খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতুতে তুলে নদীতে ফেলে দেওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতুতে তুলে নদীতে ফেলে দেওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতুতে নিয়ে সেখান থেকে নদীতে ফেলে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া ও ড. ইউনুসের তীব্র সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। 

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মাসেতু বানানো হচ্ছে, ওখানে চড়া যাবে না, ওটা ভেঙে পড়বে। তার সঙ্গে তাদের দোসররাও পদ্মা সেতুর সমালোচনা করেছে। তাদেরকে এখন পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওপরে উঠিয়ে সেখান থেকে পদ্মা নদীতে ফেলা দেয়া উচিৎ। আর  ড. ইউনুসের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যিনি এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করেছেন তাকে পদ্মা নদীতে চুবানো উচিত। যেন মরে না যায়। পদ্মা নদীতে চুবনি দিয়ে পদ্মাসেতুতে তুলে দেয়া উচিৎ।’ 

এ সময় বিভিন্ন মেগা প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

বুধবার (১৮ মে) রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির নির্বাচন নিয়ে কথা বলার কোনো অধিকার নেই। কারণ, তারা তাদের মেয়াদে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কলুষিত করেছে।

তিনি বলেন, ‘আজকে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে কিন্তু তাদের নির্বাচনের ইতিহাস এতটা কলুষিত যে তাদের এই নিয়ে কথা বলার কোন অধিকারই নাই। কোন মুখে তারা বলে।’

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার দেশে ফেরা এবং ওয়ান-ইলেভেনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাকে গ্রেফতারসহ তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে ২৫ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ করা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়া, এটা একটা বড় সিগনাল ছিল তাদের কাছে। এদিকে আন্তর্জাতিকভাবে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার তখন একটা নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়ে। কারণ দেশ চালানো এত সহজ না। দুটি বছর ধরে সমস্ত জায়াগায় তারা সেনা মোতায়েন করে রেখে দেশ চালাচ্ছে, কত দিন রাখতে পারে? যেটা হবার, সেই একটা বিশৃঙ্খলা সব জায়গায়। ওই অবস্থায় তারা মুক্তি দিল আমাকে এবং নির্বাচন দিল আর সেই নির্বাচনেই কিন্তু আওয়ামী লীগ জয় লাভ করলো।’

দেশে ফিরতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাধা দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেদিন যদি জোর করে ফিরে না আসতাম আর জেল না খাটতাম, তা না হলে হয়তো বাংলাদেশের জনগণের এত ভোট পেতাম না। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে কিন্তু আজকে তিন টার্ম তিন বার পর পর সরকারে আছি। এখন এত কথা এই জন্য বললাম যে, ইতিহাসটা মানুষ তো ভুলে যায়, আমিই তো অনেক কথা ভুলে যাচ্ছি। আজকে ৪১ বছর, ৪১ বছরের চড়াই উতরাই পার হয়েই কিন্তু এখানে আসতে হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সময় যদি ক্ষমতায় থাকতে না পারি তাহলে দেশের উন্নতিটা দৃশ্যমান হয় না, উন্নতি করাও যায় না। কারণ ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত যে কাজগুলি করেছিলাম, তা তো অধিকাংশ খালেদা জিয়া এসে নস্ট করে দিল। কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ, কেন? যারা কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা পাচ্ছে, তারা নৌকায় ভোট দেবে। ধানের শীষে ভোট দেবে না, এটা ছিল খালেদা জিয়ার যুক্তি। এভাবে যতগুলি কাজ আমরা হাতে নেই, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির নির্মাণকাজ শুরু করে দিয়েছিলাম, সেখানে কমিশন খেতে যেয়ে সেই বিদ্যুৎ উৎপাদনও প্রায় ব্যাহত। সর্ব প্রথম বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আমরা উন্মুক্ত করে দিই। বিদেশি বিনিয়োগ, আমেরিকার বিনিয়োগ প্রথম বাংলাদেশে আসে ইউএস একটা কোম্পানি দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র তারা বেসরকারি খাতে নির্মাণকাজ শুরু করে। সেই থেকে আমরা বেসরকারি খাতে সব কিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতায় আসতে দেয়নি ৭ বছর, ৮ বছর পর যখন আবার আসি আবার সেই কাজগুলি শুরু করি। আমরা ২০০৯ এর পর যে সরকার গঠন করেছি, তার পরেও আমাদের কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি। অগ্নি সন্ত্রাস করে বিএনপি মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মারে, পেট্রোল বোমা মারে। দেশকে তারা বার বার ধ্বংসের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং সরকার উৎখাত করার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত, তাদের ডাকে তো জনগণ সাড়া দেয়নি। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়া ২০০৭-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছে, সে জীবনে কোনো দিন রাজনীতি করবে না। এই মুচলেকা দিয়েই কিন্তু দেশ ছেড়ে চলে যায়। এই মামলায় বিচারের রায়ে সে সাজাপ্রাপ্ত। এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে এখন বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছি, অসুস্থ সেই জন্য। এটুকু মানবিকতা দেখিয়েছি, যে আমাকে হতার চেষ্টা করেছে বার বার তাকেই আমি এই করুণা ভিক্ষা দিয়েছি যে, সে এখন বাসায় থাকতে পারে। সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাকে সুযোগ আমরা দিয়েছি, নির্বাহী আদেশেই দেওয়া হয়েছে।’

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির বক্তব্য প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার একটা প্রশ্ন, আজকে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে, বিএনপির আমলের নির্বাচনের ইতিহাস এতই কলুষিত যে, তাদের এ নিয়ে কথা বলার তো কোনো অধিকারই নাই, কোন মুখে তারা বলে? প্রত্যেকটা সময়ই তো আমরা দেখেছি তাদের ইলেকশন। সেই ’৭৭ এর হ্যাঁ-না রাষ্ট্রপতি, ’৭৯ এর সাধারণ নির্বাচন, ’৮১ এর নির্বাচন প্রত্যেকটি নির্বাচনই তো আমাদের দেখা। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন। তো যাদের নির্বাচনের এত কলুষিত রেকর্ড তাদের মুখে এখন নির্বাচনের প্রশ্ন। আজকে নির্বাচনে যতটুকু উন্নতি আমরা করেছি সবগুলি আমাদেরই সিদ্ধান্ত, আমাদেরই চিন্তা। এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অর্থই হয় না। কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত, জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সত্য। গণতান্ত্রিক অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় শক্তি। আর সেই শক্তিটা আছে বলেই এবং জনগণের শক্তিতে আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই এখানে কাজ করতে পেরেছি। আজকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ বাংলাদেশ পৃথিবীতে উন্নয়নের রোল মডেল।’

আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভায় শেষে বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়।

ওআ/