মই লাগিয়ে পার হতে হয় ৩ কোটি টাকার ব্রীজে


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


মই লাগিয়ে পার হতে হয় ৩ কোটি টাকার ব্রীজে

বান্দরবানের লামা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকার জনসাধারণের যোগাযোগ সুবিধার কথা চিন্তা করে পোপা খালের উপর প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। গত এক বছর আগে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা গেলেও করা হয়নি সংযোগ সড়ক। তাই বাধ্য হয়েই ব্রিজের উত্তর পাশে এলাকাবাসীর উদ্যোগে স্থাপিত মই দিয়ে উঠা-নামা করেই ব্রিজ পার হতে হয়, তাও আবার শুস্ক মৌসুমে। বর্ষা মৌসুমে যখন উত্তর পাশ পানিতে ডুবে থাকে, তখন পারাপার মোটেও সম্ভব হয়না। এতে লামা সদর ও রুপসীপাড়া ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষকে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ।

জানা যায়, ২০১৯-২২ইং অর্থবছরে ‘লামা রূপসীপাড়া সড়কের অংহ্লাপাড়া হতে মেরাখোলা হয়ে ছোট বমু পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের’ পোপা খালের উপর ৬০ মিটার দীর্ঘ আর.সি.সি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। গত এক বছর আগেই ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ করে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নির্মাণের এক বছর পেরিয়ে গেলেও ব্রিজের উত্তর পাশে সংযোগ সড়ক করে দেয়া হয়নি। তাই এলাকাবাসীর কোন কাজে আসছেনা এ ব্রিজটি।

এই বিষয়ে ব্রিজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী চিংথোয়াই মার্মা বলেন, ব্রিজটির দু’পাশের এপ্রোচ সড়কের রাস্তার বরাদ্দ ছিলনা, তাই সংযোগ সড়কটি করা যায়নি।

সরেজমিন উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়ন হতে পোপা সড়ক দিয়ে পাহাড়পাড়া এলাকায় গেলেই চোখে পড়ে ব্রিজটি। পোপা খালের উপর উত্তর-দক্ষিণ মুখি নির্মিত ব্রিজটির উত্তর পার্শ্বে স্থানীয়রা হেঁটে পারাপারের জন্য ১৫-২০ ফুট গাছ দিয়ে মই নির্মাণ করে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। ঝুঁকিপূর্ণ সেই মই দিয়ে ব্রিজে উঠতে গিয়ে প্রতিনিয়ত অনেক বৃদ্ধা ও শিশুরা পড়ে আহত হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা। এ সময় মই দিয়ে ব্রিজের ওপর উঠছিলেন আনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, ’সব বয়সীরা মই বেয়ে সেতুর ওপরে উঠতে পারে না। বিশেষ করে বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুরা। আবার অনেক সময় উঠতে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটে। এই সেতু তৈরি হয়েছে প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেছে। অথচ এখন পর্যন্ত চলাচলের উপযোগী হয়ে ওঠেনি। সংযোগ সড়ক না থাকায় সহজে যাতায়াত করা যায় না। তাই ব্রিজের এক দিকে মই লাগানো হয়েছে, সেই মই ছাড়া সেতুটি অচল।’

স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল মিয়া, ও কমলা বেগম জানিয়েছেন, ’ঠিকাদারকে অনেকবার অনুরোধ করেছি ব্রিজের উত্তর পাশে মাটি ফেলতে কিন্তু, এখন পর্যন্ত মাটি ভরাট করেনি। ব্রিজটির দুপাড়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বসবাস করছে। এসব মানুষকে প্রতিদিন কত কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয়, তা কেউ না দেখলে বুঝবে না। আগে ব্রিজ ছিল না, তখনো কষ্ট হয়েছে। এখন ব্রিজ হয়েও কষ্ট হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত ব্রিজের উত্তর পাশে মাটি ফেলে সংযোগ সড়ক করা হোক।’

এ ব্রিজ দিয়ে চলাচলকারী শিক্ষার্থী রনি বলেন, এত টাকার ব্রিজ তৈরি করে যদি মই দিয়ে পারাপার হতে হয়, তাহলে ব্রিজের তো দরকার ছিল না। আমরা অনেক কষ্টে এই ব্রিজ হয়ে চলাচল করছি।

এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ইয়াছিন আরাফাত জানান, ব্রিজের সাথে এপ্রোচ সড়কের বরাদ্দ ছিলনা। জনগনের সুবিধার্তে দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এসএ/