নিউমার্কেটে সংঘর্ষ: নাহিদ-মুরসালিনের হত্যাকারী শনাক্ত


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


নিউমার্কেটে সংঘর্ষ: নাহিদ-মুরসালিনের হত্যাকারী শনাক্ত

রাজধানীর নিউমার্কেটে সংঘর্ষের সময় নাহিদ ও মুরসালিনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। এরমধ্যে নাহিদকে কুপিয়েছেন রাব্বী নামের একজন। তিনি ঢাকা কলেজের আবাসিক হলের শিক্ষার্থী। সংঘর্ষের সময় নাহিদকে দুজন ও মুরসালিনকে একজন রামদা দিয়ে কুপিয়েছেন। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।


শনিবার (২৩ এপ্রিল) এ তথ্য জানিয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।


পুলিশ জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, নিথর পড়ে থাকা একটি দেহের ওপর কোপাচ্ছে এক যুবক। হেলমেট পরা ওই যুবকই রাব্বী। সে ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত এবং নর্থ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।


তদন্তকারীরার জানান, মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত নিহত নাহিদ ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের পক্ষ হয়ে সংঘর্ষে জড়ান। একটি বড় ছাতা হাতে তাকে সংঘর্ষের একদম সামনে দেখা যায় প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে একটি ইটের আঘাতে আহত হয়ে সড়কে পড়ে যান নাহিদ। এরপর আহত নাহিদের ওপর হামলা চালায় হেলমেটধারী কিছু যুবক।


তদন্তকারীরা আরও জানায়, পরপর দুজন নাহিদকে কুপিয়েছে। দুজনের মধ্যে রাব্বীকে সবচেয়ে হিংস্র দেখা গেছে। তার আগের হামলাকারীকেও শনাক্ত করা গেছে।


নাহিদ মারা যাওয়ার পরদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান দোকানকর্মী মুরসালিন। মুরসালিনকেও কুপিয়েছে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী। তার হত্যাকারীকেও শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরকে নজরদারিতে রেখেছে তদন্তকারীরা।


ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, দুইজন নিহত হওয়ার ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়েছে। প্রাপ্ত সকল ছবি এবং ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। দোষী শনাক্তও করা হয়েছে।


সংঘর্ষে নিহত নাহিদের বাবা মো. নাদিম হোসেন ও মুরসালিনের ভাই নুর মোহাম্মদ বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় দুটি হত্যা মামলা করেন। এই চার মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে প্রায় এক হাজার ৪০০ জনকে।


উল্লেখ্য, গত সোমবার (১৮ এপ্রিল) রাতে দিকে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এসময় আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও।


পরে মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) সকালে আবারও সংঘর্ষে জড়ান শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা। মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে তারা ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। ছাত্রদের অনেকে হেলমেট পরে এবং লাঠি হাতে নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। ব্যবসায়ী-কর্মচারীরাও লাঠিসোটা ও লোহার রড নিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালানো শুরু করেন।


বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ সংঘর্ষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে গোটা নিউমার্কেট ও সায়েন্সল্যাব এলাকায়। থেমে থেমে সারাদিন চলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী এবং প্রায় অর্ধশত ব্যবসায়ী-কর্মচারী আহত হন। দুই শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। 


সংঘর্ষে গুরুতর আহত হওয়া কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেন মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাতে মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা যান এবং আহত রেডিমেট দোকানের কর্মচারী মোরসালিন (২৬) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) ভোর ৫টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মারা যান।

 ওআ/