মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই ভূমিহীন ভবেনের পরিবারের


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই ভূমিহীন ভবেনের পরিবারের

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ঘোগারকুটি গ্রামে গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে পরের জমিতে বসবাস করছেন ভবেন চন্দ্র রবিদাস। তিনি ওই এলাকার মৃত জানোয়ারি রবিদাসের ছেলে। স্ত্রী ২ মেয়ে ও ২ ছেলে সহ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৬ জন। পরিবারের চাহিদা মেটাতে ভবেন চন্দ্র বাড়ির পাশে বড়ভিটা বাজারে জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন। যা আয় রোজগার করেন তা দিয়ে কোন মতে দিন কেটে যায়। গত কয়েক বছর আগে ঘুম হারাম হয়ে যায় ভবেন চন্দ্র ও তার স্ত্রীর। ঘরে বিবাহযোগ্য মেয়ে থাকায় চরম দুঃশ্চিন্তা গ্রাস করে তাদের। পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই মেয়ে পাত্রস্থ করতে সক্ষম হন। এ যাত্রার রক্ষা পেলেও অভাবের কষাঘাত থেকে মুক্তি পাননি ভবেন। তার একার আয়ে পরিবারের খরচ জোগানোর পাশাপাশি জোগাতে হয় তিন ছেলে মেয়ের লেখা পড়ার খরচ। তবুও স্বামী ও স্ত্রী মিলে স্বপ্ন দেখেন ছেলে ও মেয়েদের লেখা পড়া চালিয়ে যেতে পারলে তারাই একটা সময় সব কস্টের অবসান ঘটাবে। কিন্তু তাদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছে আশ্রয় দাতা জমির মালিক জমিটি খালি করতে বলায়। স্ত্রী ও শিশু সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাবেন? দিনরাত এ ভাবনাই তাড়া করছে ভবেন ও তার স্ত্রীকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওই এলাকার আব্দুস ছামাদের ফসলি জমির এককোণে আনুমানিক ২ শতাংশ জমিতে একটি বসতঘর ও জরাজীর্ণ রান্নাঘর মিলে ভবেন চন্দ্রের বাড়ি। সেখানেই দেখা মিললো ভবেন চন্দ্র তার স্ত্রী ও স্কুল পড়ুয়া দুই শিশু সন্তানের। কেমন আছেন জানতে চাইতেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন ভবেন। বাবার কান্না দেখে ফুফিয়ে কাঁদতে লাগলো শিশু সন্তানেরা, সাথে তার স্ত্রী। ভবেন কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আমি বাজারে জুতা সেলাইয়ের কাজ করে সংসারের খরচ জোগাড় করি। যা রোজগার করি তাতে সংসারের খরচ ঠিক মত জোটে না। বউ বাচ্চাকে ঠিকমতো খাওয়াতে পড়াতে পারি না। তার উপর জমির মালিক বারবার বাড়ি সরিয়ে নিতে বলছে। এলাকার মুরব্বিদের সাথে নিয়ে এখানে বসবাসের জন্য ওনার কাছে কিছুদিন সময় নিয়েছি। কিন্তু এরপরে মাসুম বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় যাব? আমার তো কোন জমিজমা নাই। শুনছি ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য শেখ হাসিনা জমি ও ঘর দিচ্ছে। আমিও তো ভূমিহীন। শেখ হাসিনার দেয়া ভূমিহীন ও গৃহহীন প্রকল্পের সুবিধা যদি পেতাম তাহলে বউ বাচ্চা নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হতো। 

তার স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী জুতা সেলাইয়ের কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজ করতে পারে না। কিছুদিন থেকে তার আয় রোজগার একে বারে নেই বললেই চলে। আমরা জমি কিনে বাড়ি করা তো দূরের কথা বাচ্চাদের দু'বেলা পেট ভরে খাবার দিতে পারি না। কতদিন হতে যে বাচ্চাদের পাতে এক টুকরো মাছ দিতে পারি না বলেই মুখে শাড়ির আঁচল গুঁজে অঝোরে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বাচ্চা দু'টোকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির ভেতর চলে যান।

ভবেনের প্রতিবেশী অবঃপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মোতালেব খন্দকার বলেন, ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ভবেন এখানে অন্যের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছে। জমির মালিক বেশ কিছুদিন যাবত জমি খালি করে দিতে বলছে। আমরা গ্রামবাসীরা মিলে ওনার কাছে কিছুদিনের সময় নিয়েছিলাম। কিন্তু ভবেন অন্য কোথাও ঘর তোলার এখনো কোন ব্যবস্থা করতে পারে নাই। তাছাড়া তার যা আয় রোজগার তা দিয়ে সে জমি কিনে বাড়ি করতে পারবেও না। ভবেনের পরিবারের মাথা গোঁজার জন্য সরকারি সহায়তার জমি ও ঘর ছাড়া আর কোন বিকল্প নাই।

সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য জান্নাতি খাতুন আলো ও ইউপি সদস্য মাসুদ রানা সবুজ ভবেন চন্দ্রের মানবেতর জীবনযাপনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ভবেন চন্দ্র অত্র অঞ্চলের একজন ভূমিহীন অসহায় মানুষ। আমরা নির্বাচিত হওয়ায় পর থেকেই সরকারি সহায়তা প্রদানে ওনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছি। 

বর্তমানে ভবেন যার জায়গায় আছেন তিনি জমি খালি করে দিতে বলেছেন আমরা শুনেছি। এনার আবাসন সমস্যার সমাধান করা বর্তমানে জরুরি। যা কেবল মাত্র চলমান আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমেই করা সম্ভব।

এসএ/