এআইইউবির ক্যানভাসে রঙিন হয়ে ফুটে উঠল সময়ের নিরবধি গল্প
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪:৪১ পিএম, ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রিয়ন্ত মজুমদার, এআইইউবি: শিল্প হলো অন্তহীন সময়ের সাক্ষর, আর ক্যানভাস তারই নীরব ডায়েরি। সেই ডায়েরির পাতা থেকে জীবন্ত হয়ে উঠেছে নানা গল্প, আবেগ আর স্বপ্নের মহড়া। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি)-এর আর্টস ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে "চিত্রে চিরন্তন" শিল্প প্রদর্শনী, যা ক্যাম্পাসকে করে তুলেছে এক মোহনীয় শিল্পভুবন।
৩১ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা এই প্রদর্শনীতে ডি ভবনের ভূমিতল যেন পরিণত হয়েছে এক কল্পনাঘরে। প্রতিটি ক্যানভাসে শিক্ষার্থীরা এঁকেছে তাদের অন্তর্জগতের কথা, প্রকৃতির নির্মলতা, সমাজের বিচিত্র ছাপ, সময়ের গতিধারা আর জীবনের গহীন থেকে উঠে আসা একেকটি অনুভূতির রূপকার।
আর্টস ক্লাবের সভাপতি কিংশুক বিশ্বাসের কথায় শিল্পের তাৎপর্য ফুটে উঠেছে আরও গভীরভাবে, "এটি কেবল রং আর রেখার খেলা নয়; এটি হৃদয়ের স্পর্শ, যা অমর হয়ে থাকে। আমাদের শিক্ষার্থীরা যে সৃষ্টিশীলতা দেখিয়েছে, তা শিল্পকে ধারণ করার পাশাপাশি একে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। আমাদের ক্লাবের মেন্টর নিয়াজ মজুমদার স্যার আমাদের আয়োজন সফল করার জন্য ও আর্টিস্টদের সুপ্ত প্রতিভা জাগিয়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করেছেন।"
তরুণ শিল্পী সাবিহা ভূঁইয়া প্রমি তাঁর অনুভূতি জানান এভাবে, "শিল্প আমার কাছে মুক্তির ভাষা। এই প্রদর্শনী আমাকে শিখিয়েছে, আমরা শুধু আঁকি না, আমরা সময়কে থামিয়ে দিই, অনুভূতিকে করে তুলি চিরন্তন।"
প্রদর্শনী ঘুরে দেখা দর্শনার্থীরাও মুগ্ধ। শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিল্পপ্রেমীরা প্রতিটি ছবির সামনে দাঁড়িয়ে উপলদ্ধি করছেন শিল্পের গভীরতা। অনেকের মতে, এখানকার কাজের সৃজনশীলতা ও গাম্ভীর্য পেশাদার শিল্পকর্মের সমকক্ষ।
এবারের প্রদর্শনীর বিশেষ আকর্ষণ ছিল বাংলার চিরচেনা বায়োস্কোপ। "তোমার বাড়ির রংয়ের মেলায় দেখেছিলাম বায়োস্কোপ" গানটি বাজতে থাকায় দর্শনার্থীরা মুহূর্তেই ফিরে গেছেন বাংলার সোনালি ঐতিহ্যে, লোকশিল্পের সরলতায় আর গ্রামীণ জীবনের উল্লাসে।
গত বৃহস্পতিবার প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এআইইউবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নাদিয়া আনোয়ার। তিনি তরুণ শিল্পীদের উদ্দেশ্যে বলেন, "শিল্প ও সংস্কৃতির মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীরা যে সৃষ্টিশীলতা দেখাচ্ছে, তা ভবিষ্যতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে আরও সমৃদ্ধ করবে। এই উদ্যোগ প্রমাণ করে, শিক্ষা শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং এর বিস্তৃতি শিল্পের অসীম সম্ভাবনায়।"
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ড. হাসানুল এ হাসান, ড. কারমেন জি. লামাগনা, রেজিস্টার অবসরপ্রাপ্ত গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাহিদুল ইসলাম খান, প্রক্টর মনজুর, ক্লাবের মেন্টর নিয়াজ মজুমদার সহ প্রমুখ।
১১ সেপ্টেম্বর প্রদর্শনীর শেষ দিনে সেরা শিল্পকর্মগুলোর জন্য পুরস্কার বিতরণ ও একটি আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। আয়োজকরে আশা, এই উদ্যোগ শিল্পচর্চাকে আরও জনপ্রিয় করে তুলবে এবং তরুণ প্রজন্মের মাঝে জাগাবে সৃজনশীলতার নতুন অধ্যায়।
সবার জন্য উন্মুক্ত এই প্রদর্শনী নিঃসন্দেহে শিল্পপ্রেমী ও সাধারণ দর্শকদের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে, যা এআইইউবির সাংস্কৃতিক ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রচনা করবে।
আরএক্স/