন্যতা এবং রোদের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণ, ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে চুলকানি, অতিরিক্ত ঘাম, ইত্যাদি নানা সমস্যা দেখা যায়। 


বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, কোনো ধরনের সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা ছাড়া যারা দীর্ঘদিন দিনের একটা বড় সময় সরাসরি রোদের মধ্যে থাকেন তাদের ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি। এছাড়া বাংলাদেশের মানুষের ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে মেলানিনের পরিমাণ বেশি। ত্বকে অতিরিক্ত অতিবেগুনি রশ্মি প্রবেশ করলে ত্বকের প্রাকৃতিক মেলানিন উৎপাদন বেড়ে যায়। যার ফলে ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়া, অসামঞ্জস্যপূর্ণ ত্বকের রং এবং মেলাসমা নামের রোগের সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। 


সানস্ক্রিন এসব সমস্যা থেকে অনেকাংশেই সুরক্ষা দিতে পারে। তবে সানস্ক্রিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো মেনে চলা জরুরি-


পরিমাণমতো সানস্ক্রিন ব্যবহার করা। বেশিরভাগ মানুষ সাধারণত প্রয়জনীয় পরিমাণের চেয়ে কম সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে একটি প্রচলিত মাপ হলো মুখ এবং কাঁধের জন্য অন্তত এক চা চামচ পরিমাণ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা।

ঘাম, পানি, কিংবা হাতের ঘষা লেগে সানস্ক্রিন উঠে যেতে পারে। এজন্য টানা রোদে থাকলে অন্তত দুই ঘণ্টা পরপর সানস্ক্রিন ব্যবহার করা।


আরও পড়ুন: মাছের রাজা ইলিশের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ জেনে নিন


“ব্রড স্প্রেকট্রাম” সানস্ক্রিন ব্যবহার করা। এই ধরনের সানস্ক্রিন ইউভি-এ এবং ইউভি-বি দুই ধরনের অতিবেগুনি রশ্মি থেকেই সুরক্ষা দেয়।


কেমিক্যাল সানস্ক্রিন শরীরে ব্যবহারের পর কার্যকর হতে প্রায় ১৫ মিনিট সময় নেয়। কাজেই সেটি মাথায় রেখে সময়মতো সানস্ক্রিন ব্যবহার করা।


সঠিক “এস পি এফ”-এর সানস্ক্রিন ব্যবহার করা। এস পি এফ বা সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর হলো সূর্যরশ্মির কতটুকু অতিবেগুনি রশ্মির প্রবেশ একটি নির্দিষ্ট সানস্ক্রিন ঠেকাতে পারে তার পরিমাণ। এসপিএফ ৩০ সানস্ক্রিন প্রায় শতকরা ৯৭ ভাগ ক্ষতিকর রশ্মিকে প্রতিহত করে, এসপিএফ ৫০ সানস্ক্রিন করে ৯৯% পর্যন্ত। 


বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে সূর্যের আলোর মাধ্যমে ত্বকে ক্ষতিকর প্রভাব পড়া সম্পর্কে গুরুত্ব না দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তবে ত্বকের ওপর রোদের ক্ষতিকর প্রভাবগুলোর বেশিরভাগই দীর্ঘমেয়াদী। তাই নিয়মিত যত্ন এবং কিছু নিয়ম মেনে না চললে আকস্মিকভাবেই নানা ধরনের জটিলতায় পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। নিয়মিত মানসম্মত সানস্ক্রিন ব্যবহার এসব সমস্যা থেকে দিতে পারে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা।


এমএল/