সকালে ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হয়? ৬টি অভ্যাসেই মিলবে সমাধান
জনবাণী ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫:৩১ পিএম, ২রা সেপ্টেম্বর ২০২৫

আধুনিক জীবনের ব্যস্ততায় রাত জেগে কাজ করা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটানো যেন এক প্রকার স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কেউ গভীর রাত পর্যন্ত সিরিজ দেখে, কেউবা অফিসের কাজ সারেন নির্ঘুম থেকে। ফলে সকালে ঘুম থেকে ওঠা হয়ে দাঁড়ায় একপ্রকার যুদ্ধের মতো। দিনের শুরুতেই ক্লান্তি আর অলসতায় মোড়ানো থাকে শরীর-মন।
আরও পড়ুন: প্রতিদিন সকালে কিশমিশ ভেজানো পানি খেলে যেসব উপকারিতা পাবেন
বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যাপ্ত ও গুণগত ঘুম শুধু শারীরিক সুস্থতার জন্যই নয়, বরং মানসিক স্থিতি ও কর্মক্ষমতা বাড়াতেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সঠিক ঘুম না হলে যেমন মনোযোগে ঘাটতি দেখা দেয়, তেমনই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। যারা দেরি করে ঘুমান এবং দেরি করে ওঠেন, তাদের ঘুমের চক্রও সঠিক থাকে না। এর ফলে শরীর ঠিকমতো বিশ্রাম পায় না, দিনভর থেকে যায় ক্লান্তি।
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই অনেকটা সময় কেটে যায়। সময়ও নষ্ট হয়, অথচ কাজের কাজ হয় না। তাই প্রতিদিন সকালে সহজে ওঠার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। কখন ঘুমাবেন, কখন উঠবেন, আগেই ঠিক করুন।
সময় নির্দিষ্ট করুন
আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে কাজ করে একটি জৈব ঘড়ি, যাকে বলা হয় সার্কাডিয়ান রিদম। এই চক্র শরীরকে সুনির্দিষ্ট সময়ে ঘুম ও জাগরণে সহায়তা করে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো ও জাগার অভ্যাস শরীরকে অভ্যস্ত করে তোলে এবং ঘুমের গুণগত মানও বাড়ায়। এমনকি সপ্তাহান্তেও (উইকেন্ড) এই রুটিন মেনে চললে শরীরের অভ্যন্তরীণ ছন্দ বজায় থাকে।
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত কার্টুন দেখা শিশুদের মস্তিষ্ক ও আচরণে যে সব প্রভাব ফেলে
শরীরচর্চা—ঘুমের বন্ধু
রাতের বেলায় হালকা শরীরচর্চা বা স্ট্রেচিং শরীরকে আরাম দেয় এবং ঘুম সহজ করে তোলে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঘুমাতে যাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে মাত্র ১৫ মিনিটের হালকা এক্সারসাইজও ঘুম গভীর করতে পারে। এতে করে সকালে সহজে ঘুম ভাঙে। রাতের খাবারের পর কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করলেও ঘুম ভালো হয়।
ঘুমানোর আগে ফোন নয়
বিছানায় গিয়ে মোবাইল ঘাঁটা আজকাল অনেকেরই অভ্যাস। কিন্তু মোবাইল, ল্যাপটপ কিংবা ট্যাবলেটের স্ক্রিন থেকে যে নীল আলো (blue light) নির্গত হয়, তা ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় মেলাটোনিন হরমোন উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায়। ফলে ঘুম আসে দেরিতে। এই সমস্যা এড়াতে ঘুমানোর অন্তত ৩০ মিনিট আগে সব ধরনের স্ক্রিন থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
সকালের আলো গ্রহণ
ঘুম থেকে ওঠার পর প্রাকৃতিক আলো শরীরে পড়লে কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। অন্য সময় এই হরমোন স্ট্রেস বাড়ালেও সকালে এই হরমোনের সামান্য বৃদ্ধি শরীরকে জাগিয়ে তোলে। তাই সকালে উঠেই জানালার পর্দা খুলে দিন বা বাইরে কয়েক মিনিট দাঁড়ান।
পর্যাপ্ত ঘুম
একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য প্রতিদিন সাত-আট ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন হয়। তাই হিসাব করে দেখুন এতটা সময় ঘুমানোর জন্য আপনাকে কখন বিছানায় যেতে হবে। সকালে ঘুম থেকে যখন উঠবেন তার থেকে অন্তত আট ঘণ্টা আগে ঘুমাতে যান। এতে ঘুম পর্যাপ্ত হবে এবং আপনি সঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠতেও পারবেন। তখন আপনার প্রতিদিন সমস্যায় পড়তে হবে না।
রাতে চা কিংবা কফি নয়
অনেকেই আছেন যারা রাতের বেলায়ও এক কাপ চা কিংবা কফি পান করে থাকেন। এমনটা করা যাবে না। সন্ধ্যার পর আর কোনো চা কিংবা কফি পান করবেন না। এমনকি কোনো চকোলেটও খাবেন না। কারণ তাতে ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যে কারণে সকালে ঘুম থেকে উঠতে অসুবিধা হয়। তাই খাবারের দিকে খেয়াল রাখুন। সেইসঙ্গে রাতে ভারী বা অতিরিক্ত মসলাদার খাবার খাওয়া থেকেও বিরত থাকুন।
আরও পড়ুন: যে কারণে সারাক্ষণ ক্লান্তি লাগে
সতর্কবার্তা
অনেক সময় সকালে উঠতে অসুবিধার নেপথ্যে থাকতে পারে কিছু গভীর কারণ। যদি পর্যাপ্ত ঘুমের পরও সকালে অতিরিক্ত ক্লান্তি লাগে বা মাথা ভার লাগে, তবে সেক্ষেত্রে স্লিপ অ্যাপনিয়া বা অন্য কোনো গুরুতর নিদ্রাজনিত সমস্যা থাকতে পারে। সে জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সবশেষে বলতে গেলে ঘুম কোনো বিলাসিতা নয়, বরং সুস্থ জীবনযাপনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিদিনের এই ছোট ছোট অভ্যাসের পরিবর্তনই পারে আপনার সকালকে প্রাণবন্ত করে তুলতে। তাই রাত জাগা নয়, নিয়মিত ঘুম আর সুস্থ রুটিনেই হোক আপনার কর্মক্ষম সকাল।
সূত্র : স্লিপ ফাউন্ডেশন
এসডি/