পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএমের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ!


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএমের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ!

লালমনিরহাট কুড়িগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আদিতমারী জোনের ডিপুটি জেনারেল ম্যানেজারের (ডিজিএম) প্রকৌশলী মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ দায়ের করেছেন একজন গ্রাহক।

বুধবার(২৭ এপ্রিল) বিকেলে আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন একরামুল হক নামে একজন গ্রাহক। অভিযোগকারী গ্রাহক একরামুল হক আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের পাঠানটারী গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে। পেশায় হোটেল ব্যবসায়ী।

অভিযোগে জানা গেছে,  হোটেল ব্যবসায়ী একরামুল হক তার দোকানে পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে হোটেল ব্যবসা করছেন। যার মিটার নং ২২৪৭৪০৮৯। এ মিটারের সকল বিল পরিশোধ রয়েছে। কিন্তু তার বাবা মৃত মজিবর রহমানের নামে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১৬২৩০২ নং মিটারে সেচ পাম্প রয়েছে। যা একরামুলের বড় ভাই আশরাফুল পরিচালনা করছেন। এ মিটারে তাদের বাবা নামিয় মিটারে ১০ হাজার ৯৯৮ টাকা বকেয়া ছিল। মৃত ব্যাক্তির নামের এ বকেয়া বিলের ঝামেলা মিটাতে একরামুলকে ডেকে নেন আদিতমারী জোনাল অফিসের ডিজিএম প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল।

একটি দরখাস্থ দিলে মৃত ব্যাক্তির নামের বকেয়া বিলটি মওকুফ করা হবে এমন প্রতিশ্রতি দিয়ে একরামুলের কাছে ৮ হাজার টাকা দাবি করেন ডিজিএম মোস্তফা কামাল। ঝামেলা এড়াতে ডিজিএমের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গত সোমবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে চাহিদামত ডিজিএমকে ৮ হাজার টাকা বুঝে দেন ব্যবসায়ী একরামুল হক।

ওই দিন সকালে ব্যবসায়ী একরামুল হককে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মিটার নং ২২৪৭০৮৯ নম্বরের এপ্রিল মাসের ৪হাজার ২৫৪ টাকার বিলের কাগজ পাঠানো হয়। একই দিন বিকেলে একই মিটারে একই মাসের আবারও একটি বিল পাঠান কৌশলী ডিজিএম মোস্তফা কামাল। যেখানে তার মৃত বাবার সেচ পাম্পের বকেয়া বিল ১০ হাজার ৯৯৮ টাকা সংযুক্ত করে মোট ১৫ হাজার ২৫২ টাকা উল্লেখ করা হয়।

একই মিটারে একই মাসে দুইটি পৃথক বিলের কাগজ হাতে পেয়ে বিস্মিত হয়ে ডিজিএমের কার্যালয়ে ছুটে যান ব্যবসায়ী একরামুল হক। একই মাসে পৃথক দুইটি বিলের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইলে বিতর্ক সৃষ্ঠি হয়। মৃত ব্যাক্তির নামিয় মিটারের বকেয়া বিলের ঝামেলা মিটানোর নামে ঘুষের ৮ হাজার টাকা ফেরত দাবি করেন গ্রাহক একরামুল হক। এ সময় তাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে গলাধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে তাকে বের করে দেন ডিজিএম।

এ ঘটনায় বিচার চেয়ে গ্রাহক একরামুল হক বাদি হয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আদিতমারী জোনের ডিজিএম মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ খবর পেয়ে ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেন ডিজিএম। এতে ব্যর্থ হয়ে ডিজিএম মোস্তফা কামাল বাদি হয়ে আদিতমারী থানায় উল্টো গ্রাহক একরামুল হক ও অজ্ঞাত ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে সরকারী কাজে বাঁধা দানের অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগকারী গ্রাহক একরামুল হক বলেন, আবেদন দিলে মৃত ব্যাক্তির বকেয়া মওকুফ করা হবে এমন প্রতিশ্রুতিতে আমার কাছে দাবি করে নিজ অফিসে ৮ হাজার টাকা ঘুষ নেন ডিজিএম। কিন্তু টাকা নেয়ার পরে মওকুফ না করে উল্টো মৃত বাবার মিটারের বকেয়া বিল আমার নামিয় মিটার বিলে যুক্ত করেন। এভাবে এপ্রিল মাসে পৃথক দুইটি বিল দাখিল করা হয়। এর প্রতিবাদ করে ঘুষের টাকা ফেরৎ চাইলে ডিজিএম আমাকে গালিগালাজ করে গলা ধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেন। বারাবারি করলে সরকারী কাজে বাঁধাদানের দায়ে আমার নামে মামলা দেয়ার হুমকী দেন ডিজিএম।

গ্রাহক ও ডিজিএমের পাল্টা পাল্টি অভিয়োগ নিয়ে আদিতমারীতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এতে ফুষে উঠছেন সাধারন গ্রাহকরা। বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে মাঠে নেমে পড়েছেন একটি গোয়েন্দা সংস্থা। সংস্থাটির দাবি, ডিজিএম মোস্তফা কামাল যোগদানের পর থেকে এ জোনাল অফিসটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে। নানান অজুহাতে গ্রাহক হয়রানী ও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠে ডিজিএমের বিরুদ্ধে। যা তদন্ত তারা জোরালো ভাবে কাজ করছেন বলেও দাবি করেন সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আদিতমারী জোনাল অফিসের ডিপুটি ম্যানেজার(ডিজিএম) মোস্তফা কামালকে একাধিকবার ফোন করেও তিনি রিসিভ করেন নি।

আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোক্তারুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ অফিসের বিষয়টি নিয়ে পাল্টা পাল্টি অভিযোগ পেয়েছি। দু'টাই গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এসএ/