নড়াইলে বিএনপির দু’গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী, উত্তেজনা চরমে
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে নড়াইল জেলা বিএনপির দুইগ্রুপে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আগামি ২৬ এপ্রিল নড়াইল সদর থানা ও পৌর বিএনপির ইফতার এবং সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুইগ্রুপের পক্ষ থেকে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে একই দিন ও সময়ে কর্মসূচী আহবান করা হয়েছে। ওইদিন (২৬ এপ্রিল) বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এসব কর্মসূচী বাস্তবায়নের সময় চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। ফলে দুইগ্রুপের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের আশংকা রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
পুলিশ ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, নড়াইল সদর থানা ও পৌর বিএনপির ইফতার এবং সম্মেলনের অনুমতি চেয়ে গত ১৭ এপ্রিল পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেন জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম। এদিকে, একই দিনে একই স্থানে মাহে রমজানের ফজিলত ও ইফতার মাহফিলের অনুমতি চেয়ে পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেন নড়াইল সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সৈয়দ মোরশেদ তৌহিদ সোহেল ও সদস্য সচিব খন্দকার কিয়ামুল হাসান। ফলে দুইগ্রুপের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের আশংকা রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। দুইগ্রুপের পক্ষ থেকে একই দিন ও সময়ে কর্মসূচী আহবান করায় আইন-শৃঙ্খলা অবনতির আশংকায় পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপির কোনো গ্রুপকে এখনো পর্যন্ত অনুমতি দেয়া হয়নি বলে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, জেলা বিএনপিসহ লোহাগড়া, কালিয়া ও সদর উপজেলা এবং পৌর বিএনপির তিনটি শাখা ছাড়াও ৩৯টি ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে ২০১৮ সাল থেকে দুইগ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। পৃথক কর্মসূচী পালন করে আসছে দুইগ্রুপের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। এমনকি মেয়াদউত্তীর্ণ জেলা কমিটি বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেন একগ্রুপের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা।
জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি জুলফিকার আলী মন্ডল, সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার রিজভী জর্জ এবং গত সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসনে বিএনপি মনোনয়নপ্রাপ্ত শরীফ কাসাফুদ্দোজা কাফী একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অপরগ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম।
অপরদিকে, ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ঘোষিত জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক কমিটি মেয়াদউত্তীর্ণ হলেও নতুন করে কমিটি গঠিত না হওয়ায় যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এছাড়া ২০০৮ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে সর্বশেষ লোহাগড়া, কালিয়া ও সদর উপজেলা এবং পৌর বিএনপির তিনটি শাখা ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠিত হয়। এরপর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২০২১ সালের ১৮ মে তিনটি উপজেলা ও পৌর বিএনপিসহ সাতটি শাখার আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি, কোনো আলোচনা ও পরামর্শ ছাড়াই জেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকের সুবিধামত সাতটি শাখার আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দাবি, এই কমিটিতে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করে ‘পকেট কমিটি’ ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটি ঘোষণার পর ওই বছরের ২২ মে দুপুরে নড়াইলের কালিয়া এলাকায় জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। এদিকে, এ বছরের (২০২২) প্রথমদিকে ঘরে বসে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি ঘোষণা করা হলেও তৃণমূল নেতাকর্মীরা এটাকেও ‘পকেট কমিটি’ হিসেবে মূল্যায়ন করে তা প্রত্যাখানের জন্য মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন।
জেলা বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুশ কাশেম, লোহাগড়া উপজেলা শাখার সদস্য সচিব মফিজুর রহমান, পৌর শাখার আহবায়ক সৈয়দ আব্দুস সবুর, সদস্য সচিব শামসুল হক আজাদ, কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নায়েব আলী, দিঘলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ইউসুফ আলীসহ তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, সম্মেলন না করে অযোগ্যদের নেতৃত্বে ‘পকেট কমিটি’ ঘোঘণা করা হয়েছে। এসব কমিটি কোনো ভাবেই বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না। মেয়াদউত্তীর্ণ জেলা কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি দেয়ার আহবান জানান তারা। কারণ, জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তেমন কোনো দলীয় কর্মসূচী পালন করেন না। জেলা বিএনপির কার্যালয় খুলতে পারেন না। এ ব্যাপারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ কেন্দ্রীয় কমিটির হস্তক্ষেপ কামনা করেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বলেন, যোগ্যদের নিয়েই বিভিন্ন শাখার আহবায়ক কমিটি করা হয়েছে। আর বর্তমান পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে এবং পুলিশি বাঁধায় দলীয় অনেক কর্মসূচী করতে পারি না। তারপরও কেন্দ্র ঘোষিত অনেক কর্মসূচী আমরা পালন করছি।
এসএ/